প্রথম পাতা

করোনা মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এটি একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। যে যেখানে আছেন সেখানে অবস্থান করুন। কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিং করা হবে। গতকাল সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তার এ ভাষণ রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণজুড়েই ছিল করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ, পরিকল্পনা ও জনগণের করণীয় নিয়ে দিক নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচহাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়-  সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। আমাদের উপরও এই আঘাত আসতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। এই সংকটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যাঁরা করোনা ভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ- আপনাদের হোম কোয়ারেন্টিন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। মাত্র ১৪দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে।

যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া সোসাইটি অব ডক্টরস তাদের ৫০০টি নম্বর উন্মুক্ত করে দিয়েছে। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ঐসব নম্বরে যোগাযোগ করুন। সরকার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন। তবে, আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে। সেজন্য আপনার পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দিন। তাঁকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। তাঁকে ভাইরাসমুক্ত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করুন। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। সব সময় খেয়াল রাখুন আপনি, আপনার পরিবারের সদস্যগণ এবং আপনার প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন। আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।
 
তিনি বলেন, জানুয়ারি মাস থেকেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।  করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩টি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  ঢাকায় ১০ হাজার ৫০ টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৪শে মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যগণ সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে যারা জনগণকে সেবা প্রদান করবেন।

তিনি বলেন, এ সংকটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাষানচরে ১ লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবাও দেয়া হচ্ছে। আমি নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।

 শেখ হাসিনা বলেন, আজ সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। তবে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের সরকার প্রস্তুত রয়েছে। আমরা জনগণের সরকার। সব সময়ই আমরা জনগণের পাশে আছি। আমি নিজে সর্বক্ষণ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status