দেশ বিদেশ

চট্টগ্রামে মনজুর আলমকে নিয়ে উত্তাপ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালেও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে হেরে বিএনপি ছেড়েছেন। এমনকি গুডবাই বলে রাজনীতি থেকেও বিদায় নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের প্রখ্যাত শিল্পপতি মোস্তাফা হাকিম গ্রুপের কর্ণধার এম মনজুর আলম। তবে অভ্যাস বলে কথা। রাজনীতি ছাড়লেও দলবাজি ছাড়েননি তিনি। পরে প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে একাধিকবার আওয়ামী লীগে ভেড়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা বিশ্বাস হারিয়ে তাকে দলে ভিড়তে দেননি। তাতেও হাল ছাড়েননি তিনি। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সক্রিয় হয়ে উঠেন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা এম মনজুর আলম। চট্টগ্রাম-৪ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সমপাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন মনজুরকে বিশ্বাস করা কঠিন। তিনি কখন কোন দল করেন নিজেও জানেন না। তিনি কখনো আওয়ামী লীগ, আবার কখনো বিএনপির। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আবার কদিন পরেই হয়তো দেখা যাবে তিনি বিএনপিতে চলে যাচ্ছেন। সেই মনজুর আলম ফের সক্রিয় হয়ে উঠেন আসন্ন চসিক নির্বাচনকে ঘিরে। তবে আওয়ামী লীগ না বিএনপি থেকে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে চলছিল গুঞ্জন। কিন্তু ১৩ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মনজুর আলম। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে চলছে উত্তাপ।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে পল্টিবাজ হিসেবে খ্যাত বিএনপির সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। ক্ষমতার জন্য তিনি কয়েকবার দল পাল্টিয়েছেন। তিনি ক্ষমতাপ্রিয় একজন মানুষ। এ ধরণের মানুষ রাজনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এসব মানুষকে বর্জন করা উচিত সব রাজনৈতিক দলকে। নেতাকর্মীরা জানান, এম মনজুর আলম ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় মনজুর আলম ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। পরে ২০১০ সালের ১৭ই জুন চসিক নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন মনজুর আলম। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগও দেন। হয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও। ২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আবার বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হন। তবে নির্বাচনের দিন সকালে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মনজুর আলম। এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতন্ডাও হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে তিনি এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে। এরপরই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে আগ্রহী মহিউদ্দিন চৌধুরী। কারণ মেয়র থাকাকালে মনজুরের ব্যর্থতা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত ছিল সবসময়। তবে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা তার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলায় দলে যোগ দিতে পারেননি এখনো। ফলে সকল প্রকার রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকেও দূরে ছিলেন তিনি।

কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ ও ১০ আসনে নৌকা প্রতিকে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে আরো একবার আলোচনায় আসেন বিএনপির সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর আলম বলেন, আমি বিএনপির সমর্থনে মেয়র হলেও মূলত আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলাম। এখনো আছি। তাই আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে মেয়র প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও আমার সাথে আছেন।

প্রসঙ্গত, আসন্ন চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতিকে প্রার্থী হতে এ পর্যন্ত ৭ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে মনজুর আলম ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি ও সাবেক বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, চউক কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ ছালাম, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সমপাদক রেজাউল করিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম বিএসসির পুত্র মো. মুজিবুর রহমান রয়েছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেয়া হবে। ১৫ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status