বিশ্বজমিন
ভারত কি স্টেজ থ্রি’র দিকে চলেছে!
কলকাতা প্রতিনিধি
২৩ মার্চ ২০২০, সোমবার, ৮:১৪ পূর্বাহ্ন
করোনা আক্রান্ত হয়ে ভারতে মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার মহারাষ্ট্রে মারা গেছেন একজন। বিহারের পাটনাতেও একজনের এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে ৩৫৯-এ গিয়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে পুনের একটি ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্যকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের। সেখানকার ৪০ বছরের এক নারী বা তার পরিবারের কেউই সামপ্রতিক অতীতে বিদেশে যাননি। তবে ওই নারী গত ৩রা মার্চ নবি মুম্বইয়ের ভাসি’র একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি ট্যাক্সিতে মুম্বই যান বলেও খবর। সবই খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। আপাতত তিনি ভেন্টিলেশনে আছেন। চেন্নাইয়েও এমন একটি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এসবই কি গোষ্ঠী সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করছে? গবেষকদের আশঙ্কা, আগামী চতুর্থ এবং পঞ্চম সপ্তাহে ভারতের পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মারণ এই ভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। গোষ্ঠী-সংক্রমণ হলে বিদেশ থেকে আসা কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি বা রোগীর সংস্পর্শে না এসেই একজন সুস্থ মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই ভারতের মতো দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দেশে করোনা সংক্রমণ তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেলে তা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। ভারতে যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ব্যাপকভাবে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসক মহল। পুনে ও চেন্নাইয়ের দুটি সংক্রমণের নজির দেখিয়েই কোনো কোনো চিকিৎসকের দাবি, ভারতে করোনার প্রকোপ বিপজ্জনক ‘তৃতীয় পর্যায়ে’ (স্টেজ থ্রি) পৌঁছে গিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের অর্থ গোষ্ঠী-সংক্রমণ। গত দু’দিনে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার উদাহরণও দিচ্ছেন এই চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ভারত হয় তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে বা তার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, স্টেজ থ্রিতে কেউ কোনো উৎস থেকে সংক্রমিত হলেন, তা জানা যায় না। কিন্তু ভারতে এযাবৎ যত জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশেরই সংক্রমণের উৎস জানা গিয়েছে। পুনের মহিলা কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা দেখা হচ্ছে। একটি-দু’টি ঘটনা দেখিয়েই গোষ্ঠী-সংক্রমণের দাবি করা যুক্তিসঙ্গত নয় বলে এই স্বাস্থ্য কর্তা দাবি করেছেন। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ব্রেক দ্য চেইন’ নীতি মেনে করোনা সংক্রমণকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আটকে রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলো। এদিকে রোববার ভারতজুড়ে প্রধানমন্ত্রীর জনতা কারফিউ আহ্বানে মানুষ অভূতপূর্ব সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরবন্দি রেখেছেন। তবে বিশেষজ্ঞ থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের আলোচকরা আবেদন জানিয়ে বলেছেন, এই স্বেচ্ছা বন্দিত্ব আরো কিছুদিন বজায় রাখুন। আজ রাত নটার পরই হৈ হৈ করে পথে নেমে না পড়ারও আবেদন জানানো হয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতে সকলেই সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে এর কোনো বিকল্প নেই বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে বিদেশ ফেরত যারা তথ্য গোপন করে বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা যে নিজের ক্ষতি করছেন তাই নয়, পরিবারের ও সমাজেরও ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছেন এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বিদেশ ফেরত যে কয়েক হাজার মানুষ ও তাদের পরিবার গৃহ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তাদের প্রতি ২৪ ঘণ্টা নজরদারির জন্য স্থানীয় ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সিভিক ভলান্টিয়ার, আশা কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের পাশাপাশি অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে।