মত-মতান্তর

পৃথিবীর প্রতিশোধ নয়তো?

শামীমুল হক

৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১:৪১ পূর্বাহ্ন

নির্বাক পৃথিবী। নির্মল পৃথিবী। পৃথিবীর দেয়া আলো বাতাসে বেঁচে আছে মানুষ। মানুষের জন্যেই পৃথিবীর সৃষ্টি। কিন্তু যে পৃথিবী মানুষকে অকৃপন দিয়ে যাচ্ছে, সে পৃথিবীকে কি মানুষ স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে? অত্যাধুনিক, আধুনিকতার নামে পৃথিবীকে বিষাক্ত করে তুলেছে মানবজাতি। পারমানবিক, আনবিক, জৈব যুদ্ধে নির্মল বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত বিষ। শুধু বাতাস কেন? মানুষের অমানবিক অত্যাচার চলে প্রকৃতির উপর। সাগর, মহাসাগর্‌ পাহাড়, পর্বত, বন, জঙ্গল, মরুভূমিও এর বাইরে নয়। নিজেদের শক্তির মহড়া দেখাতে গিয়ে পৃথিবীকে দিন দিন করে তুলছে বসবাস অযোগ্য। এমনটা হওয়ার কথা ছিল কি?

পরম শক্তিশালী মানবজাতি পৃথিবীতে পা রেখেই বলে-  কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। মানা নেই বলেই মানুষ হয়ে উঠে বেপরোয়া। বেরসিক। পৃথিবীকে বানায় খেলার পুতুল। সাহস আর ক্ষমতার ভান্ডার হয়ে উঠে একেকজন। নিজেকে অসীম সাহসী ও ক্ষমতাধর প্রমাণে হেন কাজ নেই না করে। কারো কারো আবার এমনটা শখে পরিনত হয়। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ভেবে সব দেখার পণ করেন। সকলকে কিভাবে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেন তার চেস্টা চালান নিষ্ঠুরভাবে। এতে বিলিয়ন, মিলিয়ন ডলার খরচ হোক তাতে কি? পৃথিবীও গোল্লায় যাক। বাতাস দূষিত হোক। বিষ ছড়াক। কিছুতেই যায় আসে না তার। বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে পৃথিবীর নির্মল বাতাসকে বিষাক্ত করতেই হবে। আর যাই হোক, বিশ্বতো তাকে গুনবে। ক্ষমতাধর বলবে। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই চলছে এমনটা। বিজ্ঞানের যুগে এসে তা বহুগুণে বেড়ে গেছে।বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরিতে কজন এগিয়ে এসেছে? আসবেই বা কেন? নিজেকে তো জ্ঞানী, গুণী, ক্ষমতাশালী প্রমাণ করতে হবে। তাদের এ খায়েশ ডেকে আনছে নিষ্ঠুর মৃত্যুকে। তারাই পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে নিজ হাতে হত্যা করছে। দূষিত গ্যাস ছেড়ে করছে উল্লাস নৃত্য। সবাই হয়ে উঠছে আত্মপ্রেমিক। সবাই হারিয়ে যেতে চান স্বর্গ রাজ্যে। নিজেকে ক্যারিশম্যাটিক প্রমাণ করতে কত যে কসরত। আর কসরত করতে করতে নিজেকে তৈরি করেন হিরো হিসেবে। নিত্য নতুন আবিষ্কারে মন দেন। যেসব পৃথিবীকে ধ্বংস করার আবিষ্কার । আর তারা মসনদে বসে মুচকি হাসেন। কখনো ভাবেন না এ  হাসি কান্না হয়ে ফিরে আসতে পারে। জীবনকে পঙ্গু করে দিতে পারে। অন্ধ করে দিতে পারে সবকিছু। দেশে দেশে এমন আবিষ্কারের নেশা, ক্ষমতার নেশা পৃথিবী আর কুলাতে পারছেনা। ভার বইতে পারছে না। তাতে কি? আমিতো বিশ্বের সর্বশক্তিমান হিসেবে আবির্ভূত হলাম। সবাই কুর্নিশ করবে। ক্ষমতাধর হয়ে পৃথিবীর এমাথা থেকে ওমাথা অস্থিতিশীল করে তুলব। একজনকে ছাড়িয়ে যেতে অন্যজন নামে আরো একধাপ উপরের আবিষ্কারে। এই ক্ষমতা দেখানোর খেলায় পৃথিবী হয়ে উঠেছে অসহিষ্ণু। যুগে যুগে কত বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়েছে পৃথিবীতে, এর ইয়ত্তা নেই। কার্বন মনোঅক্সাইড, যা বাতাসের তুলনায় হালকা। বর্ণহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন এই গ্যাস। যা মানুষসহ সকল প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। রয়েছে হাইড্রোজেন সালফাইড। এ গ্যাস রাসায়নিক যৌগ। এটিও
চরম বিষাক্ত, দাহ্য এবং বিস্ফোরক পদার্থ। পৃথিবীর সবচাইতে বিষাক্ত গ্যাস নার্ভ গ্যাস। এ গ্যাসের মাত্র এক গ্রামের একশত ভাগের এক ভাগও কাউকে হত্যা করার জন্য যথেস্ট। এ বিষাক্ত গ্যাসকে জাতিসংঘ গনবিধ্বংসী মরনাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে। পৃথিবীতে এমন বহু বিষ আছে মানুষের তৈরি। কোনটি নীরব ঘাতক, কোনটি প্রয়োগ করার জন্য তার সাথে একই স্থানে থাকার ও প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা এখনো স্বাক্ষী হয়ে আছে। সেই পরমানু বোমার ধ্বংসলীলার কথা মনে করে এখনো মানুষ কেঁপে উঠে। গত কবছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চলছে বারুদের আগুন। বিশ্বব্যাপী পারমানবিক বিদ্যুতের নির্গত বায়ু, কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ নির্মল বাতাসকে করে তুলেছে বিষাক্ত। এসব সহ্য করতে না পেরে হয়তো পৃথিবী মাঝে মাঝে হয়ে উঠে প্রতিশোধ পরায়ন। যা বিভিন্ন সময় মানুষের উপর আছড়ে পরে। আল্লাহ মালুম হয়তো বর্তমানে তা করোনারুপে থাবা মেলেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status