শেষের পাতা
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ২৪২
করোনায় ভয়ঙ্কর দিন
মানবজমিন ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন
সংখ্যার বিবেচনায় বুধবার ছিল নতুন করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯)-এর সবচেয়ে আগ্রাসী দিন। এদিন ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ২৪২ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১৪ হাজার ৮৪০ জন। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ১ হাজার ৩৫৭ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। অথচ এর আগের
দিনই ভাইরাসটি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার খবর বের হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। একদিন পরই এমন খবরে বিশ্ববাসীর টনক নড়ে গেছে। বিস্ময়, আতঙ্ক, ভীতি সবমিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করছে সবার মাঝে। উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা একই তালে বেড়ে চলছিল। এদিকে, বিশেষজ্ঞরাও ভীতিকর তথ্য দিচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ডা. ডালি ফিশার সতর্ক করেছেন, বিশ্বের প্রত্যেক দেশেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর আগে মঙ্গলবার হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং সতর্ক করেন, নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ। সবমিলিয়ে কভিড-১৯ নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এখনো কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কারে ব্যর্থ বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা। দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। বৈশ্বিক অর্থনীতি ইতিমধ্যেই চাপ অনুভব করছে।
২৪ ঘণ্টায় এত বৃদ্ধি!
কভিড-১৯ শনাক্তের ব্যাপারে ডব্লিউএইচও’র কাছে প্রথম রিপোর্ট করা হয় ৩১শে ডিসেম্বর। সে হিসাবে মাত্র ৪৫ দিনেই বিশ্ববাসীর মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে নতুন এই করোনা ভাইরাস। প্রথম থেকেই ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল, এতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ- সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাস গ্রহণে সমস্যা ইত্যাদি। মূলত সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণই দেখা যায়। কিন্তু সেটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কতক্ষণ বা কতদিন পর দেখা দেয় সে বিষয়ে এখনো সুসপষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। মানুষ থেকে মানুষে ছোঁয়াচে হওয়ায় ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। চীন বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যের অন্যতম চক্রকেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে পুরো বিশ্বের। প্রাথমিক পর্যায়ে অসচেতনতা ও চীনা কর্তৃপক্ষের তথ্য গোপনের চেষ্টায় ভাইরাসটি বিনা বাধায় উৎপত্তিস্থল উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। এরপর থেকে ক্রমাগত হারে বেড়েই চলে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু বুধবারের বৃদ্ধি নজিরবিহীন ছিল। এতে অনেকের মনে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনি অনেকের মনে প্রশ্নও জেগেছে। এতজনের মৃত্যু ও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা একদিনেই হয়েছে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত চীনা কর্মকর্তাদের গণনার ধরনে পরিবর্তন আসার ফলেই এই বৃদ্ধি হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। যার দরুন, এই রোগ চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। কোনো স্বতন্ত্র ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য না থাকায় মেডিক্যালি পরীক্ষা না করা পর্যন্ত এতে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটা বোঝা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় সবখানে এর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই। সিএনবিসি ও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস অনুসারে, হুবেইর কর্মকর্তারা বুধবার থেকে এমন রোগী ও মৃতদের কভিড-১৯’-এ আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যাদের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে ও সিটি স্ক্যানে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা গেছে কিন্তু ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করা হয়নি। ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করার ক্রাইটেরিয়া বড় করার ফলেই সংখ্যায় এই বিশাল বৃদ্ধি দেখা গেছে। পূর্বে কেবলমাত্র কোনো পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হলে তবেই আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হতো কাউকে।
উল্লেখ্য, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি হুবেই প্রদেশের। বুধবার ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি জিয়াং চ্যাওলিয়াংকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে চীন। এটি নিয়ন্ত্রণে সেখানে এ নিয়ে বেশ কয়েকজন চাকরি হারালেন। তবে চ্যাওলিয়াংয়ের বরখাস্তই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত। তার জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাংহাই পার্টি প্রধান ইং ইয়ংকে।
সতর্কতা
ইতিমধ্যে দুই ডজনের বেশি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য আরো বেশি হতে পারে। বহু দেশ এখনো ভাইরাসটি শনাক্তে কোনো উদ্যোগ নেয়নি- যেমন মালয়েশিয়া। এখন পর্যন্ত দেশটিতে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সরকার। প্রতি বছর দেশটিতে দুই লাখেরও বেশি চীনা পর্যটক সফর করেন। চীনের বাইরে কভিড-১৯ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে চীন সফরকারী ব্যক্তি বা চীন থেকে ভ্রমণকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া জানিয়েছে, দেশটিতে ৫০০০ চীনা পর্যটক রয়েছে। এর মধ্যে ২০০ জন ভাইরাসটি উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল উহানের বাসিন্দা। এ ছাড়া, চীনের প্রভাব রয়েছে এমন দেশগুলোতেও ভাইরাস নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যার ফলে প্রকৃত সংখ্যা আন্দাজ করা বেশ কঠিন। এ ছাড়া, অনেক দেশেই ভাইরাসটি যথাযথভাবে পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। যার ফলে, নীরবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লেও তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। সিঙ্গাপুরে সমপ্রতি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এ ইঙ্গিত দিয়েছে।
চীনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা আগামী এপ্রিলের মধ্যে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু ডব্লিউএইচও’র গ্লোবাল আউটব্রেক এলার্ট রেসপন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান ডা. ফিশার সতর্ক করেছেন, বিশ্বের প্রত্যেক দেশেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রতিটি দেশেই এই ভাইরাসের কোনো না কোনো কেস থাকবে। সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে ৫০টি। চীনের বাইরে এটাই কোনো একটি এলাকায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের মাধ্যমে এটা ঘটেছে।
সিঙ্গাপুরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে অধিক সংখ্যায় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহজনকদের পরীক্ষার ক্ষেত্রে সূচক অনেক নিম্নমুখী। যদি বেশি পরিমাণে পরীক্ষা করা হতো তাহলে এতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি পাওয়া যেতো। এই ভাইরাস সংক্রমণের আরো অনেক পদ্ধতি এখনো অজানা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে সন্ত্রাসের চেয়ে মানবতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর এমন হুঁশিয়ারি দিলেন ডা. ডালি ফিশার।
এর আগে হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মারা যেতে পারেন সাড়ে চার কোটি মানুষ। আক্রান্ত হতে পারেন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকারকে অবশ্যই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যদি শতকরা এক ভাগ মানুষও মারা যায় তাহলেও মারা পড়বেন কয়েক কোটি মানুষ।
দিনই ভাইরাসটি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার খবর বের হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। একদিন পরই এমন খবরে বিশ্ববাসীর টনক নড়ে গেছে। বিস্ময়, আতঙ্ক, ভীতি সবমিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করছে সবার মাঝে। উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা একই তালে বেড়ে চলছিল। এদিকে, বিশেষজ্ঞরাও ভীতিকর তথ্য দিচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ডা. ডালি ফিশার সতর্ক করেছেন, বিশ্বের প্রত্যেক দেশেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর আগে মঙ্গলবার হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং সতর্ক করেন, নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ। সবমিলিয়ে কভিড-১৯ নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এখনো কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কারে ব্যর্থ বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা। দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। বৈশ্বিক অর্থনীতি ইতিমধ্যেই চাপ অনুভব করছে।
২৪ ঘণ্টায় এত বৃদ্ধি!
কভিড-১৯ শনাক্তের ব্যাপারে ডব্লিউএইচও’র কাছে প্রথম রিপোর্ট করা হয় ৩১শে ডিসেম্বর। সে হিসাবে মাত্র ৪৫ দিনেই বিশ্ববাসীর মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে নতুন এই করোনা ভাইরাস। প্রথম থেকেই ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল, এতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ- সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাস গ্রহণে সমস্যা ইত্যাদি। মূলত সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণই দেখা যায়। কিন্তু সেটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কতক্ষণ বা কতদিন পর দেখা দেয় সে বিষয়ে এখনো সুসপষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। মানুষ থেকে মানুষে ছোঁয়াচে হওয়ায় ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। চীন বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যের অন্যতম চক্রকেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে পুরো বিশ্বের। প্রাথমিক পর্যায়ে অসচেতনতা ও চীনা কর্তৃপক্ষের তথ্য গোপনের চেষ্টায় ভাইরাসটি বিনা বাধায় উৎপত্তিস্থল উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। এরপর থেকে ক্রমাগত হারে বেড়েই চলে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু বুধবারের বৃদ্ধি নজিরবিহীন ছিল। এতে অনেকের মনে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনি অনেকের মনে প্রশ্নও জেগেছে। এতজনের মৃত্যু ও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা একদিনেই হয়েছে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত চীনা কর্মকর্তাদের গণনার ধরনে পরিবর্তন আসার ফলেই এই বৃদ্ধি হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। যার দরুন, এই রোগ চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। কোনো স্বতন্ত্র ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য না থাকায় মেডিক্যালি পরীক্ষা না করা পর্যন্ত এতে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটা বোঝা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় সবখানে এর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই। সিএনবিসি ও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস অনুসারে, হুবেইর কর্মকর্তারা বুধবার থেকে এমন রোগী ও মৃতদের কভিড-১৯’-এ আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যাদের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে ও সিটি স্ক্যানে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা গেছে কিন্তু ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করা হয়নি। ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করার ক্রাইটেরিয়া বড় করার ফলেই সংখ্যায় এই বিশাল বৃদ্ধি দেখা গেছে। পূর্বে কেবলমাত্র কোনো পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হলে তবেই আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হতো কাউকে।
উল্লেখ্য, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি হুবেই প্রদেশের। বুধবার ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি জিয়াং চ্যাওলিয়াংকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে চীন। এটি নিয়ন্ত্রণে সেখানে এ নিয়ে বেশ কয়েকজন চাকরি হারালেন। তবে চ্যাওলিয়াংয়ের বরখাস্তই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত। তার জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাংহাই পার্টি প্রধান ইং ইয়ংকে।
সতর্কতা
ইতিমধ্যে দুই ডজনের বেশি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য আরো বেশি হতে পারে। বহু দেশ এখনো ভাইরাসটি শনাক্তে কোনো উদ্যোগ নেয়নি- যেমন মালয়েশিয়া। এখন পর্যন্ত দেশটিতে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সরকার। প্রতি বছর দেশটিতে দুই লাখেরও বেশি চীনা পর্যটক সফর করেন। চীনের বাইরে কভিড-১৯ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে চীন সফরকারী ব্যক্তি বা চীন থেকে ভ্রমণকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া জানিয়েছে, দেশটিতে ৫০০০ চীনা পর্যটক রয়েছে। এর মধ্যে ২০০ জন ভাইরাসটি উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল উহানের বাসিন্দা। এ ছাড়া, চীনের প্রভাব রয়েছে এমন দেশগুলোতেও ভাইরাস নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যার ফলে প্রকৃত সংখ্যা আন্দাজ করা বেশ কঠিন। এ ছাড়া, অনেক দেশেই ভাইরাসটি যথাযথভাবে পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। যার ফলে, নীরবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লেও তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। সিঙ্গাপুরে সমপ্রতি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এ ইঙ্গিত দিয়েছে।
চীনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা আগামী এপ্রিলের মধ্যে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু ডব্লিউএইচও’র গ্লোবাল আউটব্রেক এলার্ট রেসপন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান ডা. ফিশার সতর্ক করেছেন, বিশ্বের প্রত্যেক দেশেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রতিটি দেশেই এই ভাইরাসের কোনো না কোনো কেস থাকবে। সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে ৫০টি। চীনের বাইরে এটাই কোনো একটি এলাকায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের মাধ্যমে এটা ঘটেছে।
সিঙ্গাপুরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে অধিক সংখ্যায় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহজনকদের পরীক্ষার ক্ষেত্রে সূচক অনেক নিম্নমুখী। যদি বেশি পরিমাণে পরীক্ষা করা হতো তাহলে এতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি পাওয়া যেতো। এই ভাইরাস সংক্রমণের আরো অনেক পদ্ধতি এখনো অজানা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে সন্ত্রাসের চেয়ে মানবতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর এমন হুঁশিয়ারি দিলেন ডা. ডালি ফিশার।
এর আগে হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মারা যেতে পারেন সাড়ে চার কোটি মানুষ। আক্রান্ত হতে পারেন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকারকে অবশ্যই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যদি শতকরা এক ভাগ মানুষও মারা যায় তাহলেও মারা পড়বেন কয়েক কোটি মানুষ।