অনলাইন

গার্মেন্টসকর্মীরা কী করোনাজয়ী?

খালেদ মুহিউদ্দীন, ডয়চে ভেলে

৫ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

বনে বসে কান পেতে রাখি দেশে, যতদূর চোখ যায় দেশই দেখতে ইচ্ছে করে৷ এই দেশ দেখা ভাল কি মন্দ ভাল জানি না৷ আমার কি গ্যেটের মত ভাবা উচিত, সমগ্র পৃথিবীই আমার সম্প্রসারিত মাতৃভূমি? ভাবতে পারলে ভাল হতো৷
কিন্তু দুনিয়া জুড়ে শ দুয়েক মানচিত্রের আড়াল আর একেক দেশের একেক নিয়মে তা আর ভাবতে পারি কই? সীমানা পেরিয়ে হরেক আইন আবার এইখানে এই ইউরোপে প্রায় ৩০ দেশের জন্য এক আইন দেখতে দেখতে এক রকম অভ্যস্ততা বা বলা ভাল মানসিক স্থবিরতা প্রায় মানিয়ে নিয়েছি আমি৷

কিন্তু আজ সারাদিন দেশ দেখে ভীষণ অসহায় লাগছে৷ বলে রাখা ভাল, দূরে আছি বলে চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে না কিন্তু দেখতে হচ্ছে সবই এমনকি চোখ বন্ধ করেও৷

জার্মান সময় বাংলাদেশ থেকে চার ঘণ্টা পিছিয়ে আছে, তাই প্রায় মাঝরাত থেকে বলা উচিত গতকাল রাত থেকে দেখছি ঢাকা আর চট্টগ্রামে ফিরছে মানুষ৷ দলে দলে, বাসে বা ট্রাকে মুরগিবোঝাই হয়ে এমনকি পায়ে হেঁটে৷ ফিরছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা৷ শনি বা রোববার থেকে যে খুলে যাচ্ছে কারখানা৷ ফিরতেই হবে৷
সারা দুনিয়ার সব ভাল ভাল জায়গা লকডাউন হচ্ছে, চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, স্কুল কলেজ সব বন্ধ করে দিয়েছে আমাদের কিছুই হচ্ছে না! স্কুল বন্ধ, অফিস বন্ধ এমনকি বাইরে বেরোলে ডাণ্ডা বা কান ধরানো সবই করা হলো একে একে৷ ঘোষণা হল দুই সপ্তাহের বন্ধ৷ ঘরে থাকুন, বাইরে বের হবেন না৷ সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং করুন৷

সেই বন্ধে চলে যাওয়ার সময়ও আমার আপনার আদরের ফেসবুকে দারুণ ঘৃণা কুড়িয়েছিল ওরা৷ সরকার দুই সপ্তাহের ঘোষণা করলো কী করলো না হুড়মুড়িয়ে ছুটি কাটাতে চলে যাচ্ছে ওরা৷ দেখেন কীভাবে চলে যাচ্ছে৷

হ্যালো৷ জ্বি আপনাকেই বলছি৷ ওরা চলে যাবে না তো কী করবে? গাদাগাদির ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরে থেকে শতেক জনে এক বাথরুম আর শদুয়েক জনের রান্নাঘরে কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশন হবে? কী ভাবি আসলে আমরা? নাকি আমরা জানিই না যে, এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো ঢাকায় প্রপার ঘরে থাকে না?

ওরা চলে যায় কারণ এই শহরে ওদের ঘর নেই, আছে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই৷ ওরা ফিরে আসে কারণ ওদের শুধু বাঁচলেই হবে না বাঁচাতে হবে মুল্যবান চাকুরিখানাও৷ পেতে হবে ঘাম আর শ্রমের দাম৷
এই দেখেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে আর সব কিছু ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ, শুধু খুলে যাচ্ছে তৈরি পোশাকের কারখানা৷ আজও দেখলাম বড়সাহেবরা আমাদের বলছেন আমরা যেন কাজ ছাড়া বাইরে না যাই, তিন চারদিন আগেই দেখেছি কড়াকড়ি আরোপ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আর সেনাবাহিনী হচ্ছে কঠোর৷ কারণ এই দুই সপ্তাহ নাকি সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার৷ গার্মেন্টসকর্মীদের কী সংক্রমণের ভয় নেই, ওরা কী করোনাজয়ী? বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েই যাদের অর্ডার আছে তারা কারখানা খোলা রাখতে পারবেন৷ কী এই যথাযথ ব্যবস্থা? এই যথাযথ ব্যবস্থা আর কোনো ক্ষেত্রে নেওয়া গেল না কেন? নাকি ওরা আমাদের জন্য টাকা আনে সেই টাকায় আমাদের ফ্লাইওভার হয় স্যাটেলাইট হয় বলে ওদের কাজ করেই যেতে হবে?

সরকারের যদি এই কারখানাগুলো চালু রাখতেই হতো তাহলে আমাদের এটাও দেখাতে হতো যে মালিকেরা তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছেন? আর তা নিশ্চিত না করতে পারলে ওদের সঙ্গে সংহতি রেখে খুলে দেওয়া উচিত ছিল অফিস আদালত ব্যাংক বীমা বাজার স্কুল সবকিছু৷ ঝুঁকি শুধু ওরা নেবে কেন? ওদের কী অপরাধ?
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status