শেষের পাতা

সিলেট নগরেও ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৯ জুন ২০২০, সোমবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

ছবিঃ সংগ্রহিত

সিলেট নগরেও হানা দিয়েছে বন্যা। অভিজাত এলাকা উপ-শহরের অর্ধেক এলাকা পানির নিচে। প্রধান সড়কে হাঁটু পানি। উপ-শহর সহ আশেপাশের ১০টি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলাগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। ভারতের মেঘালয়ের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে পানি বাড়ছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। করোনাকালের এই বন্যা মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে তুলেছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটের মানুষ। এদিকে পানিবন্দি এলাকাগুলোতে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণের জন্য আর্তনাদ বাড়ছে। সিলেটের অভিশাপ উজানের ঢল। সিলেটের উজানে ভারত। একদিকে মেঘালয় ও অপরদিকে আসামের করিমগঞ্জ, মণিপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথই হচ্ছে সিলেট। সুরমা, কুশিয়ারা সহ অন্তত ১০টি শাখা নদী হয়ে এই পানি নিষ্কাশিত হয়। পাহাড়ি ছড়া বা নদী দিয়ে যেসব পানি প্রবাহিত হয় সেই পানি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে চলে যায়। কিন্তু উজানে প্রবল বৃষ্টি হলে সীমান্তের বিভিন্ন স্থলপথ দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এবারও ঘটছে তাই। ভারত থেকে নদীপথে পানি নামছে, তারপরও সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ঢল নামছে। এতে করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পানি বাড়ছে। শনিবারও সিলেট নগর বিপদমুক্ত ছিল। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ছড়া, খাল পরিষ্কার থাকায় এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকার কারণে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা হয়নি। তার কথার সত্যতা মিললেও সুরমা উপচানো পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর নদী তীরবর্তী এলাকা, নগরের উপ-শহর ও অভিজাত এলাকা। সাজানো গোছানো এলাকা। কিন্তু সুরমার পানি উপচালেই সিলেট নগরের উপ-শহর ডুবে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গতকাল দুপুরের সর্বশেষ তথ্য মতে- সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে মাত্র এক সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর এতেই উপ-শহরে আঘাত হানে বন্যার পানি। উপ-শহরের প্রধান সড়ক পানির নিচে। ডি ব্লক, এইচ ব্লকের অর্ধেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সৈয়দানী বাগ, তেররতন সহ কয়েকটি এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় উপ-শহর এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। উপ-শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতে ঘুমের মধ্যেই আঘাত হানে বন্যার পানি। ভোর হতে না হতেই পানিতে সয়লাব হয়ে যায় পুরো এলাকা। উপ-শহর দিয়ে যেসব ছড়া বা খাল প্রবাহিত হয়েছে সেগুলো দিয়েই সুরমার পানি উপচে নগরে প্রবেশ করছে। এসব ছড়া ও খাল এখন জনপদের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে ওই সব এলাকার বহুতল ভবনের নিচতলা বা একতলা ভবনে বসবাসকারীর অনেকেরই বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোনো বাড়ি হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। তারা জানান, উপ-শহরকে রক্ষা করতে হলে সুরমার তীরে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি যেসব ছড়া এবং খাল রয়েছে সেগুলোকে খনন করে গভীর করলেই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে বন্যা থেকে। উপ-শহরের পানি এসে আঘাত হেনেছে যতরপুর, সুবহানীঘাট এলাকা পর্যন্ত। এসব এলাকায়ও হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সিলেটের মাছিমপুর, ছড়ারপাড়া এবং বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাটেও পানি ঢুকেছে। সুরমা নদী তীরবর্তী এসব এলাকার জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। নগরীর কাজিরবাজার এলাকায় পানি ঢুকেছে। ছড়ার কাজ চলমান। খনন করা হয়েছে। এরপরও পানি ঢুকে গেছে কাজিরবাজার এলাকায়ও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পানি বাড়লেও তালতলা এলাকার প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়বে। নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড পুরোটাই নদী তীরবর্তী। উপ-শহরের মতো শামীমাবাদ আবাসিক এলাকা পরিপাটি। বন্যার পানি থেকে রেহাই পায়নি শামীমাবাদ এলাকা। কম পক্ষে ১০টি এলাকায় সুরমার পানি উপচে ঢুকে গেছে। অনেক মানুষও হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। সিলেট সদর উপজেলার বন্যার পরিস্থিতি ভালো না। সদরের টুকেরবাজার, বাদাঘাট, উমাইরগাঁও, হাটখোলা সহ কয়েকটি এলাকা চেঙ্গেরখালের পানি উপচে তলিয়ে গেছে। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখনো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে হাঁটু পানি। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ জানিয়েছেন, পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এলাকার সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ জরুরি ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছেন। সিলেট-সালুটিকর সড়ক গত তিনদিন ধরে পানির নিচে। একই অবস্থা সারি- গোয়াইনঘাট সড়কে। ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বেড়ে চলেছে বলে সালুটিকর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে এলাকায় জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করে সেগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কানাইঘাটেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় পানি বাড়ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে সুরমার ডাইকও।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status