ফেসবুক ডায়েরি

অর্থনৈতিক প্রণোদনায় সাধারন মানুষের জন্যে কী আছে?

আলী রীয়াজ

২৯ মার্চ ২০২০, রবিবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

কোরোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর অর্থনীতি এখন সংকটের মুখে। বৈশ্বিক মহামন্দার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। অনুমান করা হচ্ছে এই অবস্থা মোকাবেলা করতে দরকার হবে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থনীতির এই সংকট যে কেবল বিশেষ কোনও সেক্টরের ওপরে প্রভাব ফেলবে তা নয়। বরঞ্চ এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন প্রত্যেকটি দেশের সাধারন মানুষ, দরিদ্র-কর্মজীবি মানুষেরা। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাঁদের জন্যে নেমে এসেছে অভিশাপ। এই অবস্থা মোকাবেলায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষনা করেছে। সরকারগুলোর ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে একাদিক্রমে শিল্প ও রফতানী খাত রক্ষা এবং সাধারন নাগরিকদের সাহায্য করা।
বাংলাদেশে আমরা প্রায়শই মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা শুনে থাকি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ হয় ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে কিংবা হবে; একই রকম ধারণা দেয়া হয় মালয়েশিয়া সম্পর্কে। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান আলোচিত হয় বিভিন্ন কারণে, অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এই পটভূমিকায় গত কয়েক দিনে এই সব দেশের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি সাধারন নাগরিকদের জন্যে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার ঘোষিত প্যাকেজ জিডিপি’র যথাক্রমে ১১% এবং ১৭%।
সিঙ্গাপুরের প্যাকেজ হচ্ছে মোট ৩৮.৬ বিলিয়ণ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে জব সাপোর্ট স্কিম। এর আওতায় সরকার কর্মচারীদের মজুরির ২৫ শতাংশ দেবেন, এতে করে প্রত্যকে ৩২২৫ ডলার পর্যন্ত দেয়া হবে, নয় মাস। ফুড সার্ভিস সেক্টরে যারা আছেন তাঁদের মজুরির ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দেয়া হবে। বিমান পরিবহণ এবং পর্যটন খাতের ক্ষেত্রে এটি ৭৫ শতাংশ। যারা সেলফ-এমপ্লোয়েড তাঁদের আগামী নয় মাস প্রতি মাসে সিঙ্গাপুরের ডলারে পাবেন ১১০০ ডলার। এই জন্যে ব্যয় হবে ১.২ বিলিয়ন ডলার। যার যার আয়ের ওপরে নির্ভর করে প্রতিটি হাউসহোল্ড পাবে ৩০০ থেকে ৯০০ ডলার। স্বল্প আয়ের মানুষ গ্রোসারি বা কাঁচা বাজারের জন্যে ভাউচার পাবেন। এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পের জন্যে দেয়া বড় আকারের সাহায্য এবং কর রেয়াত, কম সুদের ঋণ ইত্যাদি ব্যবস্থার বাইরে সরাসরি নাগরিকদের জন্যে।
মালয়েশিয়ার সরকার যে প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন তার মোট ব্যয় হচ্ছে মার্কিন ডলারে ৫৭.৩ বিলিয়ন। এর অর্ধেক– মালয়েশিয়ার অর্থে যা ১২৮ বিলিয়ন রিঙ্গিত - রাখা হয়েছে মালয়েশিয়ার নাগরিকদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ইত্যাদির জন্যে। যারা প্রাইভেট গাড়ি চালক তাঁদের প্রত্যেকের জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে এককালীন ৫০০ রিঙ্গিত। স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রতিমাসে যে বিশেষ এ্যালাউন্স পান তা ৪০০ রিঙ্গিত ছিলো তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০ রিঙ্গিত, এটা যতদিন মহামারী শেষ না হচ্ছে ততদিন পাবেন। যে সব পরিবারের আয় ৪০০০ রিঙ্গিতের নীচে তাঁরা ২৬৬ রিঙ্গিত পাবেন, দুই ভাগে। ন্যাশনাল কেয়ারিং এইড স্কীমের আওয়াত যারা স্বল্প আয়ের (বি৪০ এবং এম৪০ গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত) তাদের এককালীন অর্থ দেয়া হবে, যার জন্যে ব্যয় হবে ১০ বিলিয়ন রিঙ্গিত। পুলিশ এবং ইমিগ্রেশন কর্মচারীরা পাবেন প্রতিমাসে অতিরিক্ত ২০০ রিঙ্গিত। ছয়মাসের জন্যে বিদ্যুত বিল হ্রাস করা হয়েছে, পাবলিক হাউসিংয়ের ভাড়া তুলে দেয়া হয়েছে, পেনশনভোগীদের জন্যে আলাদা সুবিধা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন রিঙ্গিত।
পাকিস্তানের ঘোষিত প্যাকেজে দেশের শ্রমিক বা লেবারারদের জন্যে ২০০ বিলিয়ণ রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে।সরকার প্রাইভেট কোম্পানীর সঙ্গে কাজ করছে যেন তাঁরা কর্মচারীদের লে-অফ না করে। স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫০ বিলিয়ণ রুপি, যা চারমাসে বিতরণ করা হবে। প্রত্যেক পরিবার পাবে ৩০০০ রুপি। সবাই যাতে খাবার এবং অন্যান্য জিনিষ পান সে জন্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানগুলোকে সাহায্য করতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন রুপি। কৃষকদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে সরকার গম সংগ্রহের জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৮০ বিলিয়ন রুপি। খাদ্য দ্রব্য যেমন গম, ডাল, এবং চিনির ওপরে কর হয় তুলে দেয়া হবে বা কমানো হবে। পেট্রলিয়াম, ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম ১৫ রুপি কমানো হয়েছে, এতে সরকার ব্যয় করবে ৭৫ বিলিয়ন রুপি। ৩০০ ইউনিটের নিচে যার বিদ্যিত ব্যবহার করেন তাঁরা তাঁদের বিল আগামি তিন মাসে কিস্তিতে দিতে পারবেন। এতে সুবিধা পাবেন ৮১ শতাংশ মানুষ। ৫০ বিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর জন্যে।
এবার আপনারা বাংলাদেশের ঘোষিত স্টিমুলাস প্যাকেজটা পড়ে দেখতে পারেন।

(আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো। লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status