এক্সক্লুসিভ
গ্রন্থমেলায় ফাগুনের ছোঁয়া
মুনির হোসেন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৮:৩১ পূর্বাহ্ন
পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী মাঘের শেষ দিন ছিল গতকাল। কিন্তু তাতে কি বসন্ত যে দুয়ারে। তাই বসন্তের আগমনী রং সুবাস ছড়িয়েছে চারপাশ। হলুদ শাড়িতে তরুণীর খোঁপায় শোভা পাচ্ছে বেলি ফুলের তোড়া, মাথায় পরা গোলাপ-গাদার সুশ্রী বেনিতে দেখতে যেন অনন্যা। আর হাতে থাকা গোলাপ সামনে এগিয়ে দিয়ে প্রিয় মানুষকে হৃদয়ের গহিন থেকে বলছে- ‘ভালোবাসি প্রিয়’। ফাগুনের রঙে রঙিন তরুণরা পরেছেন হলুদ পাঞ্জাবি। ফাগুনকে সামনে রেখে তারুণ্যের এ রঙ লেগেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও। মেলায় আসা তরুণ-তরুণী, নারী-শিশুদের অনেকের গায়ে বসন্তের ছাপ দৃশ্যমান। তাইতো পোশাকে ছিল বৈচিত্র্যতা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার সম্মুখভাগ দিয়ে প্রবেশ করতেই এ এক অন্যরকম দৃশ্য চোখে পড়ে। অন্যদিন থেকে আজকের মেলাকে যে কেউ সহজে আলাদা করতে পারবে। মেলায় হলুদের ছড়াছড়ি। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের চিত্র। মেলার বিশেষ স্থানগুলোতে নিজেদের সেলফির ফ্রেমেবন্দি করছেন অনেকে। স্টল টু স্টল ঘোরাঘুরি। প্রিয় লেখকের বইয়ের অনুসন্ধান। এরপর কিনে নিয়া। শুধু কি নিজের জন্য? প্রিয় মানুষকেও এদিন বই উপহার দিতে দেখা গেছে অনেককে। এসব বইয়ের মধ্যে গল্প, কবিতা, উপন্যাস বেশি স্থান পেয়েছে। মেলার প্রস্থান গেটে দেখা যায়, যারাই বের হচ্ছেন তাদের অধিকাংশের হাতেই বই। তাইতো এদিন বেচাবিক্রিও বেড়েছে প্রকাশনাগুলোর। অন্য প্রকাশের সামনে কথা হয় রাইসা-নাদের (ছদ্মনাম) জুটির সঙ্গে। দু’জনই হলুদ শাড়ি ও হলুদ পাঞ্জাবিতে এসেছেন গ্রন্থমেলায়। ছদ্মনাম ব্যবহারের শর্তে কথা বলতে রাজি হন। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে- একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে, অন্যজন রসায়নের ছাত্র। একদিন আগেই ফাগুনের পোশাক পরার বিষয়ে বলেন, ‘আসলে বিশ্ব ভালোবাস দিবসের আগের দিন বরাবরই পহেলা ফাগুন হিসেবে পালন করে আসছি। এবার ক্যালেন্ডারের পাতায় ফাগুন না এলেও আমাদের মনে এসেছে। যার কারণে একদিন আগেই ফাগুনের পোশাক পরেছি।’ দুইজনই জানালেন, বিশেষ এ দিনে মেলায় আসার লোভ সামলাতে পারেননি। তাই পরিকল্পনা করেই গ্রন্থমেলায়। শিশু চত্বরে দেখা যায় ছয় ছুঁই ছুঁই একটি মেয়ে মাথায় ফুলের বেনি বেঁধে স্টলে স্টলে ঘুরছে মায়ের সঙ্গে। নাম তার নাজিফা তাসনীম। মেয়েকে মেলায় নিয়ে আসার বিষয়ে মা নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘আসলে ওকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আজ পহেলা ফাগুন নিয়ে আসা।’ কিন্তু আজতো পহেলা ফাগুন না বলতেই বলেন, ‘ফাগুন একদিন পরে হলেও বাঙালির হৃদয়ে আজ পালিত হচ্ছে পহেলা ফাগুন।’ এদিকে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা গতকাল একে অন্যকে বই উপহার দিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রেমিকযুগল বই উপহার দিয়েছেন একে অন্যকে। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মশিউর রহমান মেলায় এসেছেন বান্ধবীকে নিয়ে। মেলা থেকে বান্ধবী তামান্না মেহরীনকে উপহার করেছেন দু’টি বই। অন্যদিকে মেহরীনও মশিউরকে বই উপহার দিয়েছেন। দুইজনই জানালেন, এটা অন্যরকম ভালো লাগার কথা- একে অন্যকে বই উপহার দেয়ার মধ্যে। কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আজ বেচাবিক্রি ভালো চলছে। আগামীকাল দর্শনার্থীদের সমাগম আরো বাড়বে, আশা করি তখন আরো ভালো চলবে বিক্রি।’ এদিকে গত ১১ দিনে গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৪৪২টি। প্রতিদিনই মেলায় আসছে নতুন নতুন বই। মেলায় এসেছে কর্নেল মো. রাব্বি আহসানের প্রথম গ্রন্থ ‘কসমিক লাইফ’। বইটি প্রকাশ করেছে আহসান পাবলিকেশন্স। বইটিতে মানবজীবনের আবশ্যিক বিষয়গুলো লেখক গভীরভাবে স্পর্শ করেছেন। তবে সার্বিক ভালোবাসার ক্ষেত্রে লেখক নিজেকে সীমিত রেখে শুধু নিজেকে ভালোবাসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)কে নিয়ে কবি ও কথাশিল্পী আরিফ মঈনুদ্দীনের লেখা একশ’টি কবিতার সংকলন ‘দ্য প্রফেট’ বের করেছে অন্য প্রকাশ। লেখকের আরেকটি বই ‘জুরানপুরের গল্প’ প্রকাশ করেছে বিশ্বসাহিত্য ভবন। বই দু’টি মেলায় ভালো সাড়া ফেলেছে বলে জানান লেখক।