প্রথম পাতা

পাসের হার ৮২.৮৭

এসএসসিতে এগিয়ে মেয়েরা

স্টাফ রিপোর্টার

১ জুন ২০২০, সোমবার, ৮:১৫ পূর্বাহ্ন

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ বছর সারা দেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থী। গেল বছরের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৩০৪ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। গতবারের তুলনায় এবছর পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫-এ এগিয়ে মেয়েরা। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে এবার। গতকাল ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সেখানে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ভিডিও কনফারেন্সে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করেছি।
এবার ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (১১টি বোর্ডের) পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭। গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এবার পাসের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে এসএসসিতে ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাদ্রাসায় ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরিতে ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ পাস করেছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮১৫ জন। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
এসএসসির সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, গত বছর ছিল ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন। রাজশাহী বোর্ডে ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, গত বছর ছিল পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ জন। কুমিল্লা বোর্ডে ৮৫ দশমিক ২২ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৪৫ জন। যশোর বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, গতবছর ছিল  ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭৬৪। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, গতবছর ছিল ৭৮ দশমিক ১১ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে  ৯ হাজার ৮। এবার বরিশাল বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, গতবছর ছিল ৭৭ দশমিক ৪১ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৮৩। সিলেট বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, গত বছর ছিল ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ২৬৩ জন। এবার দিনাজপুর বোর্ডে ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গতবছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৮৬ জন। এবার নতুন বোর্ড ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৪৩৪ জন।
এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ, গত বছর  ছিল পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৫১৬ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৮৫ জন।
এবারের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে মেয়েদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ দিক দিয়েও মেয়েরা এগিয়ে। ছাত্ররা ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন এবং ছাত্রীরা ৭০ হাজার ১৪৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সকল শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ১০ লাখ ২১ হাজার ৪৯০ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯২ জন। বিপরীতে ফেল করেছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯৮ জন। অপরদিকে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৮ জন ছাত্রী এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩১ জন। আর ফেল করেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯০৭ জন।
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বিদেশে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রগুলো থেকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর সারাদেশে এবার এসএসসিতে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭। সেই তুলনায় বিদেশের কেন্দ্র থেকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার বেশি। বিদেশে ৯টি কেন্দ্র থেকে ৩৩৬ জন শিক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩১৮ জন। অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ জন। চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে।
বিভাগভিত্তিক ৯টি সাধারণ বোর্ডে পাসের শীর্ষে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা।  এ বিভাগে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গতবছর ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৩২ ভাগ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে। এ বিভাগে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ব্যবসায় শাখা বিভাগে ৩ হাজার ৮৫০ জন ও মানবিক বিভাগের ২ হাজার ৭৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সাধারণ বোর্ডে এ বছর ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা বেশি পাস ও জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এ বছর সারা দেশে ৩ হাজার ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর ছিল ২ হাজার ৫৮৩টি। গত বছরের চেয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করা ৪৪০টি প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এ বছরও ১০৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেনি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১০৭টি। গত বছরের চেয়ে শতভাগ ফেল করা ৩টি প্রতিষ্ঠান কমেছে। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ৩রা ফেব্রুয়ারি, শেষ হয় ২৭শে ফেব্রুয়ারি। ২৯শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ই মার্চের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ফল ঘোষণা করার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তারপরও যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফল প্রকাশে সহায়তা করেছেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন,? ফল পাওয়ার পর মিষ্টি বিতরণ একটা সাধারণ রীতি। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই এটি করবেন বলে আমি আশা করি।  তিনি বলেন,  গতবারের চেয়ে এবছরেও ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। এর পেছনে কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেয়েছে।
ফল পুনঃনিরীক্ষা: আজ সোমবার (১লা জুন) থেকে শুরু হচ্ছে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন। যারা ফল আশানুরূপ বলে মনে করবেন না, তারা এই পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে ১লা জুন থেকে ৭ই জুন পর্যন্ত। টেলিটক নম্বর থেকে জঝঈ স্পেস বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর স্পেস রোল নম্বর স্পেস বিষয় কোড লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে। ফিরতি এসএমএসে চার্জের অংক জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। এতে রাজি থাকলে জঝঈ স্পেস ণঊঝ স্পেস পিন নম্বর স্পেস যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে।
করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা নয়: গতকাল ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা নয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষা ১লা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। কারণ এখানে ব্যাপক পরিমাণ শিক্ষার্থী, পুরোপুরি গণপরিবহন চালু হতে হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব না। তাহলে আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এসব কিছু না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপকভাবে থেকে যাবে। কোনোভাবেই এ ঝুুঁকি এ মুহূর্তে নেয়া সম্ভব নয় বলে আমরা মনি করি। শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, সে কারণে করোনা পরিস্থিতি আরও অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারছি না। যখনই আমরা মনে করবো পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে তখনই অন্তত পক্ষে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status