করোনা আপডেট

করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু

বাংলারজমিন ডেস্ক

১ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ১২:১৪ অপরাহ্ন

দেশের বিভিন্ন জেলায়  করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আজ বুধবার আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১, সাতক্ষীরায় ১, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ১, শরীয়তপুরে ১ ও নড়াইলে ১জন রয়েছেন। এর আগে গত ৩দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৯ জন মারা যান। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, ‘জ্বর ও শ্বাসকষ্ট’ নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় তিনি করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মৃত যুবক বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার নবীনগর গ্রামের। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে যুবককে এ হাসপাতালে ভর্তির পর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। “জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে হাসপাতালের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তবে তার করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ছিলেন না। তিনি হাঁপানির রোগী; সাথে জ্বর হয়েছিল। রাতেই তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি নিয়ে রাশিদা খাতুন (২৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। বুধবার ভোরে কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামে বাবার বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের ফতেপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন বলেন, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যার দিকে রাশিদা খাতুনের জ্বর শুরু হয়। ২৭ মার্চ তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে বন্দকাটি গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। ২৮ মার্চ স্থানীয় পল্লি চিকিৎসককে দেখান। কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় স্থানীয় একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অতপর বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান।  

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আলভী হোসেন নামে তিন বছরের এক শিশু মারা গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুটি নিজ বাড়িতে মারা যায়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা গেছে এমন সন্দেহে স্থানীয় ছয়টি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সে উপজেলার আমুয়া পূর্বপাড় সর্দারপাড়ার শহীদ সর্দারের ছেলে। কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, কয়েক দিন ধরে আলভী জ্বরে ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এ অবস্থায় মারা যাওয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আলভীর বাড়ির ছয়টি পরিবারের ৩০ জনকে ১৪ দিন হোম কোয়ারন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা এক যুবকের (৩৪) মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বাড়ি নড়িয়া উপপজেলায়। তিনি পেশায় শ্রমিক ছিলেন। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি থাকায় ওই যুবককে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ১৯শে মার্চ কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনির আহমেদ খান বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল তার। শ্বাসকষ্ট থাকায় তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসা দেয়া অবস্থায় তিনি মারা যান। শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এস.এম. আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হবে। আইইডিসিআর থেকে ফলাফল পেতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। তার পরিবার যে জায়গায় দাফন করতে চায়, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সেখানেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরা লাশ দাফন করে আসবেন। এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ওই যুবক নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্র একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একজন শ্রমিক। দীর্ঘদিন যাবত যক্ষ্ম রোগে ভুগছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তার বাড়ির আশপাশের পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

নড়াইল  প্রতিনিধি জানান, নড়াইলে করোনা রোগের উপসর্গ নিয়ে শওকত আলী (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ডায়রিয়া, গা ব্যাথা ও বমিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছু সময় পর মারা যান। শওকত নড়াইল পৌরসভার  নড়াইল গ্রামের ওমর আলীর ছেলে। তিনি নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ বাজারে সুপারির ব্যবসা করতেন। ওই রাতেই শওকত আলীর লাশ সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের স্বজনদের কাছে পৌছে দেয়া হয়। মৃত শওকত আলীর পরিবারের সদস্যরা জানান, শওকতের শরীরে এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গা ব্যাথাসহ করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর ঢাকায় করোনা সংক্রান্ত আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন দেয়া হলেও কোনো সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ সেবন করানো হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। এক পর্যায়ে অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার রাতে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির ২০ মিনিটের মধ্যে শওকত মারা যান। নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, রোগির শ্বাসকষ্ট ও বমি ছিল। জ্বর মাঝে মাঝে আসছে, আবার চলে গেছে। হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়েছে। নড়াইল সদর হাসপাতালের ডাক্তার আব্দুস শাকুর জানান, মৃত শওকত আলীর ব্যাপারে সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করা হবে কি-না তিনি (সিভিল সার্জন) বলতে পারেন। এ ব্যাপারে  সিভিল সার্জন ডাক্তার আব্দুল মোমেনকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status