বিনোদন

তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিন সমিতির বৈঠক

সিনেপ্লেক্সের বিক্রি টিকেটে প্রযোজকের অংশ ঠিক করে দিবে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার, ১২:১৩ অপরাহ্ন

চলচ্চিত্রের চলমান নানান সংকট কাটানোর বিষয় নিয়ে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি ও প্রদর্শক সমিতি গতকাল দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। এই বৈঠকে সিনেপ্লেক্সগুলোতে বিক্রি হওয়া টিকেটের কত শতাংশ অর্থ প্রযোজকরা পাবেন, তা ঠিক করে দেবে সরকার। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বৈঠকে একথা জানান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমসহ অনেকেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, তিন সমিতির এই বৈঠকে চলচ্চিত্রের চলমান সমস্যাসহ নানা বিষয় নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে বৈঠকে আলোচনার বিষয় বস্তুর মধ্যে একটি ছিল সিনেপ্লেক্সের বিষয়টি। এখন থেকে সিনেপ্লেক্সের বিক্রি টিকেটে প্রযোজকের অংশ (টিকেট বিক্রির শেয়ার) ঠিক করে দিবে সরকার। এছাড়া সরকারি অনুদানের অর্থ বাড়ানোর বিষয় নিয়েও কথা হয়।

এছাড়া চলচ্চিত্র সেন্সর ছাড়পত্রের জায়গায় চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশনের গ্রেডিং বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার প্রদর্শকদের কাছ থেকে প্রযোজকদের অর্থ কম পাওয়ার অভিযোগ  তোলেন।  তিনি বলেন, সিনেপ্লেক্সগুলোতে একটি টিকেট বিক্রি করে ৪৫০ টাকা নেওয়া হলে সেখান থেকে প্রযোজককে মাত্র ৫৫ টাকা  দেওয়া হয়। আর অন্য প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ২৫০ টাকার টিকেট থেকে ৩৩ টাকা, ২০০ টাকার টিকেট থেকে ১৭ টাকা এবং ১৬০ টাকার টিকেট  থেকে ১৩ টাকার মত প্রযোজক পান বলে জানান তিনি। প্রযোজকরা হল মালিকদের কাছ থেকে ট্যাক্স বাদে টিকেটে বিক্রির অর্ধেক টাকা যাতে পান, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান গুলজার। তিনি বলেন, ভালো সিনেমা আমদানি করে হলগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু আমাদের সিনেমাও যেন বাড়ে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশেক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আগে বলতাম প্রযোজক বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে, এখন বলছি হল বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে। বাংলাদেশে এক সময় ১ হাজার ৩০০ সিনেমা হল ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গত বার ১৭০টি হলে চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া গেছে। এবার ৮০টির উপর হল খুঁজে পাইনি। আমাদের চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হবে। প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সংগঠন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষে কাজী শোয়েব রশীদ, উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তথ্য সচিব কামরুন নাহারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হলেও এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কোনো সুবিধা পাচ্ছে না বলে দাবি করেন কাজী শোয়েব রশীদ।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, দেশীর ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রযোজক ছবি না বানালে তার খরচ থাকে না, কিন্তু হলে সিনেমা না চললেও প্রতিদিনই খরচ হয়।  প্রেক্ষাগৃহে বিদুৎ বিল বাণিজ্যিক হাওে নেওয়ার তথ্যটি তুলে ধরে তিনি বলেন, বিকাল ৫টার পর সেই বিল আরও বেড়ে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানিতে এনবিআর ট্যাক্স ধার্য করে রেখেছে। সিনেমাহলগুলোতে টিকেট বিক্রি কওে যে টাকা পাওয়া যায়, তা থেকে সরকারের ট্যাক্স বাদ দিয়ে সিনেমা হল মালিক ও প্রযোজক যাতে সমান ভাগ পায়, তা নিশ্চিত করার দাবি জানান সুদীপ্ত। প্রকৃতপক্ষে চলচ্চিত্রের বিশেষ করে সিনেমা হলের যে অবস্থা, অনেকগুলো হল বন্ধ হয়ে গেছে। হল না থাকলে তো চলচ্চিত্র বাঁচবে না, কারণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মূল মাধ্যম হচ্ছে সিনেমা হল। আপনারা বলছেন, সিনেমা হল থেকে প্রযোজকরা টাকা পায় না।

প্রথম দিকে আমরা সিনেপ্লেক্সগুলোতে একটা পারসেন্টেজ নির্ধারণ করে দিতে পারি, পরবর্তী ধাপে আমরা সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলে যাব বলে জানান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি সিনেপ্লেক্সের টিকেটমূলের বিষয়ে বৈঠকে আরো বলেন, সিনেপ্লেক্সে টিকেটের দাম কোনো জায়গায়ই ৩০০ টাকার কম নয়। সেখানে থেকে প্রযোজক মাত্র ৩০ টাকা পাবেন, এটা হওয়া উচিৎ নয়। প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, বৈঠকে ভারত থেকে বলিউডের সিনেমা আমদানির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি সম্মতি জানালেও এখনো শিল্পী সমিতি সম্মতি দেননি। তবে এটা সম্মতি পেলে সামনে একই সময়ে ভারতের পাশাপাশি বলিউডের নতুন সিনেমাও দর্শকরা সিনেমা হলে দেখতে পাবেন। এছাড়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মালামাল আমদানির ক্ষেত্রে শিল্প হিসেবে সুবিধার জন্য এনবিআরের সঙ্গে কথা বলবেন জানান তথ্যমন্ত্রী। অনুদানের সিনেমার অর্থের বাজেট বাড়ানোর বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন তিন সমিতির নেতারা। এদিকে অনুদানের সিনেমাগুলো সিনেমা হলে চালানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও আলোচনা করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status