এক্সক্লুসিভ

গ্রিসে যাওয়ার পথে মৃত্যু

ছয় দিন পর বরফের নিচে মিললো লাশ

বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৮:২৭ পূর্বাহ্ন

তুর্কী থেকে গ্রিসের সীমানায় প্রবেশ করেই আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়সল (৩০)। তিনি বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মহুদ আহমদ জায়গীরদারের দ্বিতীয় ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। মারা যাওয়ার ৬ দিন পর অনেক চেষ্টা করে ১২ই ফেব্রুয়ারি গ্রিসের সীমানার কাছাকাছি পাহাড়ি এলাকায় বরফের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্রিসে বাংলাদেশের হাইকমিশনার জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, লাশ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। গ্রিসে যাত্রাপথে ফয়সলের সঙ্গী স্থানীয় এক যুবকের বরাত দিয়ে ফয়সলের ছোট ভাই রুজেল আহমদ জানান, দালালের প্ররোচনায় ফয়সলসহ কয়েকজন তুর্কী থেকে গ্রিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দালাল তাদের সঙ্গে চুক্তি করে কয়েকবার চেষ্টা করেও গ্রিসে পৌঁছাতে পারেনি। সর্বশেষ ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ফয়সলসহ কয়েকজন গ্রিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। জঙ্গল এলাকা পাড়ি দিয়ে তুর্কী থেকে গ্রিসের সীমানায় প্রবেশ করে ৭ই ফেব্রুয়ারি ভোরে। সেখান থেকে গাড়িযোগে প্রায় আধাঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে একটি নির্জন স্থানে ফয়সলসহ তার সঙ্গে থাকা ৫ জনকে নামিয়ে দেয়া হয়। ঘুম, গোসল ছাড়া অভুক্ত অবস্থায় খুবই ক্লান্ত ছিলেন তারা। সেখানে অপেক্ষমাণ অবস্থায় গ্রিসের সময় আনুমানিক বেলা একটা থেকে ২টার মধ্যে ফয়সল আকস্মিকভাবে অজ্ঞান হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে কিছু খেতে চান কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো খাবার বা পানিও ছিল না । এরপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, তুষার পাহাড়ে অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। সঙ্গীরা মুঠোফোনে ফয়সলের মৃতদেহের ছবি এবং ওই স্থানটির ছবি তোলেন। এ সময় দালালের লোকজন ফয়সলের লাশ ফেলে তার সঙ্গীদের ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে গ্রিসের দালাল লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় ওই স্থানটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ৯ই ফেব্রুয়ারি ফয়সলের সফরসঙ্গী ওই যুবক ফয়সলের বাড়িতে মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়ে মৃতদেহের ছবি পাঠান। সেই ছবি ভাইরাল হলে দূতাবাসের সহযোগিতায় ওই স্থানটি চিহ্নিত করে বরফের তল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সল এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়া আর করেননি। স্থানীয় বোয়ালজুড় বাজারে ছোটখাটো একটা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বেশ কয়েক বছর পূর্বে ভিসা নিয়ে ওমান যান। তার বড় ভাই আলীমুল হাসানও সেখানে থাকেন। ওমান থাকাবস্থায় কয়েকবার দেশে আসা-যাওয়া করেছেন। মাস ছয়েক পূর্বে তিনি ওমান থেকে ইরাক হয়ে তুর্কী যান। সেখানে তিনি ভালোই ছিলেন। নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। সর্বশেষ ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে তার জন্য দোয়া করার কথা বললেও গ্রিসে যাওয়ার বিষয়টি জানাননি। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফয়সলের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। পুত্র শোকে তার অসুস্থ পিতা ও মা খেলা বেগম চৌধুরী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শেষবারের মতো তারা ছেলের লাশটি একনজর দেখার আকুতি জানিয়েছেন। নির্বাক ভাই-বোনসহ বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়িতে জড়ো হয়ে তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status