শেষের পাতা

দল বেঁধে ঢাকা ফিরছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার

২৯ মে ২০২০, শুক্রবার, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

ঈদ ছুটি শেষ। বাড়ছে না সাধারণ ছুটিও। তাই আর বাড়ি থাকার সুযোগ নেই। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ছেড়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। গণপরিবহন চলাচল না করলেও গতকাল থেকেই নানাভাবে ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন তারা। পায়ে হেঁটে, ছোট ছোট যানবাহন আর ফেরিতে করে গন্তব্যের  দিকে ছুঁটছেন তারা। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের সঙ্গে ঢাকার অভিমুখে এবার যোগ হয়েছে দীর্ঘদিন সাধারণ ছুটিতে থাকা কর্মজীবীরাও। এ যাত্রা সুখকর না হলেও অতিরিক্ত ভাড়া ঠিকই গুনতে হচ্ছে। ফলে যানবাহন সংকট, অতিরিক্ত খরচ আর ভীড়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঈদ শেষে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভীড় বেড়েছে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকামুখী দক্ষিণা লের হাজার হাজার যাত্রীদের ভীড় দেখা গেছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। ল  ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় নৌরুটের ফেরিতে ছিলো উপচে পড়া ভীড়। পরিবহনের পাশাপাশি ওই সব যাত্রী পার হচ্ছেন ফেরিতে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণা লের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা থ্রি হুইলারসহ বিভিন্ন ছোট পরিবহনে করে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে ভীড় করছে। পরিবহনের পাশাপাশি ফেরিতে করে পার হচ্ছে যাত্রীরা। কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদ শেষে গত মঙ্গলবার থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীদের ভীড় বাড়তে থাকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শ শ যাত্রী কাঁঠালবাড়ী ঘাট দিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে। নৌরুটে ১৩ থেকে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও নৌরুটের যাত্রীদের মধ্যে কোন রকম স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার সুযোগ নৌরুটে না থাকলেও মাস্ক ব্যবহার করতেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না যাত্রীদের।
ঘাট সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল, খুলনাসহ দক্ষিণা লের বিভিন্ন জেলা থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে যাত্রী কাঠালবাড়ি ঘাটে আসছে। ঘাট পর্যন্ত আসতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ৫-৭গুণ বেশি ভাড়া। ঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম জানান, সকাল থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীদের ভীড় রয়েছে ঘাট এলাকায়। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছে দক্ষিনা লের মানুষ। এই ভীড় আরো কিছুদিন থাকবে। ল -স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে চাপ বেশি। পরিবহনের পাশাপাশি যাত্রীদের প্রচন্ড চাপ রয়েছে।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের টিআই মো. হিলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীর ঢল নেমেছে। কিন্তু যানবাহনের অভাবে এসব যাত্রী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া ভাড়ার গাড়ি চলাচল নিষেধ থাকায় আমরা বেশ কিছু ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার জব্দ করেছি। এগুলো বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি পরিদর্শক মো. সিরাজুল কবির জানিয়েছেন, সকাল থেকে ১২টি ফেরি চলাচল করছে। দক্ষিণবঙ্গমুখী তেমন কোন গাড়িই নেই। ভোরের দিকে হালকা যানবাহন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকামুখী যাত্রীর ঢল নেমেছে। সরকার সাধারণ ছুটি সমাপ্ত ঘোষণা করায় লোকজন এখন ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব এখানে লংঘণ করা হচ্ছে। এতে কারো শরীরে করোনা থাকলে তা সংক্রমিত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও ভীড় দেখা গেছে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় দ্বিগুণ ভাড়ায় ছোট যানবাহনে ফিরছে মানুষ। ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটেও রয়েছে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড়। ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের ছুটির সঙ্গে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার ঘোষণায় আজ থেকে যাত্রীর চাপ আরো বাড়তে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে পরিবারের সঙ্গে অনেকটা নিরানন্দ ঈদ উদ্যাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। ঈদের পরদিন মঙ্গলবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের কিছুটা চাপ থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় লোকজন পিকআপ, লেগুনা, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। অনেকই আবার পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে। মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়, এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল বাইপাস ও মির্জাপুরে মানুষের ভীড় দেখা গেছে। গোপালপুরের নলীন থেকে ঢাকার মহাখালীতে প্রাইভেটকারে যাচ্ছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরমান হোসেন। অভিযোগ করে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ২০০ টাকার ভাড়ার স্থলে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১৩০০শ টাকা! শুধু আরমান নন, এমন অসংখ্য মানুষ ঈদের ছুটিয়ে কাটিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া ও স্বাস্থ্যঝুঁকিকে সঙ্গী করেই আবার কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে নানা হয়রানির অভিযোগ করে যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত খরচের টাকা ভাড়া হিসাবে বহন করতে হবে। নয়তো পায়ে হেঁটেই তাদের কর্মস্থলে যেতে হবে। এ বিষয়ে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, আমরা চেকপেস্ট পরিচালনা করছি যাতে গণপরিবহন ও ট্রাকে কোন মানুষ যাতায়াত না করতে পারে। তবে নিজস্ব পরিবহন চলাচলে কোন বাধা দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status