অনলাইন

করোনা সংকট

'শুধু নেতিবাচক নয়, অভিবাসন খাতে ইতিবাচক দিকও রয়েছে'

রোকনুজ্জামান পিয়াস

৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১২:৪২ অপরাহ্ন

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস শুধু জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই দুরযোগ সৃষ্টি করছে না। বিশ্ব অর্নীতির নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি সেক্টর হলো অভিবাসন। তবে এটি যে শুধু নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নয়, এর ইতিবাচক একটি দিকও রয়েছ।  শনিবার ‘করোনা সংকটে বাংলাদেশী অভিবাসীর সুরক্ষা: রামরু-র সুপারিশমালা’ শীর্ষক অনলাইন প্রেস কনফারেন্সে এসব মন্তব্য করা হয়।

অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শীর্ গবেষণা সংস্থা রিফিউজি ফর মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট এন্ড রিসার্ ইউনিট (রামরু) এই কনফারেন্সে আয়োজন করে। কনফারেন্সে ভিডিওবার্তায় লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সংস্থাটির চেয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী।     

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস শুধু জনস্বাস্থ্য দুরোগই নয়, অভিবাসন ক্ষেত্রেও দীর্মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে এর সব ফলাফলই নেতিবাচক হবে না। করোনা ভাইরাসের কারণে পরবর্তী কিছু নতুন কাজের সুযোগও সৃষ্টি হবে। জার্মান মেডিকেল স্টাফরা এর স্বল্পতা মেটাতে সেদেশের অভিবাসী ও শরনার্দের ব্যবহার করছে। যেসব অভিবাসীদের নিজ দেশে চিকিৎসা ডিগ্রি রয়েছে কিন্তু অভিবাসনের দেশের অনুমোদন নেই করোনা চিকিৎসাসেবায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। প্রায় তিন শতাধিক শরণার্তী চিকিৎসা কর্মী এখন জার্মানীতে করোনা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত। আমেরিকা, জাপান, কানাডা এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ানি দেশ তাদের মেডিকেল সামগ্রী, ডাক্তার নার্স , মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট্রি এবং ল্যাব টেকনিশিয়ানের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা ভবিষ্যতে অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদের এখনই বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এ সময় তিনি করোনা সংকটে দেশে ফিরে আসা এবং বিদেশে অবস্থান করা অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষায় বেশ কয়েকটি সুপারিশমালা তুলে ধরেন।

ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অভিবাসীরা গভীর সংকটে পড়েছেন। তারা উদ্বেগের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে। সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় এক লক্ষ ৫০ হাজার অভিবাসী আটকা পড়েছেন। যাদের বৈধ ভিসা নেই এমন দীর্ময়োদী অভিবাসীরা কাজ এবং আয়ের অভাবে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।

অনলাইন কনফারেন্সে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের উৎস হিসেবে মূলত অভিবাসীদেরকেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। অন্যান্য জনগোষ্ঠি যেমন ব্যবসায়ী, ভ্রমণকারী, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্রতদের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। অনেক সময় তারাও সেভাবে কোয়ারেন্টিনের ভেতরে আসেননি কিন্তু সেটি নিয়ে তোলপাড় হয়নি।

অনলাইন কনফারেন্সে বেশ কয়েকটি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে জরুরি সুপারিশগুলো হলো-

১. দেশে এবং বিদেশে যারা করোনায় প্রাণ হারিয়েছে তাদের জন্য আগামী রোববার সকাল ৯টায় দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ১ মিনিট নীরবতা পালন করা। একইভাবে বিদেশে কর্হীন অভিবাসীদের পরিবারের জন্য বিনাসুদে ঋণ ও বিশেষ ক্ষেত্রে অনুদানের জন্য তহবিল গঠন করা।

২. অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেইসঙ্গে নিজেরা কি ধরণের ব্যবস্থা নিতে পারে তা দূতাবাসগুলোকে বাংলা ভাষায় অবহিত করার ব্যবস্থা নেয়া।  যথাযথ মাস্ক এবং বিধিসম্মত পোশাকসহ সুরক্ষার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

৩. স্থানীয়  পর্যায়ে  অভিবাসীদের  নিয়ে  কর্মরত বেসরকারি সংস্থাসমূহের টেলিফোনের মাধ্যমে অভিবাসী পরিবারগুলোতে তাৎক্ষণিক চাহিদা নিরূপন করা প্রয়োজন।

৪. বায়রার সদস্যদের কাছে থেকে চাঁদা নিয়ে একটি জরুরী তহবিল গঠন করা। সেই তহবিল হতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে, টাকা পরিশোধ করেছে কিন্তু যেতে পারেনি এমন পরিবারকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। তাছাড়া এখনো যাদের কাগজ প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়নি তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। একইসঙ্গে করোনা সংকট শেষ হলে যাদের নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়েছিল তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নতুন কোন খরচ যুক্ত না করে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের মাধ্যমে বিদেশে অব ̄অবস্থানর শ্রমিকদের  খোঁজ  খবর  নেয়ার  জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে  বাংলাদেশ মিশন এবং মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা দেবে।

৫. অবিলম্বে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ফেরত আসা অভিবাসীর ম্যাপিং ও রিটার্নী ডাটাবেজ তৈরী করা।
৬. দীর্ঘমেয়াদে রেমিটেন্স প্রবাহকে গতিশীল রাখার জন্য সরকার বর্তমানে যে প্রণোদনা দিচ্ছে করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে সেই প্রণোদনার হার বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া।

৭. প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ওয়েজ আর্নার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ড অভিবাসীদের শ্রমগ্রহণকারী দেশে সেবাদানের জন্য অর্থ সরবরাহের উদ্যোগকে সহায়তা করার জন্য সরকারকে তার বাজেট থেকে ম্যাচিং গ্রান্ট প্রদান করা।

৮. মধ্যপ্রাচে কর্মরত বাংলাদেশী নারীরা যেন কোনভাবেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়া করোনা আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্ না আসেন বা তাদের সেবার কাজে যেন ব্যহত না হন সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৯. ইতিালি ফেরত অভিবাসীদের অভিজ্ঞতাকে করোনা প্রতিরোধের কাজে লাগানো।

এছাড়া এই কনফারেন্সে দীর্ মেয়াদি করণীয় সম্পর্ণ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো-
১. জরুরি অবস্থা নির্শনা বা নীতিমালা তৈরি
২. দুরযোগের কারণে চাকরিচ্যূত অভিবাসী কর্দের নায্য পাওনা মেটানো
৩. করোনা-উত্তর অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার রোধ
৪. ফিরে অভিবাসীদের দক্ষতার ব্যবহার
৫. দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status