এক্সক্লুসিভ

মোবাইলে সন্দেহজনক কথা বলায় স্ত্রীকে হত্যা করলো স্বামী

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৫ জুন ২০২০, সোমবার, ৭:০২ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জে প্রেম করে বিয়ের মাত্র ১০ মাস পরে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন স্ত্রী। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের চুপিনগর গ্রামে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাতে স্ত্রী রোজা আক্তার শারমীন (১৯) স্বামীর হাতে এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। স্ত্রী হত্যার ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক স্বামী মো. রোমান (২২)। শনিবার (১৩ জুন) বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিম আক্তার এর খাসকামরায় রোমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে ঘাতক স্বামী রোমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান স্ত্রী হত্যায় স্বামী মো. রোমানের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘাতক মো. রোমান কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের চুপিনগর গ্রামের ওয়াহেদ ওরফে অহিদ মিয়ার ছেলে। সে পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার বিষ্ণুহাটির একটি ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করতো। অন্যদিকে নিহত রোজা আক্তার শারমীন একই গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান জানান, একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি ও এক সঙ্গে চলাফেরার সুবাদে রোমানের সাথে শারমীনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের এক পর্যায়ে প্রায় ১০ মাস আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর প্রথমে মেয়ের অভিভাবক মেনে না নিলেও এলাকাবাসীর উদ্যোগে তারা এই বিয়ে মেনে নেন। এরপর থেকে শারমীনদের বাড়িতেই রোমান ও শারমীন বসবাস করে আসছিল। সম্প্রতি শারমীনকে তার চাচাতো বোন টুনি’র মোবাইল থেকে কাকে যেন ফোন করতে দেখে রোমান। রোমান এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শারমীন বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এ নিয়ে রোমানের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। এরপরও শারমীনকে একইভাবে ফোনে কথা বলতে দেখে রোমান। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পার্শ্ববর্তী একটি ইটভাটার খালি জায়গায় শারমীনকে ডেকে নিয়ে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে রোমান। পরে লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে সে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যায়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়ে রোমান তার শাশুড়ি হালিমা খাতুনের কাছে শারমীনের খোঁজ করে। তখনই শাশুড়ি হালিমা খাতুন মেয়ে শারমীনকে আশপাশের বাড়িতে খোঁজাখুজি শুরু করেন। রোমানও তার শাশুড়ির সাথে থেকে স্ত্রী শারমীনকে খোঁজার ভান করে। এ সময় আত্মীয়স্বজনেরাও শারমীনের খোঁজ করা শুরু করে। এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে আমিনের ইটভাটার খালি জায়গায় শারমীনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে চাচাতো ভাই রাসেল। পরে তারা লাশ নিয়ে পুলেরঘাট বাজারের পল্লী চিকিৎসক শহীদুল্লাহর কাছে নিয়ে গেলে তিনি শারমীনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে জানান। এ অবস্থায় নিহত শারমীনের বিষয়টি পুলিশকে জানানো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন স্বজনেরা। পরদিন শুক্রবার (১২ জুন) সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে বিষয়টি জানালে তারা শারমীনের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দিতে বলেন। পরে শারমীনের বাবা্‌ আব্দুল করিম কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে স্বামী রোমান নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে এটিকে জিন-ভুতের কাণ্ড বলে এলাকায় প্রচার করে। কিন্তু পুলিশের কুশলী তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। শারমীনের লাশ মর্গে পাঠানোর সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে রোমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় পুলিশের জেরার মুখে পড়ে সত্য প্রকাশ করে রোমান। জানায়, চাচাতো বোনের মোবাইল ফোন দিয়ে শারমীনের সন্দেহজনক কথাবার্তার বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শারমীন তার সাথে তর্ক-বিতর্ক করায় শারমীনকে সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে নিজেকে খুনের দায় থেকে বাঁচাতে সে অন্যদের সাথে শারমীনকে খোঁজার ভান করে। শনিবার (১৩ই জুন) বিকালে মো. রোমানকে আদালতে পাঠানোর পর হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিরোধের জের ধরে এমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত শারমীনের মা হালিমা খাতুন বাদী হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে মো. রোমানকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রোমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status