অনলাইন

ফোনকলেই মধ্যবিত্তদের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে ডিএনএসএম'র খাদ্যসামগ্রী

রাশিম মোল্লা

২৩ মে ২০২০, শনিবার, ৫:০০ পূর্বাহ্ন

মহামারি করানো ভাইরাসের এই সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সমাজের বিত্তবানরা হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে। কিন্তু এর মধ্যেও যে আরেকটা শ্রেণি রয়েছে মধ্যবিত্ত, তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত তেমন কোন সংগঠন বা ব্যক্তি নেই বললেই চলে। অথচ এই মধ্যবিত্তরাই একসময় পাড়া-প্রতিবেশিকে সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা করেছেন। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই ভুগছেন খাদ্য সংকটে। চক্ষুলজ্জার কারণে কারো কাছে বলতে পারছেন না। চাইতেও পারছেন না তারা। বলা যায়, নিদারুণ এক দুঃসময়ে কাটছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ‘দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।

সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. হরগোবিন্দ্র সরকার অনুপের কাছে এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্ররা বিভিন্নভাবে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সাহায্য পেয়ে থাকে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা সমস্যা থাকলেও চক্ষুলজ্জার কারণে বলতে পারে না। সাধারণত ভাবা হয় তাদের কোন সহায়তা লাগবে না। সবাইমনে করে তাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা জানি, করোনা মহামারিতে অনেক প্রবাসীর কাজ নেই, আর মধ্যবিত্তের ঘরে খাবার নেই। তাই তাদের কথা চিন্তা করে আমাদের এই উদ্যোগ।

সূত্র জানায়, গত ১৬ই মে থেকে শুরু হয়েছে ডিএনএসএমের মধ্যবিত্তদের নিয়ে প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় দোহার নবাবগঞ্জের প্রায় ৩০০ মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন চাইলেই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা মধ্যবিত্তের বাসায় পৌছে দিচ্ছে এসব খাদ্যসামগ্রী। প্রায় ২০ কেজি খাদ্যসামগ্রীর এই প্যাকেজে থাকছে ১২ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি তেল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পিয়াজ, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ প্যাকেট সেমাই, ১টি সাবান।

কথা হয় দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট এর সভাপতি তারেক রাজীবের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গত ৪ঠা মে সংগঠনের পক্ষ থেকে হতদরিদ্রদের মাঝে ৪৫০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করি। এরপর চিন্তা করি, সমাজের হতদরিদ্রদের তো বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ত্রাণসামগ্রী দিচ্ছেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব ত্রাণসামগ্রী নিতে কারো কাছে বলতে পারছেন না। হঠাৎ ৩রা মে এমপি সালমান এফ. রহমানের ভাতিজা ও তার আস্থাভাজন মুশফিকুর রহমান লিমন ভাই আমাকে ফোন দিয়ে মধ্যবিত্তদের নিয়ে নতুন একটা প্রোগ্রাম শুরু করার অনুরোধ করেন এবং একই সাথে ২৫ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে এই প্রোগ্রাম শুরু করতে অনুরোধ করেন। এরপর পুরোদমে শুরু হয়ে যায় আমাদের কার্যক্রম। ব্যাপক সাড়া পাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে। এরপর পর্যায়ক্রমে তানভীর হোসেন সানু মোল্লা, ইভো চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার সোহেল, হাবিবুর রহমান হেলাল, নাইম হোসেন, নুরুল হক ব্যাপারী, নয়াবাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নানসহ দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহ করা হয়। সংগঠনের তৌহিদ শরীফ রাত দিন পরিশ্রম করতে থাকে।

এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন কেউ অভুক্ত না থাকে। এর বাইরে যারা লজ্জ্বায় বলতে পারেন না, তাদের জন্য দোহার নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট এর এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় এবং আমাদের কাজকে এই উদ্যোগ সহজ করেছে। আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার প্রত্যাশা করি। ফোনকল যাচাই বাছাই করে দোহার ও নবাবগঞ্জের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মাঝে এই খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ফলে সমাজের সব অভাবী মানুষের ঘরে খাদ্য পৌঁছে গেলো।

দোহার নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট এর সহ সভাপতি জানান, সকল দূর্যোগে দোহার নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায় অভাবী মানুষের পাশে থাকার। সে আলোকে গত ২২শে মার্চ আমরা দোহার নবাবগঞ্জে ত্রাণ বিতরণ শুরু করি। ওই সময় প্রায় ১১৭ পরিবারে ত্রাণ দেয়া হয়। এরপর ২৬ শে মার্চ দোহার নবাবগঞ্জে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম হাতে নেই। এরপর ১৯শে এপ্রিল ৪৩৩ পরিবারের মধ্য ত্রাণ বিতরণ করি। এছাড়া দোহার উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১০০ পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status