বই থেকে নেয়া

বাংলাদেশ: ভবিষ্যত অভিযাত্রা-

জাতীয় অগ্রগতির পাঁচ দফা কর্মসূচি (প্রথম পর্ব)

ড. রেজা কিবরিয়া

২০ জুন ২০২০, শনিবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

(ড. রেজা কিবরিয়ার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ । তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার তনয়। ড. রেজা কিবরিয়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বি.এ(ফার্স্ট ক্লাস), কুইন্স ইউনিভার্সিটি (কানাডা) থেকে এম.এ. (অর্থনীতি) এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এম.ফিল. (অর্থনীতি) ও ডি.ফিল. (অর্থনীতি) ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর পেশা জীবন শুরু হয় ওয়াশিংটন ডিসি-স্থ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এ। আইএমএফ-এ কর্মরত অবস্থায় (১৯৮৪-৯৩) তিনি রোমানিয়া, পর্তুগাল, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, সিংগাপুর, বাংলাদেশ, পাপুয়া নিউ গিনি থাইল্যান্ড ও অনান্য দেশে কাজ করেছেন। আইএমএফ ছাড়ার পর তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন এবং বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এ পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ পাপুয়া নিউগিনির রাজস্ব বিভাগের ম্যাক্রো ইকোনোমিক এডভাইজার হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। ড. রেজা কিবরিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, তাঞ্জানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থনীতি সংস্কার, রাজস্ব নীতি ও কাঠামো সংস্কার, বাজেট সংস্কার, কারিগরী সহায়তা কৌশলপত্র প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার অর্থায়ন, প্রোগ্রাম বাজেটিং, জাতীয় কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রণয়নসহ অর্থ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়ের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি দেশ সেবার প্রত্যাশা নিয়ে দেশে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। দায়িত্ব পালন করছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন ‘বাংলাদেশ: ভবিষ্যত অভিযাত্রা জাতীয় অগ্রগতির পাঁচ দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক দীর্ঘ নিবন্ধে। মানবজমিন এর পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি দুই পর্বে উপস্থাপন করা হলো। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।)

ক. মুখবন্ধ
You can be standing right in front of the truth and not necessarily see it, and people only get it when they are ready to get it.    George  Harrison
When the people fear their government, there is tyranny; when the government fears the people, there is liberty.  Thomas  Jefferson
বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ মনে করে যে জাতি হিসেবে আমরা পথ হারিয়েছি। সাধারণ মানুষের প্রশ্নের মধ্যেই এই হতাশা ফুটে উঠে যে, “আমরা কি এই দেশ পাওয়ার জন্য এতটা আত্মত্যাগ করেছিলাম (১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে)?” বিগত বছরগুলোতে আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে বড় ধরনের উন্নতি করলেও, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্র নষ্ট হওয়া, দুর্নীতির ব্যাপকতা, সামাজিক মূল্যবোধের ধ্বস, এবং আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের ধ্বংস সাধন সবার মাঝে এক ধরনের হতাশা তৈরি করেছে। আমাদের রাজনীতিতে এক প্রকার অসুস্থ পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং সংঘাত ও নিপীড়ন জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধানে পথে বাধা সৃষ্টি করছে। মুখে অনেকে বড় বড় নীতি-কথা বললেও বাস্তবে সবখানে অনৈতিকতার চর্চা করা হয়। জনগণের নিকট জবাবদিহিতাহীন একটি সরকার চেপে বসে আছে। তারা মানুষকে জোর করে বশ্যতা স্বীকার করাতে চায়। তারা জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায়ও ব্যর্থ। বিশেষ করে গত এক দশকের অভিজ্ঞতা আমাদের শাসনপদ্ধতির দুর্বলতাকে চরমভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। একটি চরম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাকে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করে আমরা আমাদের কাঙ্খিত একটি স্বাধীন ও উন্নত দেশ গড়ে তুলতে পারবো না। জাতি হিসেবে এই সমস্যাগুলো যে আমাদেরকে অতি গুরুত্বের সাথে মোকাবেলা করতে হবে করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের চোখে আঙুল সেটি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

খ. ভূমিকা
It is enough that the people knwo there was an election. The people who cast the votes decide nothing. The people who count the votes decide everything. Joseph Stalin
When a nation has reached this point, it must either change its laws and mores or perish, for the well of public virtue has run dry: in such a place one no longer finds citi“ens but only subjects.  Alexis de Tocqueville
১। এই নিবন্ধে বাংলাদেশের ভবিষ্যত অভিযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। এতে মূলত লেখকের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। লেখক প্রদত্ত তথ্য পুরোপুরি সঠিক বা মৌলিক বলে দাবি করেননি। নিবন্ধে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না থাকায় জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশের সকল পথ রুদ্ধ থাকায় তাদের উদ্দেশ্যেই এই ধারণাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। নিবন্ধটিকে সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য সংস্কারের বিস্তারিত পরিকল্পনা এখানে তুলে ধরা হয়নি। কারণ বিস্তারিত পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞ মতামত থাকা আবশ্যক। এই নিবন্ধটি মোটাদাগে পরামর্শমূলক এবং নানা খুটি-নাটি সমস্যা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়নি কারণ দেশের বেশিরভাগ সমস্যা সম্পর্কে জনগণ সচেতন রয়েছে।

২। এখানে তুলে ধরা সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সামগ্রিক শাসন পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি জনগণের চিন্তা-ধারায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। পুরনো অভ্যাসগুলো বাতিল করে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। এবং অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উৎস বিকৃত মূল্যবোধগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। যেকোনো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতেই জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি হতাশা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ এতটা কমে গেছে যে সৎ ও যোগ্য মানুষরা রাজনীতিতে আসতে নিরুৎসাহিত হয়। অসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমতকে নিষ্ঠুরভাবে দমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার বেড়েছে। জনগণকে এখন সরকারি কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুগত হয়ে থাকতে হয়। ব্যক্তিপুজা করতে হয়। এর ফলে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশ গ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। গণতন্ত্রের ছদ্মবেশধারী কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকলে এগুলো রাজনীতির অংশ হয়ে পড়ে। আজকে জনগণ সরকারকে ভয় পায়, যেখানে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার জনমতকে ভয় করার কথা।

৩। এই নিবন্ধটি করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে লিখা হয়েছে। এ মহামারি সারা বিশ্বে এক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামাজিক বুনন ও অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য দায়ী একটি ব্যর্থ ও জন প্রতিনিধিত্বহীন সরকার বর্তমানে এমন একটি সংকট মোকাবেলা করার জন্য এটি প্রস্তুত নয়। সরকারের উপর বিপুল সংখ্যক মানুষের অনাস্থার ফলে তারা করোনাভাইরাস মোকাবেলা, জীবিকা হারানো কোটি মানুষকে খাবার যোগানো, এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
৪। চরম অযোগ্যতা নিয়ে দেশ শাসন করা বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশের বর্তমান সংকট মোকাবেলা অসমর্থ বা অনিচ্ছুক। সরকারিনীতি বর্তমানে গণমানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিচালিত নয়, বরং অল্পকিছু মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসা পূরণে সচেষ্ট।

৫। খারাপ নীতির পরিণতি বিভিন্ন রকম হতে পারে: কিছু নীতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অন্যসব নীতি অল্পকিছু মানুষের ক্ষতির কারণ হবে যা সংশোধনযোগ্য। কিছু নীতির প্রভাব কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে কিছু নীতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দশকের পর দশক লেগে যেতে পারে এবং তার খেসারত প্রজন্মের-পর-প্রজন্মকে দিয়ে যেতে হয়। যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো বেপরোয়া ও দুর্বলভাবে প্রণীত সরকারি বিভিন্ন নীতির ফলে ইতোমধ্যে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তারপরও ভুল সংশোধন এবং আমাদের সন্তান ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। তবে নষ্ট করার মতো আর সময় নেই।
৬। নিম্নোক্ত পাঁচ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় পুনর্জাগরণ শুরু হতে পারে:
১। জনগণই সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস;
২। বাংলাদেশের সব মানুষের স্বার্থে দেশ পরিচালিত হবে;
৩। বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা করা হবে;
৪। দারিদ্র্য নিয়ে জন্মালে কাউকে সারাজীবন দারিদ্র্যের অভিশাপ নিয়ে থাকতে হবেনা;
৫। আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি শক্তিশালী, নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর, ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যাবো।

গ. উদ্দেশ্যওমূলনীতি
Government belongs wherever evil needs an adversary and there are people in distress.  Robert F.Kennedy
This country, with its institutions, belongs to the people who inhabit it. Whenever they shall grwo weary of the existing government, they can exercise their constitutional right of amending it, or exercise their revolutionary right to overthrwo it.   Abraham Lincoln
৭। এই নিবন্ধের উল্লিখিত কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সমূহের পেছনের মূলনীতিগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সংস্কারের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং নতুন বাংলাদেশের স্বরূপ কী হবে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নিম্নে উল্লিখিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে বিগত পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতার আলোকে সংবিধানে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন হবে। লক্ষ্যগুলো গুরুত্বের ক্রমানুসারে উপস্থাপন করা হয়নি।

সরকারি নীতির মূল লক্ষ্য
৮। সরকারি নীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে নাগরিকদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোর উন্নতি এবং নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণকে উপেক্ষা না করেই নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণ নির্দেশক সূচকগুলোর উন্নতিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘোরে নীতিনির্ধারকরা বণ্টনের দিকটি এবং ব্যক্তিক ও সামষ্টিক প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করছেন। ২০১৯ সালের জাতিসংঘের প্রণীত সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ শেষের দিক থেকে ইরাকের এক ধাপ উপরে ১২৫তম স্থান অধিকার করেছে। র‌্যাংকিংটি বিভিন্ন সূচকের উপর ভিত্তি করে প্রণীত: যেমন- মাথাপিছু জিডিপি আয়, সামাজিক সহায়তা, স্বাস্থ্যসম্মত আয়ু, জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, দানের সংস্কৃতি, এবং দুর্নীতি সম্পর্কে মনোভাব। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আবশ্যকভাবে প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের মৌলিক চাহিদার ঘাটতি পূরণ, কিন্তু মানুষের সার্বিক কল্যাণ নির্দেশক সূচকগুলোর কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব সূচকে উন্নতি করতে হলে সামাজিক খাতের নীতিগুলোকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রার সাথে সমন্বয় করতে হবে।

রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস
৯। সরকার কেবল জনগণের পক্ষে এবং জনগণের সম্মতিতেই দেশ পরিচালনা করবে। সরকার পরিচালনার সকল পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণের নীতি প্রতিষ্ঠাকরা হবে। এটি কেবল সরকারি নীতিতে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বর্তমানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যও এটা আবশ্যক। এখানে একটি উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে যেখানে সংখ্যা গুরুরা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করবে না। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হবে। প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এর নেতৃত্বে থাকবে সৎ, সাহসী ও যোগ্য ব্যক্তিগণ যারা বড় রাজনৈতিক শক্তির চাপ উপেক্ষা করতে পারে। কালো টাকা ও অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ভোটার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি দেখানোর প্রচেষ্টা রুখে দেয়ার মাধ্যমে অবাধ নির্বাচনের পূর্ব-শর্তাবলী প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোট জালিয়াতির বিভিন্ন কৌশল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্ভাবন করা হয়েছে যা প্রতিহত করতে হবে। ভোটের ফলাফল নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করা যায় এরকম ভোট প্রদান পদ্ধতি চালু করতে হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন গণতন্ত্রগুলোতেও টাকার প্রভাব বেড়েছে। রাজনীতিতে টাকার প্রভাব পুরোপুরি নির্মুল করা না গেলেও এটি কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।

আইনের শাসন
১০। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। সকল নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সকল নাগরিককে আইনী সুরক্ষা প্রদান এবং তাদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, কর্মকা- ও কাঠামোতেও মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।

ক্ষমতার ভারসাম্য
১১। ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে যার মাধ্যমে সরকারে নির্বাহী বিভাগের একচ্ছত্র প্রাধান্য খর্ব হবে। “বিজয়ীরা-সব-পাবে“ এ জাতীয় নীতির ফলে দেশে কেবল “নির্বাচিত স্বৈরশাসক“ অদল-বদল হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিরসন করা সম্ভব, বিশেষ করে: ১) সরকারের সকল বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন; ২) ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, এবং সম্ভব হলে সংসদে কিছু আসনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু করা। তবে এসব সংস্কারের সফলতা নির্ভর করবে কে সরকার চালাচ্ছে তার উপর। কারণ একটি উত্তম ব্যবস্থাও খারাপ ব্যক্তির কারণে নষ্ট হতে পারে। বড়-বড় পদগুলোর মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরো পেশাদারিত্ব আনতে হবে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে (জনপ্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য খাতে) রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে আনা হবে।

বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত প্রকাশ
১২। বাক স্বাধীনতা এবং ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষা করা হবে। সরকারের সাফল্য ও কার্যক্রম সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্য সরকারি তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এটি করা হবে একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য অধিকার আইনের আওতায়। জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৬-এর মতো যেসব নিবর্তনমূলক আইন ও বিধিমালা জনগণের বাক স্বাধীনতা সংকুচিত করে সেগুলো বাতিল করা হবে। পেশাদার সাংবাদিক ও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত মতামতের সুরক্ষায় একটি আইন প্রণয়ন করা হবে। শুধু সহিংসতায় উসকানি, ব্যক্তি বা কোনো সম্প্রদায়কে হয়রানি এবং মাদক বিক্রির মতো অবৈধ কার্যক্রমগুলোকে এই আইনে নিয়ন্ত্রণে রাখার বিধান থাকবে। সকল প্রকার হয়রানি থেকে সব সাংবাদিককে সুরক্ষা এবং প্রকাশ্যে মতামত ব্যক্ত করার অধিকারের সুরক্ষা প্রদান করা হবে। কারণ গণতন্ত্রের প্রথম রক্ষাকবচই এটি।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
১৩। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সম্পদ নির্বাচিত আঞ্চলিক, পৌর ও স্থানীয় সরকারের হাতে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। এর ফলে বাজেট সম্পদ বণ্টনের বিদ্যমান ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে বাজেটের মাত্র ১০ শতাংশ স্থানীয় সরকারে বণ্টন হয়। স্থানীয় সরকার ক্রমান্বয়ে সামাজিক খাতে ব্যায়ের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে এবং তাদের নিজস্ব সম্পদ সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে সেবাসমূহের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তা) ন্যূনতম জাতীয় মানদ- বজায় রাখতে সহায়তা করা। ঢাকা-কেন্দ্রিক সম্পদ বণ্টনের বর্তমান পদ্ধতি অবশ্যই বিলোপ করা হবে। এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন নতুন কেন্দ্রস্থল তৈরি করা হবে।

বৈষম্যহীন সমাজ
১৪। রাষ্ট্রে বা সমাজে ধর্ম, লিঙ্গ, অক্ষমতা কিংবা জাতীয়তার পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো প্রকার বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। সব নাগরিককে ন্যায্যভাবে এবং সহানুভূতির সাথে দেখা হবে এবং সমাজে তাদের অবদান ও তাদের প্রয়োজনীয়তা উভয়ের নিরিখে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। জাতি হিসেবে এটা কেবল আমাদের নৈতিক অবস্থান প্রতিষ্ঠার জন্যই নয়, বরং এটি আমাদের উৎপাদনশীলতা এবং কার্যকরভাবে সম্পদ বণ্টনের জন্যও এটা করা আবশ্যক।

“সবার আগে বাংলাদেশ“
১৫। “সবার আগে বাংলাদেশ” নীতি হবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের কিংবা ব্যক্তি বা বাণিজ্যিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের আলোচনার ভিত্তি। সবসময় এবং সকল প্রকার বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে দেশের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষা করা হবে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকবে তাদেরকে সততা, মেধা ও দেশের প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে বাছাই করা হবে।

সুযোগের সমতা
১৬। সব নাগরিক সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে। দারিদ্র্য ও অক্ষমতা-গ্রস্থ মানুষ যাতে সরকারি সেবা ও সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এর মাধ্যমে তারা মানুষ হিসেবে তাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বিকাশ সাধন করতে পারবে এবং জাতি গঠনের সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবে। যদিও বাস্তবে এটি অর্জন কঠিন। এমনকি সর্বাপেক্ষা “সমাজতান্ত্রিক“ দেশগুলোতেও আয় ও সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য দেখা যায়। তথাপি, আমাদেরকে এই লক্ষ্য অর্জনেই কাজ করে যেতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের আগের পরিস্থিতির চেয়েও খারাপ। কারণ তখন শিক্ষার্জনের মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের কিছুসুযোগ ছিলো। আমাদের সমাজে শিক্ষায় বিনিয়োগের প্রবণতা কম, এবং আমরা মানব সম্পদে বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রবণতা সংশোধন করা হবে।

সামাজিক ন্যায়বিচার
১৭। কর আহরণ ও সরকারি তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় বিচারের ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উচিত প্রকৃতিগত ও উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈষম্য নিরসণে ভূমিকা রাখা। জাতীয় বাজেটকে শহুরে অভিজাতদের রেন্ট সিকিং (rent-seeking)-এর খপ্পর থেকে বের করে এটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করা হবে। সরকার সকল নাগরিকের জন্য উৎপাদনমূখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে (জাতীয় কর্মসংস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে), এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে যাতে মানুষ মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম আয়ের সংস্থান করতে পারে। বিদ্যমান জনশক্তি রপ্তানী চলমান থাকলেও, সরকারি নীতির লক্ষ্য হবে: অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দেশের অভ্যন্তরে আরো বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।

মুক্ত বাজার ও আইনী কাঠামো
১৮। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাই হবে প্রধান চালিকা শক্তি, তবে সেটি পরিচালিত হবে শক্তিশালী আইনী কাঠামোর মধ্যে। এর মাধ্যমে একচেটিয়া কারবার ও প্রতিযোগিতা বিনষ্টকারী যেসব ক্ষতিকর বিষয় বাজার ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয় তা এড়ানো সম্ভব হবে। রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসায়িক জোট (কার্টেল) এবং অবাধ বাণিজ্যের যেকোনো প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করতে কাজ করবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং নতুন নতুন বাজারে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা। বাণিজ্যিক কাজে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ স্বল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে সীমিত করা হবে, যেমন যেখানে “জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়” জড়িত কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনা জড়িত সেসব খাতে। এর লক্ষ্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য/সেবা প্রদান বা প্রায়োগিক সমাধান প্রদান করা (যেমন, টিকাদান কর্মসূচি, সড়ক বাতি, প্রতিরক্ষা)। বিগত পাঁচ দশকে রাজনৈতিক বিবেচনায় রেন্ট-সিকিং এর কাজে যেসব রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে সেগুলোকে বেসরকারি করণ করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিবিধানগুলো পর্যালোচনা ও সংশোধন করা হবে এবং জনস্বার্থ সংরক্ষণে শক্তিশালী ও কার্যকর পরিদর্শক পদ সৃষ্টি করা হবে।

দুর্নীতি দমন
১৯। সরকারের সর্বক্ষেত্রে কাঠামোগত দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে। এর জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ও রাজনীতিতে অর্থের ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। পাশাপাশি দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে অচ্ছুত ও অগ্রহণযোগ্য বিষয়ে পরিণত করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে (একেবারে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে)। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় গিয়ে ব্যবসায়ীতে পরিণত হওয়ার প্রচলনকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। কিছু বিষয়কে সরাসরি মোকাবিলা করতে হবে: যেমন সরকারের আকার ও ক্ষমতা, স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা, এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে রেন্ট-সিকিং-এর সুযোগ কমিয়ে আনবে, কিন্তু এর সফলতা নির্ভর করবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতার উপর। সরকারি চাকুরিজীবিরা একটি ‘নৈতিক কোড‘ (ঊঃযরপং ঈড়ফব) মেনে চলার শপথ নিবেন এবং তার ভিত্তিতে জবাবদিহি করবেন। এতে অসদাচরণের সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং এর আওতায় সরকারি চাকুরিজীবিরা তাদের আর্থিক ও অন্যান্য স্বার্থদ্বন্ধ (conflicts of interest) ঘোষণা করবেন।

সরকারি সেবার মান
২০। সরকারি সেবা প্রদানের নির্দিষ্ট মানদ- প্রতিষ্ঠা করা হবে যাতে সকল নাগরিক শ্রেণি বা পেশা নির্বিশেষে সরকারি সেবা ব্যবহারে সমান সুযোগ পায়। এর আওতায় সকল আর্থিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং অর্থের উপযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।প্রতিটি সরকারি কার্যালায়ের বিদ্যমান “নাগরিক সনদ” (Citi“enÕs Charter) প্রণয়ন করা হবে যাতে সব মানুষের ন্যূনতম নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরা যায় এবং প্রশাসনিক ত্রুটি-বিচ্যুতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যায়।

পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ সংরক্ষণ
২১। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে। বর্তমান প্রজন্মের সমৃদ্ধি অর্জনের পথে আমাদেরকে পরিবেশ বিষয়ক নীতিমালা, কিংবা আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, অ-নবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহার, অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প এবং আর্থিক ও ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতিসহ সরকারি সকল নীতিমালায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার ও স্বার্থকে বিবেচনায় নেওয়া হবে। কিছু কিছু আর্থিক নীতিতে স্বল্প-মেয়াদী বণ্টন নীতি [inter-temporal distribution choices] গ্রহণ করতে হয় (যেমন, সঞ্চয় ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা, অর্থাৎ- সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান ভোগের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া)। এমনকি সবচেয়ে কার্যকর প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে শিশুসহ [যাদের ভবিষ্যৎ সরকারি নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে] বেশিরভাগ নাগরিকের সরাসরি মতামত নেওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ উপেক্ষা করা হবে না।

গ. খাত ওয়ারী সংস্কার অগ্রাধিকার সমূহ
While free markets tend to democrati“e a society, unfettered capitalism leads invariably to corporate control of government.   Robert F. Kennedy

For there is no other way to preserve what is good in the past other than by exorcising all that was bad in it. Lee Kuan Ywe
২২। নিম্নে উল্লিখিত খাতওয়ারী সংস্কার প্রস্তবনার সংক্ষিপ্তসারে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলোতে যদিও কেবল সম্ভাব্য নীতি সংস্কারের মোটামুটি ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। কিছু কিছু বিষয়, যেমন- সড়কে নিরাপত্তা, ভবন ও সুরক্ষা কোড বাস্তবায়ন, এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতি এখানে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করা হয়নি। কারণ এ বিষয়গুলোর অগ্রগতি সাথে সুশাসন প্রতিষ্ঠা যেমন সম্পর্কিত তেমনি সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তনের বিষয়টিও জড়িত। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
২৩। অর্থপূর্ণ ও টেকসই সংস্কারসমূহ বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রতিটি খাতের সবচেয়ে যোগ্য ও সেরা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে খাতওয়ারী পর্যালোচনা করা। সম্ভাব্য সংস্কারের আকার ও আকৃতি নিয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা আবশ্যক হলেও সার্বজনীন ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা কঠিন। যার ফলে কাঙ্খিত পরিবর্তন সাধনে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কার্যকর জোট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সার্বিক সংস্কার কর্মসূচি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিতদের সংস্কারের অনুক্রম ও সময়সীমার মতো বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে এক খাতের সংস্কার অন্য আরেকটি খাতের সংস্কার বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে আসতে পারে। সংস্কারের অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে “দ্রুত সাফল্য“ আসে এ ধরনের কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।সেগুলোর সফলতা তুলে ধরেইদীর্ঘ-মেয়াদী সংস্কারের পক্ষে সমর্থন আদায় করা সম্ভব। কারণ দীর্ঘ-মেয়াদী সংস্কারে তাৎক্ষণিক বড় কোনো সুফল পাওয়া যায় না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status