প্রথম পাতা

সিলেটে দু’মাসে ঝরে গেল ১৯ প্রাণ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১ জুন ২০২০, সোমবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

‘সকালে দাফন শেষ করে আসার পর থেকে কোনোভাবেই যেন মনকে শান্ত করতে পারছি না। বারবার চোখে ভাসছে রুহুল আমিন ভাইয়ের হাসিমাখা মুখটি। কানে বাজছে তার একমাত্র ছেলে আলিফের আকুতি ‘আঙ্কেল আমার বাবার কবরটা চিনে রেখো। আমি আমার বাবার কবর জিয়ারত করতে যাবো’- সিলেটে করোনায় মারা যাওয়া নার্সেস কর্মকর্তা রুহুল আমীনের লাশ দাফনের পর তার সহকর্মী নার্সেস এসোসিয়েশন ওসমানী মেডিকেল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল হোসেন সাদেক ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেন এভাবেই। সিলেটের আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ছিলেন রুহুল আমীন। কর্মস্থল হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত হয়েই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই হাসপাতালেই। সেখানেই শনিবার তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। নার্স (ব্রাদার) রুহুলের মৃত্যুর পর শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন সিলেটের নার্সরা। শুধু নার্স নয়, সিলেটে প্রথম মৃত্যু হয়েছিলো গরিবের ডাক্তার বলে খ্যাত ডা. মঈন উদ্দিনের। এই মৃত্যু নাড়া দেয় সবাইকে। বিশেষ করে চিকিৎসক সমাজে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছিলো। মহামারি করোনায় সিলেটের কোথাও স্বস্তি নেই। একের পর এক আসছে মৃত্যু সংবাদ। বাড়ছে মৃত্যুর বহরও। বহরে এসে শামিল হচ্ছেন সিলেটের পরিচিত জনেরাও। গতকাল রোববার পর্যন্ত সিলেটে মারা গেছে ১৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলাতেই মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ জন। গতকাল দুপুরেও সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিয়ানীবাজারের তসলিম আহমদ নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই হাসপাতাল একমাত্র আশ্রয়স্থল। এ হাসপাতালেই ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে মৃত্যু সংখ্যা বেশি। অন্তত ৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছেন গত ১৫ দিনে। উপসর্গ নিয়েও অনেকেই মারা  গেছেন। যাদের নাম মৃত্যুর তালিকায় আসেনি। এর সংখ্যাও কম নয়। করোনায় মৃতদের মধ্যে আরো রয়েছেন ৩ জন মৌলভীবাজারের ও একজন হবিগঞ্জের। সিলেটে কেনো এতো মৃত্যু- এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেটের করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে অনেক রোগীকেই অন্তিম সময়ে এনে ভর্তি করা হয়। অনেক গুরুতর রোগীকেও নিয়ে আসা হয়। ফলে হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তবে চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন, বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। গতকালও দুইজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যান। হাসপাতালে অক্সিজেন, আইসোলেশন দেয়ার মতো সব ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো অবহেলা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যুর পর সিলেটের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো। এরপর থেকে বেশ সতর্ক সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১১ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ওয়ার্ড প্রস্তুত রয়েছে। এখন করোনায় ক্রিটিক্যাল রোগীরা ওই আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীরা সেবা পাচ্ছেন। তবে প্রশ্ন হলো এই হাসপাতালে কতদিন সেবা অব্যাহত রাখা যাবে? এর কারণ শামসুদ্দিনে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। এখন  রোগীতে ভর্তি হয়ে গেছে ওই হাসপাতাল। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ছিলেন ৫১ জন করোনা রোগী। উপসর্গ নিয়েও ভর্তি আছেন অনেকেই। রোগী ধারণের জায়গার সংকট ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এ নিয়ে চিন্তিত সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সিলেটের চিকিৎসা ব্যবস্থার এই সংকটের বিষয়টি অনুধাবন করে ইতিমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের নির্দেশে বেসরকারি নতুন একটি হাসপাতাল খোঁজা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩ মাসের জন্য পুরো হাসপাতাল ভাড়া দিতে চাইছে। এজন্য তারা প্রায় ২৬ কোটি টাকার একটি চাহিদা রেখেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, নর্থইস্ট সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তিনি জানান, যে হারে রোগী বাড়ছে  সে কারণে নতুন হাসপাতাল লাগবেই। এদিকে করোনায় সিলেটে কেটে গেল ৮৬ দিন। এই সময়ের মধ্যে প্রায় দুই মাস ধরে পুরোপুরি লকডাউন অবস্থা। এই সময়ের মধ্যে সিলেটের করোনার পরিসংখ্যান মোটেও সুখকর নয়। বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। করোনা আক্রান্ত অনেক রোগী হাসপাতালমুখী হননি। বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়েছেন। তাদের এই সুস্থতা প্রেরণা যুগিয়েছে অসুস্থদের। গতকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ২৫০ জন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status