কলকাতা কথকতা
কলকাতা কথকতা
রাম - রহিমের গল্প, দুই পরিযায়ী শ্রমিকের করুণ কাহিনী
জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা
৩০ মে ২০২০, শনিবার, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
এ যেন ঠিক রাম আর রহিমের গল্প। মেদিনীপুরের রাজু মাঝি আর কলকাতার হায়ার মোহাম্মদের কাহিনী। দুজনে দুজনকে দেখেননি কখনোও। অথচ দুই পরিযায়ী শ্রমিকের ভাগ্য যেন এক সুতোয় বাঁধা। রাজু পায়ে হেঁটে বারাসাত থেকে বাড়ি পৌঁছেও ঘরে ঢুকতে পারেননি। আর হায়ার? হায়দরাবাদ থেকে দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েও কলকাতার ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। হ্যাঁ, ছোট্ট একটা অমিল আছে এই কাহিনীতে। রাজু কোনোদিন তার ঘরে হয়তো পৌঁছাতে পারে। ষাট বছরের হায়ার আর কোনোদিন তার একচিলতে ঘরে পৌঁছাবে না। পেশায় রাজমিস্ত্রি হায়ার হায়দরাবাদ থেকে পায়ে হেঁটে অভুক্ত অবস্থায় জমি নিয়েছে ওড়িশার বালেশ্বরের সোরা ব্যাহেঙ্গার ১৩ নম্বর জাতীয় সড়কে। আর কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াবে না এই পরিযায়ী শ্রমিক। তাকে সহকর্মীরা গোর দিয়েছে ওই বালেশ্বরেই। রাজু মাঝি কাজ করতো উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসতের এক ইটভাটায়। দীর্ঘ দু’মাস ভাঁটা বন্ধ। রাজু তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে হেঁটে পৌছায় পশ্চিম মেদিনীপুরের তাঁতিগেরিআর কবরডাঙায় তার ভিটেতে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ আর ক্লাব এর ছেলেরা রাজুকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয়। রাজুর দাবি, করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে রাজু আস্তানা নিয়েছে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে। হাতের টাকা ফুরিয়েছে। খাওয়ার সংস্থান নেই। রাজু আর হায়ার - দুই পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরে ফেরা হলোনা। এরা কেউ ভি আই পি নয় যে এদের নিয়ে আন্দোলন হবে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতেই কাঁদবে। মানুষের বিচারের, বোধের।