শেষের পাতা

করোনা

বদলে গেছে মৃত্যু সংবাদ

পিয়াস সরকার

৩১ মে ২০২০, রবিবার, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

একটি শোক সংবাদ, একটি শোক সংবাদ... এভাবেই মাইকিং করে এলাকাবাসীকে মৃত্যুর খবর জানানো চিরায়ত রীতি। কিন্তু করোনার প্রকোপে সেই রীতিতেও ভাটা পড়েছে। এখন শহর কিংবা গ্রামে এই চিত্র অনেকটাই উঠে গেছে। এমনকি স্বজনরা মসজিদের মাইকে ষোষণা দেয়াও কমিয়ে দিয়েছেন।
গত ২৭শে মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রংপুরের ব্যবসায়ী আলিমুর রেজা চৌধুরী। কিন্তু তার মৃত্যুতে কোনো মাইকিং করা হয়নি। দেয়া হয়নি মসজিদেও ঘোষণা। এ ব্যাপারে তার ছেলে ইমন রেজা বলেন, করোনার প্রকোপে সবাই ভয়ে আছি। মৃত্যুর কথা শুনলেই এলাকাবাসীর মধ্যে একটা ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এলাকা এবং প্রতিবেশীর মাঝে ভয়ের সৃষ্টি যাতে না হয় তাই ষোষণা দেয়া হয়নি।
পটুয়াখালী জেলা শহরে বাস মিলন পাটোয়ারীর। সাবেক এই সরকারি চাকরিজীবী এলাকায় বেশ সম্মানী ব্যক্তি। তার মৃত্যু হয় গত পরশু দিন। সেখানেও ছিল না কোনো মাইকিং কিংবা মসজিদে ঘোষণা। তার এক প্রতিবেশী বলেন, কবে মারা গেলেন, কবে জানাজা-দাফন হলো কিছুই জানি না।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮টি মৃত্যুর সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মাইকিং হয়নি কোনো স্থানেই। আর মসজিদে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ৩টি মৃত্যু সংবাদের। সদ্য মা হারিয়েছেন লিটু ইমান। এই স্কুলশিক্ষকের মা-বাবা দুজনই ছিলেন স্কুলশিক্ষক। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার এই শিক্ষক বলেন, বাবা মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখন পুরো স্কুল মাঠে জানাজার লোক কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। আর মায়ের মৃত্যুর সময় মাইকিংটা পর্যন্ত করা হয়নি। আমরাই কয়েকজন মিলে জানাজা শেষে লাশ দাফন করি। মাইকিং না করার কারণ হিসেবে বলেন, আমাদের এলাকায় কিছুদিন আগে একজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই এলাকায় একটা ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এজন্যই চাইনি কাউকে জানাতে। তিনি বলেন, তার মায়ের করোনার কোনো লক্ষণ ছিল না।
মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি এলাকায় মাইকের ব্যবসা মো. ইব্রাহীম আলীর। তিনি বলেন, করোনা আসার আগে মৃত্যু সংবাদ প্রচারের জন্য মাইক ভাড়া যেতো সপ্তাহে কম করে ২টি। কিন্তু এখন গত একমাসে একটি মাইকও ভাড়া যায়নি। করোনা আসার শুরুর দিকে মাইক ভাড়া নিতেন। তবে এখন একেবারেই নেই।
রাজধানীর শুক্রাবাদ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আবু ইউসুফ বলেন, এলাকায় মৃত্যুর সংবাদ আসলে মাইকে এলান করি। জানাজার নামাজের সময় জানিয়ে দেই। কিন্তু এখন স্বজনরা চান না এলান করতে। তারা শুধু আসেন জানাজা পড়ানোর জন্য।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সতীশ মহান্ত। তার বাবার প্রয়াণ হয়েছে গত ২রা মে। তিনি বলেন, বাবার মৃত্যুতে খুবই স্বল্প পরিসরে শেষকৃত্য পালন করা হয়। একেবারেই প্রতিবেশী ও স্বজন মিলে শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন ৭ থেকে ৮ জন। করোনার কারণে একটা ভয় ছিল। বাবার মারা যাওয়ার আগে করোনার উপসর্গ ছিল। তবে মারা যাবার ২ দিন আগে ফলাফলে দেখা যায় তিনি করোনা নেগেটিভ। তাই একটু সীমিত পরিসরেই বাবাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এখন যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও স্বল্প আয়োজনে বিদায় দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status