শিক্ষাঙ্গন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

রক্তের দাগ শুকাচ্ছেই না

খায়রুল ইসলাম সোহাগ, ববি প্রতিনিধি

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

আধিপত্য বিস্তার, হলে সিট দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি নানা কারণে একের পর এক সংঘাতে জড়াচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের কোন কমিটি প্রতিষ্ঠানটিতে না থাকলেও বিবাদে জড়ানো কিংবা হামলায় অংশগ্রহণকারী বা আহত সকলেই নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে। ধারাবাহিকভাবে এসব সংঘাতের খবর পত্রিকার পাতাতে উঠে এলেও দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ ভূমিকায়।


গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি  বিকেলে প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে জখম ও রাতে হলে এক ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিস্কৃত দুজন হলেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আল সামাদ শান্ত ও বাংলা বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদ জামান নাভিদ।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংঘাতের ব্যাপারে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ খোরশেদ আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদ ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের তোড়জোড় শুরু হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উদ্বেগ।

একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ঘটে যাওয়া এসব সংঘাতে তারা ভীত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি চলতে দেয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে প্রশাসনকে ভেবে দেখা উচিত। তাদের অভিভাবকরাও ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত দু মাসে একাধিক সংঘাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। এসব ঘটনার সূত্রপাত গত ৯ই ডিসেম্বর থেকে। সেদিন রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা পরিচয়দানকারী গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত। এ ঘটনার পরপরই তাঁর পক্ষ বিপক্ষের বিভিন্ন উপগ্রুপ সংঘাতে লিপ্ত হয়।

সপ্তাহব্যাপী সেসব ধারাবাহিক সংঘাতে আহত হন প্রায় দশজন। সেসময় খেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়েও একজন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। হাসপাতাল থেকে ফিরে ক্যাম্পাসে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সিফাত। এরপর গত ১২ই ফেব্রুয়ারি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে পদার্থবিজ্ঞান ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেসময় মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া যায়। সে ঘটনায় শিক্ষকের সঙ্গে আহত হন আরো চারজন শিক্ষার্থী। কিন্তু এসব ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নিজেদের দলে টানতে, হলের সিট দখল নিয়ে ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতে লিপ্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম ব্যাচের দুটি উপগ্রুপ। সেই সংঘাতে দুজনকে কুপিয়ে গুরুতর ভাবে জখম করা হয়। এছাড়া সেই ঘটনায় আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও নগরীর হাসপাতালে ভর্তি হন আরো চারজন শিক্ষার্থী। ঐ ঘটনার জের ধরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শেরে বাংলা হলে এক ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, বিবাদে জড়ানো ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উপগ্রুপে বিভক্ত। সকল উপগ্রুপই বর্তমানে নিজেদের মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাতের আশীর্বাদপুষ্ট বলে দাবি করছে। ধারাবাহিক সংঘাতের এসব বিষয়ে আহমেদ সিফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শোনা যায় উল্টো সুর। তিনি বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় ছাত্রলীগের সবাই আমাকে সম্মান করে। কিন্তু কোনো সংঘাতের ঘটনায় আমি মদদ দিয়েছি এমন উদাহরণ নেই।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমার নেতা বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কড়াকড়ি নির্দেশ ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখা। আমরা তাঁর নির্দেশ শিরোধার্য মেনে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। তবে তিনি অভিযোগের আঙুল তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক কর্মকর্তাদের দিকে।

সংঘাতের ঘটনাগুলোয় তারা মদদ দিচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, সাবেক ভিসি বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষক কর্মকর্তা গ্রুপ ছাত্রদের রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তারা আমাদের মধ্যে বিভাজন এবং শাসন নীতি প্রয়োগ করছে। তারাই ঠিক করে ছাত্রদেরকে কখন কোথায় কথা বলবে কিংবা বলবে না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে এমন সংঘাতের জন্ম দিচ্ছে।

তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এসব সংঘাতের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্র সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় মুঠোফোনে জানান, কোনো অপরাধীর জায়গা বাংলাদেশ ছাত্রলীগে নেই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনো কমিটি নেই। সেখানকার ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী কারো অপকর্মের দায়ভার আমাদের নেয়ার প্রশ্নই আসে না।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান রাখার জন্য সেখানকার প্রশাসনের যেকোনো প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকবো।

বিশ্ববিদ্যালয়টির নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন ক্যাম্পাসে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান ব্যাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে যা যা করণীয় আমরা তা করবো। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ করা নেই। তাই এ ব্যাপারে আপাতত আলোচনা করার কোনো সুযোগ থাকছে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status