দেশ বিদেশ

সামিরার মুখে স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করায় ব্যবসায়ী স্বামীকে ঘুমের মধ্যে গলা কেটে খুন করেছে তার স্ত্রী। সোমবার রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর খুনের ঘটনা স্বীকার করেন সামিরা আক্তার। সামিরার সঙ্গে তার বাবা আলী হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। খুন হওয়া আবদুর রহমান (৫২) চকপাড়ার পাশের গাজীপুর গ্রামের নাসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি জমি কেনা-বেচা ব্যবসা করতেন। গতকাল দুপুরে র‌্যাব এসব তথ্য জানিয়েছেন। র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি শ্রীপুর পৌর সভার কেয়া পশ্চিম খণ্ড এলাকায় তিন তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে আব্দুর রহমানের ঝলসানো অবস্থায় গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি তাকে ঘুমের মধ্যে গলা কেটে হত্যা করে এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দিয়ে মরদেহ ঘরের ভেতরে পেঁচিয়ে রাখে। কয়েকদিনে মরদেহটি পচে দুর্গন্ধ বের হলে পরে এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে পুলিশ তা উদ্ধার করে নিয়ে যায়।  নিহত আব্দুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ ঘটনায় সামিরা, তারা বাবা ও মাকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ হত্যা মামলার মূল আসামি শ্রীপুর থানার, চকপাড়া এলাকার সামিরা আক্তার ও তার বাবা মোহাম্মদ আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া সামিরা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব আরো জানায়, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই গৃহবধূ স্বীকার করেন, তিনি ছিলেন আবদুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী। আবদুর রহমান ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী। দুইজনের বয়সের পার্থক্য ছিল ২২ বছর অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি রাতে স্বামী রহমান ব্যবসায়িক পার্টনার রতনকে বাসায় নিয়ে এসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করেন। রাত ১১টার দিকে রতন চলে যায়। ভোর ৩টার দিকে তিনি ঘরে থাকা দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় রহমানকে গলা কেটে খুন করেন। পরে মরদেহ তোষকে মুড়িয়ে রাখেন। এর আগে মরদেহ যাতে চেনা না যায়, সেজন্য এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেন। মরদেহটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে তিনদিন ফ্ল্যাটেই অবস্থান করেন সামিরা। পরে তিনি পালিয়ে প্রথমে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়ী এলাকায় এক বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপন করেন। গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে পালিয়ে মামার বাসা নওগাঁ এবং গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ খান এলাকায় চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন। ২০১৬ সালে আবদুর রহমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে থাকতেন। একই গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে তারা ছিলেন পূর্ব পরিচিত। ওই বছর তিনি টঙ্গী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

পূর্ব পরিচয় সূত্রে তিনি রহমানের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতেন। রহমান তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে স্ত্রীর অবর্তমানে কৌশলে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে টঙ্গীর বাসায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। পরবর্তীতে ধর্ষণের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে রহমান দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন। তারপর থেকে সামিরা শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবদুর রহমান তাকে বিয়ে করে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করতেন। বিয়ের পর থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত রহমান কখনো ব্যবসায়িক স্বার্থে, আবার কখনো বিপুল টাকার বিনিময়ে তার পার্টনারদের সাথে তাকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতেন। না করলে নির্যাতন করতেন। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীর কাছে ডিভোর্স চান তিনি। এতে উল্টো স্বামী তাকে এবং তার মা-ভাইকে খুনের হুমকি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আবদুর রহমানের ওপর প্রতিশোধ নিতে খুনের পরিকল্পনা করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status