বিশ্বজমিন

পদত্যাগের দাবির মুখে নিজ অবস্থানে অনড় জনসনের প্রধান উপদেষ্টা, বৃটেনে তোলপাড়

মানবজমিন ডেস্ক

২৬ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রধান উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসের সরকারি নির্দেশনা অমান্যের ঘটনায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জারি লকডাউনের তোয়াক্কা না করে লন্ডন থেকে ২৫০ মাইল ভ্রমণ করে ডারহামে যান তিনি ও তার স্ত্রী। কামিংস জানান, ওই সময় তার স্ত্রীর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ ছিল। এ ঘটনায় বৃটেনজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কামিংসের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন নিজদলের নেতারাই। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে, নিজের উপদেষ্টার পক্ষে সাফাই গেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জনসনও। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা বয়, কামিংসের লকডাউন অমান্যের ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে জনসনের সরকার। বিরোধীদলের নেতাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অন্তত ২০ জন নেতা কামিংসের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কামিংস পদত্যাগ বা ক্ষমা চাইতে অস্বিকৃতী জানিয়েছেন। তার দাবি, তিনি লকডাউন না মেনে কোনো ভুল করেননি।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাগানে দেয়া এক সংবাদ সম্মেলনে কামিংস বলেন, আমার কাছে যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি সেটাই করেছি। আমি পদত্যাগ করার প্রস্তাব দেইনি। আমি এমনটা বিবেচনাও করিনি।
তীব্র সমালোচনার মুখেও নিজের উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন ধরে রেখেছেন জনসন। এতে করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি নিজেও। সমালোচকরা বলছেন, এ ঘটনায় প্রমাণ হয় যে, আইনপ্রণেতাদের জন্য সাধারণ আইন খাটে না। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জনসন জানান, মানুষজন যে ক্ষোভ, কষ্ট ও বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার জন্য আমি অনুতপ্ত। এজন্যই আমি তাদের বোঝাতে চাই যে, আসলে কী ঘটেছে। আমি মনে করি না, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কোনো কর্মচারী সরকারি নির্দেশনা ক্ষুণ্ণ করার মতো কিছু করেছে।
জনসন তার উপদেষ্টার পক্ষে সাফাই গাইলেও, বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা দুজনেই সরকারি নির্দেশনাকে গুরুত্ব দেননি। বৃটিশ সরকারের করোনা বিষয়ক উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য ও আচরণ বিষয়ক বিজ্ঞানী স্টিফেন রেইচার সম্প্রতি টুইটারে লিখেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ মানতে জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনে আমাদের তৈরি সকল পরামর্শ মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন বরিস জনসন।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির উপাত্ত অনুসারে, ইউরোপের মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে বৃটেনে। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ। নিশ্চিত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ। ভাইরাসটি মোকাবিলায় আগ থেকেই নানা ইস্যুতে সমালোচিত ছিল বৃটিশ সরকার। কামিংসের লকডাউন অমান্যের ঘটনায় তা আরো তীব্র হয়েছে।
লকডাউন অমান্যের ঘটনায় কামিংসের পদত্যাগের দাবি জোরালো হলে জনসন তাকে জনসম্মুখে পুরো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করত আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাগানে সংবাদ সম্মেলন করেন কামিংস। এতে লকডাউনের মধ্যে তার ২৫০ মাইল ভ্রমণের ব্যপারে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। তার দাবি, জনসন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার স্ত্রীও সেসময় অসুস্থ ছিল। তিনি জানান, জনসনের কাছাকাছি থাকায় তার নিজেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল। তিনি ও তার স্ত্রী উভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সন্তানের দেখাশোনা করার কেউ থাকবে না, এমন চিন্তা থেকেই ডারহামে ভ্রমণ করেন তিনি। সেখানে একটি আইসোলেটেড কটেজে অবস্থানের পরিকল্পনা ছিল তার। কটেজটির দেখাশোনা করতো তারই এক ভাইঝি। সেখানে অবস্থানকালেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কামিংস ও তার ছেলে। পরবর্তীতে তাদের উভয়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ডারহামে তার ভ্রমণ করা নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সেখানে তার ভ্রমণের কারণে করোনা সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি শহরটির বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সবকিছু বিশ্বাস করবেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status