শেষের পাতা

একটি মর্মান্তিক মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

জন্ম নিবন্ধনের তারিখ অনুযায়ী বয়স দু‘বছর বেশি ছিল। তাই জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিল না দুর্জয় দাশ (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী। সেটা সংশোধন করতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ছুটেছে এই কিশোর। সফল হয়নি। পারেনি রেজিস্ট্রেশন করতে। একপর্যায়ে  হতাশ হয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করেছে দুর্জয় দাশ। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কৈনপুরা জলদাশ পাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দুর্জয় দাশের মরদেহ উদ্ধার করে। দুর্জয় দাশ আনোয়ারা উপজেলার কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। মৃত দুর্জয়ের বাবা মিলন দাশের ভাষ্য, এটি আত্নহত্যা নয়, রীতিমতো হত্যাকান্ড। গত কয়েকদিন ধরে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে দুর্জয় দাশ আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত), কৈনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক ও চাতরী ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছে। কিন্তু তার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন হয়নি, কেন? এ কথা বলে বুক চাপরিয়ে কান্না করতে থাকে মিলন দাশ। মিলন দাশের এ প্রশ্নের উত্তর কে দিবে। এর উত্তর জানা নেই বললেন আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা খুবই দু:খজনক ও মর্মান্তিক মৃত্যু। ছেলেটা আমার কাছে এসেছিল। ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে আমি বলেও দিয়েছিলাম। তারা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেবে বলেছিল। এরপরও কেন তার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন হয়নি। এটা সংশোধন করতে আহামরি কি ছিল। সে কেন জেএসসির রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি। কেন তাকে মৃত্যুও পথ বেছে নিতে হল। এটা তদন্ত হওয়া দরকার।  
এদিকে আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, দুজর্য় দাশ জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় সোমবার দিনগত রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে। জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন করতে না পারায় জেএসসির রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেনি দুর্জয় দাশ। মঙ্গলবার তার জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিন ছিল।
দুর্জয় দাশের বাবা মিলন দাশ জানান, দুর্জয় গত কয়েকদিন আগে কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে জেএসসির রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে জানতে পারে জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বয়স দু‘বছর বেশি। ফলে তার রেজিস্ট্রেশন হবে না। এটা শোনার পর সে প্রথমে চাতরী ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে যায়। সেখান থেকে বলা হয় স্কুল থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসতে। এরপর কৈনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট গেলে বলেন ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা তাদের বিরুদ্ধে ইউএনওর নিকট অভিযোগ করেছে। তাই তিনি নিষেধ করেছেন প্রত্যয়নপত্র না দিতে।
এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) আশীষ দে এর কাছে গেলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে আনতে। এভাবে এই অফিস থেকে ওই অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এবং জেএসসির রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে দুর্জয় দাশ হতাশ হয়ে রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে।  
উল্লেখ্য, মিলন দাশের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে। মেয়েটি ছোট। দুর্জয় দাশকে হারিয়ে মা-বাবাসহ পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছেন। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status