প্রথম পাতা

নিহত বেড়ে ৩৫

দিল্লিতে সহিংসতা চলছেই

অনিম আরাফাত

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) প্রত্যাহারে বিক্ষোভকারীদের দাবি ও তা নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়া সংবলিত কার্টুনটি ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।

দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চল পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। ফাঁকা রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাঁচ, ইটপাথর 
ও লোহার রড। গলিগুলো থেকে উঠছে কালো ধোঁয়া। গত কয়েক দশকের মধ্যে সব থেকে ভয়াবহ ও সহিংস সামপ্রদায়িক দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছে দিল্লি। রোববার শুরু হওয়া সংঘাত বৃহসপতিবারে এসে কিছুটা শান্ত হয়েছে। তবে এখনো থমথমে হয়ে আছে রাজধানীর একাংশ। আতঙ্কে দিল্লি ছাড়ছেন অনেক মুসলিম। হিংসার বলি হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিকেরও বেশি মানুষ। উত্তেজনা বিরাজ করা এলাকাগুলোতে বৃহসপতিবার মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ দল। চলছে সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত থাকাদের ধরতে অভিযানও। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে মোট ১৩০ জন। সরজমিন সহিংসতা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে মানুষদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার উপমুখ্যমন্ত্রী মানিশ সিসোদিয়া।
চারদিনব্যাপী চলা সহিংসতার শুরু হয় রোববার। এদিন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে পক্ষ ও বিপক্ষ দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেটিই পরে পরিণত হয় সামপ্রদায়িক দাঙ্গায়। এতে হামলার শিকার হয়েছে দুটি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মুসলিমদের অনেক দোকানপাট। চলেছে লুটপাট। অভিযোগ উঠেছে, টার্গেট করে হামলা হয়েছে মুসলিমদের ওপর। পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে হিন্দুদের পক্ষ থেকেও।
দাঙ্গা চলাকালীন পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ এনেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৪ থাকলেও বৃহস্পতিবার সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত হলেও উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও শীর্ষ স্থানীয় বেশকিছু রাজনৈতিক নেতা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে পরিস্থিতি নজরদারি করতে নয়াদিল্লির উত্তর-পূর্ব এলাকার বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তাদের সঙ্গে রায়ট গ্যাস ও ব্যাটন বা লাঠি রাখতে বলা হয়েছে। দিল্লিতে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে পুলিশের স্পেশাল কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তবকে। তিনিও উত্তর-পূর্বের সহিংসতাকবলিত এলাকার পরিস্থিতি আমলে নিয়েছেন। জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরি, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার সহ বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহসপতিবার দুপুর নাগাদ দিল্লির জাফরাবাদ ও মৌজপুর ছিল জনমানুষশূন্য। শনিবার থেকে জাফরাবাদেই সিএএ-বিরোধীরা রাস্তা অবরোধ করেছিলো। রোববার থেকে পাল্টা সিএএ’র পক্ষে জমায়েত শুরু হয়। চলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও। তবে বৃহসপতিবার একদম সুনশান অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। গোটা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। তবে জোহরাপুরী-ভজনপুরায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বুধবার রাতেও ভজনপুরা নামক এলাকা থেকে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে ফোন এসেছে।
আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর। তাদের মধ্যে ৪৬ জনের শরীরে বুলেটের ক্ষত পাওয়া গেছে। মুস্তাফাবাদে চলেছে এসিড হামলা। এতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ৪ জন। এরমধ্যে একজনের দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো মুখ ঝলসে গেছে অনেকের। এ নিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, পুলিশও এসিড হামলার মুখে পড়ছে।
সংঘর্ষের শুরু হয় সেই জাফরাবাদ-মৌজপুর এলাকায় সেখানে এখন শ্মশানের মতো নীরবতা। ভেতরের মহল্লাগুলোতে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। পুলিশ এখনো সব জায়গায় প্রবেশ করতে পারেনি। চাঁদবাগে গত দু’দিন ধরে প্রবল সহিংসতা। বৃহসপতিবারও সেখানে নর্দমার মধ্যে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর তরুণ কর্মী অঙ্কিত শর্মার দেহ উদ্ধার হয়েছে। অভিযোগের আঙুল স্থানীয় বিধায়ক তাহির হুসেনের দিকে।
হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগই দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। দাঙ্গা করতে গিয়েই সবাই হামলার শিকার হয়েছেন তাও নয়। কেউ হয়তো স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। একদম পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে কপালে গুলির ঘটনা ঘটেছে। কাউকে মারা হয় অটো থেকে নামিয়ে। হতাহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নিহতের পরিবার পাবে ২ লাখ রুপি আর আহতের পরিবার পাবে ৫০ হাজার রুপি।
দাঙ্গা পরিস্থিতির মধ্যেই আলোচনায় এসেছে নতুন আরেক ইস্যু। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে না পারার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও পুলিশের সমালোচনা করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধর। কিন্তু এই সমালোচনাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। বুধবার আকস্মিকভাবে তাকে রাজধানী থেকে বদলি করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে পাঞ্জাবে। তিনি ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ বিচারপতি। যদিও দাঙ্গা শুরুর আগেই গত ১২ই ফেব্রুয়ারি তাকে বদলির সুপারিশ করেছিলো সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম। তবে একে স্বাভাবিক মনে করছেন না কংগ্রেস নেতারা। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একযোগে আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াংকা গান্ধী। টুইটারে প্রিয়াংকা গান্ধী ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, এই ঘটনা লজ্জার ও দুঃখের। এর মধ্যদিয়ে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ ছাড়া, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। প্রথম থেকেই সহিংসতা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে আসছিলো দলটি। বৃহসপতিবার ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে অমিত শাহকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানান কংগ্রেসের একটি দল। এর নেতৃত্বে ছিলেন দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। দেশের এই অস্থিতিশীল অবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে রাজধর্ম রক্ষার জন্য নিজের ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে অনুরোধ জানিয়েছে কংগ্রেসের দলটি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status