অনলাইন

ভালোবাসা ঘরে ফিরুক

শাকেরা আরজু

২৩ মে ২০২০, শনিবার, ৭:২০ পূর্বাহ্ন

রাত দেড়টা বাজে। ঘুম নেই কারো চোখে। মুখ ফোটে কেউ কিছু না বললেও সবাই জানি একজনের জন্যই মন খারাপ। ছোট্ট জারার জন্য। দাদুর কাছে থাকছে করোনার সময়টা। হঠাৎ আম্মা বললেন রাস্তার পাশে একজন বৃদ্ধ শুয়ে আছেন। পাঞ্জাবি পাজামা পরা। দেখে অবস্থাশালী পরিবারের লোকই মনে হচ্ছে। তবে কেন এমন অসহায় ভাবে শুধু ফ্লোরে ঘুমাচ্ছেন!!! প্রশ্ন জাগে সঙ্গে ভীষন কষ্টও লাগলো। বুড়ো একজন মানুষ এভাবে ঘুমাচ্ছেন হাতে মাথা দিয়ে। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেলো। তাৎক্ষণিক পাটি আর কাপড়ের ব্যবস্থা করা হলো, সে রাতের মতন। বৃদ্ধ পাটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে দোয়া করলেন। যদিও তিনি জানেন না কে বা কারা সাহায্য করেছে। যাই হোক পরের দিন ভোরে আর পাওয়া যায়নি তাঁকে। পরের দিন রাতে আবার ঘুমাতে আসলেন, এবার বালিশ, কয়েল খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সবার কাছ থেকে খাবার পাচ্ছেন, সমস্যা নেই। কিন্তু ভয় ঝড়-বৃষ্টি কে। কোথায় যাবেন ঝড় হলে! গত কদিনে তাঁর স্বাস্থ্যের ও অবনতি হয়েছে। করোনার সময় তার উপরে ঝড়ের রাতে ভিজে চুপচুপে ঘুমানোর এমন দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে খোঁজ নিলাম। নাম আব্দুল্লাহ । বাড়ি ভোলা। ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন, অসুস্থ তাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ছেলেমেয়ে আছে। সবাই শিক্ষিত বলে জানান তিনি। এক মেয়ে ও এক ছেলে ঢাকায় আছেন। ছেলে মাদ্রাসার শিক্ষক। বাবার খোঁজ নেন না। ছেলে বাসায় উঠতে দেননা বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে ছেলে মেয়েরা জানান কারো বাসায় থাকতে চান না আবদুল্লাহ। শুনেন না কারো কথা। বৃদ্ধাশ্রমেও যাবেন না তিনি। বুঝলাম আব্দুল্লাহ একজন অভিমানি পিতা। করোনায় ঘরবন্দি আর কড়া শাষনে বের হয়ে পথে নামেন তিনি। মানতে চান না নিজের সন্তানের শাষন। স্বাধীনতা খোঁজেন পথে। পুরো রোজায় আবদুল্লাহ অপেক্ষা করে আছে ঈদের দিনের। ভালোবাসা আর খুশি নিয়ে আসবে ঈদ। নাতি পুতিদের নিয় কাটবে ঈদের দিনটা। সন্তানরা আসবে ঘরে ফিরিয়ে নিতে। হয়তো ভালোবাসা, মায়া, মমতার মানবিকতায় ভরে উঠবে আব্দুল্লাহার দিনগুলো। ছোটবেলায় দেখেছি সারা বছর দুই পরিবারের মাঝে ঝগড়া বিবাদ হলেও ঈদের দিনটায় এক হয়ে যায় তারা। কোলাকুলি, একে অপরের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয় মন। বিনিময় করে সেমাইয়ের বাটি। এ সময়টা তো আরো মানবিকতার। করোনায় বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে শুধু ত্যাগ ও মানবিকতা। ধৈর্য্যরা বাসা বেঁধেছে অনিশ্চিত পথে। সেসব অন্ধকারে আলো হয়ে ফুটেছে মানবিকতা। তবে কেন সব থাকতেও আবদুল্লাহদের ঠাঁই হবে পথে। কেন অভিমান ভাঙ্গিয়ে ঘরে তুলে নেবে না পরিবার! করোনাকালে আবদুল্লার মত সবার জীবনে ঈদ আসুক মানবতার পাখায় ভর করে। লেখক: সংবাদকর্মী
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status