অনলাইন

চালের দাম কমার লক্ষণ নাই, হতাশায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা

স্টাফ রিপোর্টার

২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবায় স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অচল হয়ে পড়েছে দেশের নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের জীবন চাকা। টানা ছুটিতে কার্যত লকডাউন রাজধানীসহ সারা দেশ। সেই সঙ্গে নানান বিধিনিষেধে কর্মহীন হয়ে পড়েছে রাজধানীর স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরাও। এ অবস্থায় 'করোনা আতঙ্ককে' পুঁজি করে রাজধানীর বাজারে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে চালের দাম। এ নিয়ে রয়েছে ত্রিমুখী অভিযোগ। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, করোনা আতঙ্ককে পুঁজি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষছেন মিল মালিকদের। তারা বলছেন, লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিবহন ও শ্রমিক সংকটের কারণ দেখিয়ে মিলাররাই চালের সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে মিলাররা বলছেন, চালের কোন সংকট নেই। এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে ব্যবসায়ীরাই। এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে , বাজারে চালের কোন সংকট নেই, সংকট মূলত ক্রেতার। ইতিমধ্যেই ক্রেতা সংকটের কারণে কাওরান বাজারের অধিকাংশ চাল ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান বন্ধ করে বাসায় অবসর সময় পার করছেন।

কাওরান বাজারের বাদশা রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী হেলাল হোসাইন মুন্না জানান, গত তিনদিন যাবত তিনি দোকান বন্ধ করে বাসায় বসে আছেন। তার নওগাঁ জেলায় মিলও রয়েছে। মুন্না বলেন, করোনা আতঙ্কে অনেক ক্রেতারাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চাল ক্রয় করেছেন। যার দরকার ১ বস্তা সে নিয়েছেন ৪-৫ বস্তা। সেইসব ক্রেতারা এখন বাজারে আসছেন না। এতেও বাজারে চালের কিছুটা সংকট তৈরি করেছে। সেইসঙ্গে ক্রেতারও সংকট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। এখন বাজারে আসছেন শুধু কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ। তারাই এখন ভুক্তভোগী। বাজারে মাত্র ৫-৬ টি ছোটখাটো দোকান ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। বাজার থেকে বাসা দূরে হওয়ায় যাতায়াতও সমস্যা হয়, তাই আপাতত আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। তবে সহসাই দাম কমে যাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। বলেন, দেশে নতুন চাল ওঠা শুরু হলে দাম এমনিতেই কমে যাবে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আর দাম না বেড়ে বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

রাজধানীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে দাম না বাড়লেও ইতিমধ্যেই কয়েক দফা বেড়েছে চালের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি চালে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের দৈনন্দিন বাজারদরের তালিকায় এই দাম বাড়ার তথ্য তুলে ধরেছে। দাম বেড়ে প্রতি কেজি নাজিরশাইল/মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম/লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকা এবং ইরি/স্বর্ণা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিছু ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চাল ক্রয়ের কারণে দাম বেড়েছে। হাতিরপুলের চাল ব্যবসায়ী রতন বলেন, করোনা আতঙ্কে বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত চাল কিনেছেন। তাই দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে ক্রেতাদের আশঙ্কা, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দাম আরো বাড়তে পারে। তাই সহসাই কমছে না চালের দাম। এতে স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনধারণ আরো কষ্টকর হয়ে পড়বে। ভোক্তাদের অভিযোগ, চাহিদা বাড়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং না করায় অসৎ ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

রাজধানীর মধুবাজারের একটি ভবনের সিকিউরিটি গার্ড মুকুল হোসেন। তিনি বলেন, সবকিছু বন্ধ হলেও আমাদের চাকরির ছুটি নেই। করোনার কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। অনেকেই বেশি করে চাল কিনেছেন। কিন্তু আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ আমরাতো বেশি করে কেনার সামর্থ্য রাখি না। বর্তমানে আমাদের মতো গরীব মানুষেরা হতাশার মধ্যে রয়েছেন। আমি ২/৩ কেজি করে কিনে নিজে রান্না করে খাই। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কেনাকাটা করতে হিমশিম খাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status