অনলাইন

আমার বিশ্বাস আমরা এ থেকে বেরিয়ে আসবো

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

উহান- চীনের এই শহরটিই করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র। শহরটি এখনো কার্যত বন্ধ বা অচল হয় আছে।
এর মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবীরা আক্রান্তদের হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার অনেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের যাদের পরিবহনের ব্যবস্থা নেই তাদের সহায়তার চেষ্টা করেছেন। এমন একজন স্বেচ্ছাসেবীর সাথে বিবিসি কথা বলেছে যার নাম জো। তিনি বলছিলেন কিভাবে স্বেচ্ছাসেবীদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে উহানে যেখানে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অচল হয়ে আছে।

সবকিছুই হঠাৎ ঘটে গেছে। জীবন স্বাভাবিকই ছিলো লকডাউনের আগ পর্যন্ত। প্রাদুর্ভাবের শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সকাল ছয়টা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত বিরামহীন সেবা দিয়েছেন এবং তাদের অনেকেরই যাতায়াতের গাড়ী নেই।গণপরিবহন না থাকায় তাদের কারও কারও দু ঘণ্টার বেশি সাইকেল চালিয়ে কাজে যেতে হতো যা এই শীতে খুবই কষ্টের।

এসব কারণে লোকজন উইচ্যাটে (চীনে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) গ্রুপ খুলে স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিলো।
আমার মতো গাড়ীর মালিকরা অনেকে যোগ দিলো গ্রুপে অন্যদের আনা নেয়ার জন্য।

আমার প্রধান কাজ ছিলো স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে আনা নেয়া করা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেয়া।
আবার রেস্তোরা থেকে খাবার নিয়ে বিনামূল্যে সরবরাহও করেছি।
যেহেতু সংক্রমিতদের চিকিৎসা করছে তাই তাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা ছিল ও তারা অসুস্থও হতে পারে। কিন্তু আমাদের একটি নীতিমালা ছিল: যে পেশাদার স্বেচ্ছাসেবীরা থাকবে গ্রুপে যারা আমাদের নিজেদের সুরক্ষা কিভাবে করবো তা শেখাবে।

তারা আমাদের সুরক্ষার জন্য দরকারি পোশাক দিয়েছিল। আমি রেইনকোট ও গগলস আর দুটি সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতাম। এখন অবশ্য একটি প্রটেক্টিভ স্যুট আছে।যতবার কাউকে নামাতাম ততবারই গাড়ীকে জীবাণুমুক্ত করতাম।

আবার কাজের মাঝে সময় পেলে বাড়ি গিয়ে গোসল ও পোশাক পরিবর্তন করতাম। কোনদিন তিন চার বারও গোসল করা হতো। উহানেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, আর তিন প্রজন্ম ধরে আমার পরিবার এখানে বাস করছে।

শহরটিকে আমি ভালোবাসি।কাজটি আমি করছি কারণ আমি সুস্থ আছি ও আমার সক্ষমতা আছে। তাই আমি নিজেই এ কাজে জড়িত হয়েছি।
উহানের বহু মানুষই আমার মতোই, উষ্ণ হৃদয়ের। এখানকার মানুষের সাহস আছে। এই কঠিন সময়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ও একে অপরকে সহায়তা করি।

সে কারণেই আশার প্রদীপ আছে। এটা একটা জরুরি পরিস্থিতি ও কারও কাছেই এটি প্রত্যাশিত ছিল না।
শুরুতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের রিসোর্স ঘাটতি ছিল এটি সত্যি। এটা ছিল তাদের সক্ষমতার বাইরে হঠাৎ হয়ে পড়া মহামারী।

তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চাওয়া উচিত ছিলো। সে কারণেই আমার মতো সাধারণ মানুষও অনুভব করেছিল যে আমাদেরও কিছু করার আছে নিজেদের মানুষ, শহরকে রক্ষায় ও সরকারকে সহায়তার। মানুষ বাস্তববাদী হওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক চিকিৎসকের সাথে আমি কথা বলেছি।

এমন জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় তাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা ছিলোনা। অনেকেই তরুণ- মাত্রই ক্যারিয়ার শুরু করেছে। এটা সত্যি শুরুতে রিসোর্স সীমিত ছিলো, পর্যাপ্ত মাস্ক বা প্রটেক্টিভ স্যুট ছিল না।
কখনো একটি স্যুট অনেক জন স্বাস্থ্য কর্মী শেয়ার করেছেন এবং তারা তখন প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিলেন।
তবে পরিস্থিতি ক্রমশ ভালোর দিকে এবং আমি মনে করি প্রাথমিক দরকারি সব জিনিসই এখন আছে।

কখনো যখন মাঝরাতের দিকে কাউকে পিক করি তখন আমার মনে হয় সত্যিই তারা অসাধারণ।
আমি তাদের সম্মান করি।
তাদেরও পরিবার আছে কিন্তু তারা রোগীকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাই আমাদেরও তাদের জন্য কিছু করণীয় আছে।
আমি মনে করি আমাদের সবার সেরাটাই দেয়া উচিত।
যদি অন্যদের সহায়তার সময় নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন তাহলেই সহায়তা এগিয়ে আসুন।
নয়তো বাসায় বসে থাকাটাও একটা বড় সমর্থন।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status