অনলাইন

দক্ষিণ খুলনার টেকসই বেড়িবাঁধ ধারণা

মো. মিজানুর রহমান

৩১ মে ২০২০, রবিবার, ৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

সুন্দরবনের উত্তর দিকে বেশ কয়েকটি নদীর তীর ঘেঁষে অনেকগুলো জেলা। এসব নদীর পাড়ে কম-বেশি ১০০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা, আম্ফান, জলোচ্ছ্বাস, ঝড় ও নিম্নচাপের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর কিছুদিন পরপর সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার ৫০ শতাংশ জনবসতির সম্পূর্ণ এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩ থেকে ১০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্লাবিত হয়। জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার-ভাটার সময় পানি প্রবেশ করে আবাদযোগ্য চিংড়িঘের, কৃষিক্ষেত, ও জনবসতি এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ ঘুরে দাঁড়াতে বা যেকোন ধরণের উদ্যোগ নিতে আতঙ্কে থাকেন। ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করে। ঘুমের ঘরে ভয়ে শিশু ও মায়েরা উচ্চস্বরে চিৎকার করে ওঠে ‘পানি পানি’ বলে।

প্রতিবছর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কাঁচাপাকা রাস্তা ও ব্রিজ  ভেঙে বা নষ্ট হয়ে জাতীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করে। যার অঙ্ক জাতীয় বাজেটের একাংশ। সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলের গোল্ডেন ফিস, ফসল ও বিবিধ ব্যবসা থেকে বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসব এলাকার জনগণের একটি অংশ হচ্ছে দরিদ্র হতে হতদরিদ্র ও হারাচ্ছে ঘরবাড়ি, চলাচলের কাঁচা-পাকা রাস্তা, বেড়িবাঁধ, পরিবেশ ও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম।

খুলনা বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলে কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, পাইকগাছা, তালা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ইত্যাদি উপজেলার দক্ষিণ দিকে রয়েছে ইছামতি, বেত্রা, মরিচা, গলঘনিয়া, খোল, কাকশিয়া, গুটিয়া, ন-বাকি, কপোতাক্ষ, বড়দাল, শিপশা পশুর ইত্যাদি  ছোট বড় নদী। ওই নদীর দক্ষিণ তীরে সুন্দরবন অবস্থিত। এবং আরও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এই সমস্ত এলাকার ২০০-৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৫০ বছর পূর্বেই ১০০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। তার মধ্যে প্রতি উপজেলায় ৩-৫ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকা। এর কিছু অংশ প্রতিবছর ভাঙে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর নতুন ও পুরাতন বেড়িবাঁধ, ব্রিজ ও সংস্কার কাজ বাবদ জেলা ও উপজেলার ভিত্তিতে বড় ধরণের অর্থ বরাদ্দ পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তা ও বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ এবং সংস্কার কাজের জন্য কোনো কোনো বছর বড় ধরণের  থোক বরাদ্দ পায়। দীর্ঘদিন যাবৎ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দ্বারা ভোগান্তি থেকে মুক্তির পাচ্ছে না প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ও ঘের মালিকরা, শুধু আহজারি করে চলেছে।

গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ৫ লাখ কোটি টাকার অধিক অঙ্কের বাজেট হয় বাংলাদেশে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর ৫ কিলোমিটার স্থায়ী বা টেকসই পাকা আরসিসি দেয়াল দ্বারা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা অতি কঠিন কাজ নয় বলে আমার ধারণা। এতে প্রতিবছর বাজেটের ব্যয় হ্রাস পাবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। কারণ প্রতিবছর  বেড়িবাঁধের পাকা অংশ ভেঙে যাবে না। তাই পরীক্ষামূলকভাবে ৫ কিলোমিটার কাঁচা বেড়িবাঁধের ভেতরে/মাঝে আরসিসি পাইলিং যুক্ত দেয়াল নির্মাণ করে একটি টেকসই পাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যেতে পারে। যার দুই পাশে ৬ (ছয়) ফুট মাটি দ্বারা ঢেকে থাকবে। দেখতে মাটির বেড়িবাঁধ মনে হবে। যা ১০০ বছর টেকসই হতে পারে। এভাবে ৫ বছর পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞতার আলোকে পাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে বাঁধ স্থায়ী হবে, নির্মাণ ব্যয় হ্রাস পাবে ও সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
পরীক্ষামমূলক প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় এস্টিমেট:
বেড়িবাঁধে ১২ ফুট অন্তর অন্তর কলম ও ১২ ফুট উচ্চতা + ১০ ইঞ্চি পুরু শেয়ার  দেয়াল+ প্রতি কলমের নিচেই ২০ ইঞ্চি ডায়া ও ৪৫ ফুটের ৩টি পাইলিংসহ সকল কাজ আরসিসি ঢালাই দ্বারা ১২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শেয়ার দেয়াল তৈরী করতে সম্ভাব্য আএফটি প্রতি মোট খরচ ১১,২৫০ (এগার হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা মাত্র। এভাবে ৫ কিলোমিটার পাকা বেড়িবাঁধের নির্মাণ ব্যয় হবে ১৮,৪৫,০০,০০০ (আঠারো কোটি পঁয়তাল্লিশ লক্ষ) টাকা। যা বাজেটের সামান্য অংশ।

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে ওই এলাকার মানুষ সোনালী চিংড়ি মাছের ঘেরের উন্নয়ন, সাদা মাছের খনি আবিস্কার করতে পারবে। আর কাঁচামাল, কারখানা ও বহুমুখি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। নদীর পাড়ে বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে। বেড়িবাঁধের ভেতরে স্কুল-কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসবাসের জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলবে এলাকার জনগণ। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও আগমন ঘটবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর। বিশ্বের কাছে জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে সাতক্ষীরাবাসী এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

খুলনা-সাতক্ষীরা দক্ষিণাঞ্চলের টেকসই পাকা আরসিসি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার আদেশ দিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অত্র অঞ্চলের হতদরিদ্র, দরিদ্র, খেটে খাওয়া ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন।

আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণ, সাহসী সুযোগ্য। আমি আশাবাদী, যদি  কেউ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন তাহলে অবশ্যই তিনি সাতক্ষীরাবাসীর প্রকৃত বেড়িবাঁধ সমস্যা বিবেচনায় নেবেন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বিএমএআরপিসি কলেজ, পিলখানা, ঢাকা-১২১৫।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status