এক্সক্লুসিভ

করোনা: শিক্ষায় সব কিছুই এখন অনিশ্চিত

পিয়াস সরকার

৪ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

বছর শুরুর কয়েকটা দিন ক্লাস পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে দীর্ঘ সময় ক্লাস বন্ধ। এ অবস্থায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার ভবিষ্যৎ। নেয়া সম্ভব হয়নি কোন পরীক্ষা। সরকার থেকে শিক্ষাবছর বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। ঠিক তেমনি অনিশ্চিত এইচএসসি পরীক্ষা। এই পরীক্ষা শুরু হবার কথা ছিল ১লা এপ্রিল। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সব কিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।
এবার শিক্ষাবর্ষের ব্যপ্তি বৃদ্ধি হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বছরের শুরুর আড়াই মাস শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পেরেছে। এবার আর কতদিন ক্লাস করতে পারবে এখন কারো পক্ষেই বলা সম্ভব না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহসাই খোলার সুযোগ নেই। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে কবে নাগাদ খুলতে পারে।
পড়ালেখায় মন দিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী মাইশা শারমিন। তার মা মনিরা হক বলেন, স্কুল বন্ধের পর পড়ালেখা করলেও ধীরে ধীরে সেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। রাজধানীতে বাচ্চাগুলোর বেরুনোর স্থান বলতে একমাত্র স্কুল। স্কুল বন্ধ থাকায় সারাটা দিন বাড়িতে বসে থাকতে হয়। করোনার ভয়ে তাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়না। ভয়ে থাকি সবসময় বাচ্চাটাকে নিয়ে। মানসিকভাবে না ভেঙ্গে পড়ে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিলন রায় বলেন, শহরে থাকা বাচ্চাদের জন্য এই সময়টা চ্যালেঞ্জিং। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, অরুচি দেখা দিতে পারে। এই সময়টাতে বাচ্চাদের সময় দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ির ছাদ, উঠানে যেতে দিতে হবে। পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ দিতে হবে। সেটা ঘরের ভিতর কিংবা খোলা আকাশের নিচে হতে পারে। এই সময়টাতে শিশুরা প্রাত্যহিক কাজে ব্যাঘাত ঘটালেও যেমন, সময়মতো ঘুম থেকে না ওঠা, পড়তে না বসা ইত্যাদি কাজ ঠিক মতো না করলেও রাগারাগি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে এই সময়টাতে তারা মানসিক চাপের মধ্যে আছে। তাদের আরো মানসিক চাপ দিলে হিতে বিপরীত হবে। স্কুলে বন্ধ থাকলেও সংসদ টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে পাঠদান। কিন্তু এই ক্লাস করার জন্য চাই ক্যাবল (ডিশ) সংযোগ। যা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিন জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের অন্তত ২০ শিক্ষার্থী ও পাঁচ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরমধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থীর বাড়িতে ক্যাবল সংযোগ নেই। আর বিদ্যুৎ নেই তিন শিক্ষার্থীর বাড়িতে। পাঁচ জন শিক্ষকের মাঝে তিন জনের বাড়িতেই নেই ক্যাবল সংযোগ।
সংসদ টিভির ক্লাস নিয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা। এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সর্বোচ্চ যতটুকু করা সম্ভব আমরা ততটুকু করার চেষ্টা করছি। স্কুল খোলার পর বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করে ক্ষতি পোষাণোর চেষ্টা করব।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের। এই কর্মহীন সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’র এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রংপুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আফসানা রেবা। বাবার কসমেটিকসের দোকানের আয়ে চলে সংসার। রেবা রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, পরিবারের আয় প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় কী করব? বাবাকে বলতেও পারব না ভার্সিটির টাকার কথা। কিন্তু আছে সেমিস্টার গ্যাপের ভয়। ভার্সিটি থেকে বিকাশ নম্বর পাঠিয়েছে টাকা পাঠানোর জন্য। সরাসরি চাপ না দিলেও চাপটা বেশ। তিনি আরও বলেন, বাঁচলেই কী আর মরলেই কী? ভার্সিটির চাই টাকা। স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকাশ মাহমুদ। তিনি বলেন, পরিবারের আয় একদম বন্ধ। এখন খাব নাকি রেজিস্ট্রেশন করব? তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন না করলে বিশ্ববিদ্যালয় তো আর বসে থাকবে না। সেমিস্টার চলতে থাকবে। ফলে সেমিস্টার গ্যাপের চিন্তা থেকেও রেহাই পাচ্ছি না।
অনলাইন ক্লাস চলছে। এতেও সমস্যার শেষ নেই। বাংলাদেশের সব স্থানে নেটওয়ার্ক ঢাকার মত না। ফলে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না অনেকেরই। কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় বাড়ি ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারজানা খান বলেন, ক্লাসে উপস্থিত হলেও নেটওয়ার্ক এতো খারাপ কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মাসি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেমিস্টার অনলাইনে চলছে। বলা হচ্ছে ল্যাব ক্লাস হবে পরে। ল্যাব না করে থিউরিতে লাভ হচ্ছে না মোটেই। এছাড়াও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউওডা) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভটাও অনেক। এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের কাজটাই ব্যবহারিক। অনলাইনে ক্লাস করে কিছুই শেখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও আমাদের ব্যবহারিকের জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন রাজধানী ছাড়া অন্যসব স্থানে তা মিলছে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status