অনলাইন

‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৭:৫১ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
 
মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সমুদ্রবিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি এবং মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের যৌথ আয়োজনে কক্সবাজারের লাবনি বিচ পয়েন্টে ‘ন্যাশনাল বিচ ক্লিন-আপ’অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
 
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয়ে সমুদ্র বিজয় করে এনেছেন। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা এ সংক্রান্ত মেরিন বিভাগ খোলা হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছেন তিনি। আমি এই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলবো, প্রধানমন্ত্রী আপনাদেরকে এই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে দিয়েছেন। এখানে আপনাদের কার্যক্রম পরিচালনায় কারা বাধা, সেটা দেখার বিষয় নয়, এক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পিতভাবে এই সমুদ্র সৈকতটিকে কক্সবাজার পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
 
তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত মাস্টার প্ল্যান হয়নি— এই কথাটি আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই, আগামীকাল থেকে আপনারা এখানে কাজ শুরু করবেন। করপোরেশন গঠন হওয়ার পর বিচ ম্যানেজমেন্টর জন্য আলাদা কোনও কমিটি থাকার কথা নয়। সবকিছু উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আন্ডারে চলে আসার কথা। সমুদ্র উন্নয়নে করপোরেশনের সঙ্গে জড়িতদের যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে এমন কিছু করে দিয়ে যাবেন এলাকার জন্য, যেন এলাকার মানুষ স্মরণ করে যে, তাদের জন্য কিছু একটা করে দিয়ে গেছেন।
 
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের যে সংগঠনটি আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে— একটা সচেতনতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করা এবং যেসব কর্তৃপক্ষ আছে, তাদের যেসব গাফিলতি আছে, তা মানুষের সামনে তুলে ধরা। আমি বলবো, এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে সব ধরনের স্থাপনার উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের সঙ্গে কক্সবাজারের যদি উন্নয়ন করা না যায়, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন পূর্ণ হবে না। এখানে যেসব সমুদ্রসম্পদ এবং পাহাড়িসম্পদ রয়েছে, এটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরিফিন সিদ্দিক বলেন, সমুদ্র বিজয়কে অর্থবহ করতে সমুদ্রবিষয়ক গবেষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সমুদ্র সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাংবাদিক সংগঠন মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
 
তিনি বলেন, ফ্লোরিডার মিয়ামি বিচ বিশ্বের অন্যতম একটি বিচ। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা যাচ্ছে, সিনেমার শুটিং চলছে। হাজার হাজার পর্যটক সেখানে যাচ্ছে।
 
অথচ সেই বিচ আমাদের কক্সবাজারের বিচের তুলনায় কিছুই নয়। শুধুমাত্র আমাদের সমুদ্র ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাগত সমস্যার কারণে এটা হচ্ছে। এবার একটি সুযোগ এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের জাতির জনক মুজিবের জন্ম শতবার্ষিকী আসছে। এটাকে সামনে রেখে আমাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সমুদ্র উন্নয়নে কী ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তিনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গঠন করেছিলেন। মানতে কষ্ট হয়, আজ যেসব স্থাপনা কক্সবাজার বিচের কাছাকাছি চলে এসেছে, তা যে কতটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে। স্থাপনা থাকতে পারে সেটার একটা লিমিট থাকা উচিত। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার নিয়ে কক্সবাজারকে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে এসে সমুদ্রকে দেশের কল্যাণে, জনকল্যাণে কাজে লাগাতে হবে।
 
ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য আরো বলেন, একটি পৃথিবীতে আমরা দেশগুলো ভাগ করলেও প্রকৃতি কিন্তু বিভাজন মানে না। ভৌগোলিক সীমারেখা এটি মানে না। পাকিস্তান ও ভারতে বায়ুদূষণ ও সমুদ্রদূষণ বেড়ে গেলে বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর বায়ুদূষণের ফলে আমাদের দেশে এর প্রভাব পড়ছে। ফলে তাদেরকে যেমন সচেতন থাকতে হবে, তেমনই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
কক্সবাজার জেলা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর সঙ্গে ২৪০ জন জনবল নিয়োগের অনুমতিও তিনি দিয়েছেন। বর্তমানে আমাদের প্রত্যক্ষ জনগণের সংখ্যা খুবই কম, অ্যাটাচমেন্ট জনবল দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমাদের প্রত্যক্ষ জনবল নিয়োগ হবে এবং প্রধানমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার বাস্তবায়ন হবে।
 
সেভ আওয়ার সি-এর পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, পর্যটকদের ফেলে রাখা বর্জ্য সমুদ্রে চলে যায়, এতে সমুদ্রের প্রাণীগুলোর সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এতে সমুদ্রের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে কোরাল দ্বীপ না বলার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।
 
সভায় পর্যটন বিশেষজ্ঞ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিচ বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের সম্পদ। কারণ, কোনও জায়গাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর সে জায়গায় এককভাবে কোনও দেশের মালিকানায় থাকে না। ফলে এই বিচ যাতে কোনরকম ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
 
সমুদ্র অর্থনীতি গবেষক ডক্টর দিলরুবা চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে ব্লু ইকোনমি থেকে অর্থনীতি আসছে পাঁচ থেকে ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি জানান, পর্যটন থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আয় করছে আমেরিকা। আমাদের দেশেও ট্যুরিজমের সঙ্গে অনেক সেক্টর সম্পৃক্ত হয়েছে। ট্যুরিজম দিয়ে আমাদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন আরও বাড়াতে পারি।
 
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ মামুন আব্দুল্লাহ বলেন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আছে আমাদের, সেটা কি আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। ২০ বছর আগে যে কক্সবাজারকে দেখেছি, সেই কক্সবাজারকে আর এখন পাই না।
 
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিখ সাঈদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সমুদ্র নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন, আপনাদেরকেও এমন স্বপ্ন দেখতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
 
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেভ আওয়ার সি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদ সোহেল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status