শেষের পাতা

দুর্যোগ সহনীয় ঘর নাকি মৃত্যুফাঁদ?

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। মাত্র একটি ইটের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা  হয়েছে এসব বাড়ি। এসব বাড়ি এখন রয়েছে ঝুঁকিতে। মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে ছিলেন, বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। বাস্তবায়ন কমিটিতে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। মূল তত্ত্বাবধান ছিলো প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজের হাতে। তাদের সম্মিলিত দুর্নীতির প্রতিফলন ঘটেছে এই প্রকল্পে। সরজমিন বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের ডেকরা গ্রামে বাকপ্রতিবন্ধী লাল মিয়ার ঘরটি দেখতে গিয়ে বেরিয়ে আসে দুর্নীতির চিত্র। ঘরটি মাত্র একটি ইটের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। চালে যে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে অসংখ্য জোড়াতালি। সিমেন্টের ব্যবহারও সীমিত। বালির ব্যবহারেও আপত্তি। সিমেন্ট বালির বাস্তবিক সমন্বয় নেই। ভেঙে মাথার উপর পড়বে এমন ভয় থেকে অনেকেই ঘরে পর্যন্ত উঠেননি। লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের ডেকরা গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী লাল মিয়া ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন একটি ইটের উপর কোন ঘর টিকে থাকতে পারে না। জোরে বাতাস এলেই ভেঙে পড়তে পারে। সেই ভয়ে তিনি ওই ঘরে উঠেননি। ঘরের দেয়ালে কোদাল দিয়ে মাটি সরিয়েও দেখা মিললো মাত্র একটি ইটের।
অথচ প্রকল্পের নাম দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ। এসব ঘর কতটা দুর্যোগ সহনীয়ভাবে নির্মাণ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিবরণ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  
ঘরপ্রাপ্ত বাকপ্রতিবন্ধী লাল মিয়ার মা ছামসুন্নাহার বলেন, ঘরের ভিত্তি দিয়েছে মাত্র একটি ইটে। তারা প্রতিবাদ করলেও কোন কথা শোনেনি কেউ। উল্টো ধমক দিয়ে বলা হয়েছে এখন ভূমিকম্প নেই, এই ঘরের কিছু হবে না। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে চাইলে নিজেরা করে নিও।
প্রতিবেশী জেল্লার রহমান এবং বলুর রহমান বলেন, ঘরটি তৈরির সময় তারা সংশ্লিষ্টদের বলেছিলো লাল মিয়া প্রতিবন্ধী। এই ঘরটা অন্তত একটু ভালো করে তৈরি করে দেন। তাদের কথাও কানে নেয়নি কেউ।   
এদিকে বগুড়ার একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, আমি এসব ঘরগুলো দেখে এসেছি। একটি ইটের উপর কোন ঘরই থাকতে পারে না। ভূমিকম্প দূরের কথা জোরে বাতাস হলেই এসব ঘর ভেঙে পড়বে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বগুড়া সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য একাধিক দিন তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। অফিস সহকারী এবং প্রকল্পের ঠিকাদাররা বলেছেন, তিনি ঠিকমতো অফিসে আসেন না। মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেন না। এমন কি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বলেছেন, তিনি ঠিকমত অফিসে আসেন না। ফোনও রিসিভ করেন না।
এই প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলো নিয়ে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, আমি এই প্রকল্পের সভাপতি। একটি ইটের উপর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এটি ঠিক নয়। তবে কেউ কেউ পরে মাটি কাটবে এমন কথা বললে নিচের ইটগুলো উপরে দেয়া হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার রিয়াজুল ইসলাম ঠিকমত অফিসে আসেন না এমন তথ্য তার জানা আছে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সে ঠিকমত অফিসে আসেন না সেটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানেন। সে আমার ফোনও ঠিক মত রিসিভ করেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status