বাংলারজমিন

দিনাজপুরে ফুরসত নেই ফুলচাষি ও দোকানির

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

 বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস ঘিরে ব্যস্ত  সময় পার করছেন উত্তরের শষ্যভাণ্ডার দিনাজপুরে ফুলচাষিরা। কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলে ফুল চাষ। ফুল চাষ করে ঘুরছে এ জেলার অসংখ্য কৃষকের ভাগ্যের চাকা। জেলায় প্রচুর ফুল পাওয়া যাচ্ছে। ফুল চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি গ্রাম এখন ফুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। নতুন বছরে ফুল ভালো বিক্রি হওয়ায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে দোকনিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
দিনাজপুরের  অসংখ্য কৃষক এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ফুল আবাদ করে কৃষকরা অধিক লাভের মুখ দেখছেন। বিরলের রবিপুর এলাকার ফুলচাষি শমশের জানান, তিনি ৮ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক ফুলচাষ করেন। ফুলের ভালো ফলন হওয়ায় তিনি বেশ লাভবান তাতে। তিনি আগামীতে এক বিঘা জমিতে ফুলচাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এলাকার  মোকাররম হোসেন ও মকছেদ আলীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে ফুল। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ করেছেন তারা। সেই ফুল বাগান  থেকে তারা বছরে আয় করছেন দুই লাখ টাকা। মকছেদ আলীর বর্তমানে এক বিঘা ৮ শতাংশ জমিতে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা ও গাজরা ফুল চাষ করছেন। বাড়ির পাশে ৯ শতাংশ জমিতে রয়েছে গাজরা ফুল। এছাড়া মোকাররমের  এক বিঘা ৫ শতাংশ কাঠা জমিতে রয়েছে  গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুল।
মকছেন বলেন, ফুল চাষে  লোকসানের সম্ভাবনা নেই। ঠিকমতো পরিচর্যা ও চাষ করতে পারলে প্রচুর লাভ হয়।
ফুলের বাজার দর কম-বেশি হয় জানিয়ে মোকাররম বলেন, ‘প্রতিটি  গোলাপ বিক্রি করি ৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ টাকা ও গাঁদা ফুল ১ হাজার ১৫০ টাকা। প্রতিদিন বিক্রি করা দামের তারতম্য ঘটে। বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের দাম বেশি হয়।’
ফুলচাষি ইসাহাক আলী জানান, ‘তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তবে ফুলের ব্যবসা করে বর্তমানে অবস্থা ভালো। গাদা, গাজরা, গোলাপ, রজনী গন্ধা, বেলি ও কাঠ বিড়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার ফুল আবাদ হচ্ছে এ জেলায়। ফুল  ফোঁটার বন্ধ মৌসুম অর্থাৎ অসময়েও জেলায় প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। প্রতিদিন ফুল কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে নগদ টাকায় জমি থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকও ফুল চাষে ঝুঁকছেন। জমি ফেলে না রেখে ফুল চাষ করছেন তারা। ফুল তোলা আর মালা গাঁথার কাজেও জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। বিশেষ করে সংসারের কাজ ও পড়া-লেখার  অবসরে নারীরা ফুলের মালা তৈরি’র কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।
জেলা সদর, বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৫০ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে।  উৎপাদিত এসব  ফুল এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। নতুন বছরে ফুল ভালো বিক্রি হওয়ায় ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলচাষি ও দোকনিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফুল চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি গ্রাম এখন ফুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য দারুণ উপযোগী। তাই ফুল চাষ সমপ্রসারণে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ।
ধানের জেলা দিনাজপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। এ  ফুল চাষ করে ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং এ ফুলের ভালো দাম পেলে এ অঞ্চলে ফুল চাষের পরিধি আরও বেড়ে যাবে এমনটাই মন্তব্য করেছেন কৃষিবিদরা।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status