শিক্ষাঙ্গন
খুবিতে মাদকাসক্ত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাতভর নির্যাতন
খুবি প্রতিনিধি
৩০ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে ইংরেজি ডিসিপ্লিনের ২য় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মাদকাসক্ত অবস্থায় রাতভর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে একই ডিসিপ্লিনের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে গত ২৮শে জানুয়ারি (বুধবার) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিসিপ্লিন প্রধান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
লিখিত অভিযোগে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানায়, গত কয়েকদিন যাবৎ তারা খেলার মাঠে ও অন্যান্য যায়গায় তথাকথিত মিটিং এর নামে হেনস্তার শিকার হচ্ছিলেন। যার ক্ষোভ থেকে তারা চতুর্থ বর্ষের মশিউর রাজাকে আপত্তিকর দুইটি ম্যাসেজ পাঠায়। তারা দাবী করেন, গত এক বছর ধরে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যে বিরুপ আচরণ করা হয় তারই প্রতিক্রিয়া স্বরুপ এই খুদে বার্তা পাঠানো হয়।
এই ক্ষুদে বার্তার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাত ১২ টার দিকে ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান (রাজা) ২য় বর্ষের আখতারুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বঙ্গবন্ধু হলের ২০৭ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, একই ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজ বর্মন (বিধান), মিনহাজুর রহমান, ফাহাদ রহমান (অঝোর) এবং মার্স্টাসের শিক্ষার্থী সাবেরুল বাশার (নিরব)।
লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, ঐ কক্ষে উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনরত অবস্থায় তাশ খেলছিলেন৷ তাশ খেলা শেষে তারা আখতারুল ইসলামের কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর কারণ জানতে চায় এবং একই সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে আখতার ভীত হয়ে বলতে না চাইলে তার উপরে শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে আখতার ভুল স্বীকার করে কাঁদতে কাঁদতে মশিউর রহমান রাজার পা ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু এরপরও তারা অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যায়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে আখতারের মাধ্যমে ফোনে তার সহপাঠি মোঃ আশিকুর রহমানকে উক্ত রুমে ডেকে পাঠায়।
আশিক রুমে আসলে তাকেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। সে ক্ষুদে বার্তায় পাঠানোর জন্য ক্ষমা চাইলে তাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে চর-থাপ্পর, লাথি দেয়া ও এক পর্যায় লাঠি দিয়ে হাতে পেটানো হয়।
এরপর আনুমানিক ভোর চারটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মোঃ মহিদুজ্জামানকে ডেকে নেয়। সেসময় তার সামনেই আশিক ও আখতারকে ফের শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
এরপর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে একই কক্ষে ডেকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ তার অভিভাবকের ফোন নম্বর নেয়া হয়। ফোন নাম্বার দেয়ার পরও রাজা তাকে থাপ্পর মারে এবং বিধান তাকে কানে আঘাত করে এবং চুল ও সোয়েটারের কলার ধরে টানা হেচড়া করে।
পরবর্তীতে ভোর ৬ টায় মহিদুজ্জামান ও আশিকের মাধ্যমে ২য় বর্ষের তানজিম হাসান অপু, হাবিবুর রহমান এবং রাকিব হাসানকে তাদের মেসের রুম থেকে বঙ্গবন্ধু হলের একই কক্ষে ডেকে নেয়। সবাই উপস্থিত হলে মেহেদি হাসানকে বিধান তার বাবা মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে থেকে ৫ জনের জোর পূর্বক লিখিত বিবৃতি ও সাক্ষর ও নিয়ে তা ভিডিও ধারণ করে রাখে।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে জানা যায় রাতভর নির্যাতন শেষে মশিউর রহমান রাজা উপস্থিত সকলকে ক্যাম্পাসে রাজু নামে এক বহিরাগত ব্যক্তির দ্বারা পেটানোর হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু বিচরণে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তারা বর্তমানে ভীত।
অভিযুক্তদের মধ্যে মশিউর রহমান রাজার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ইংরেজি ডিসিপ্লিনে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা একপ্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষীদের কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।
ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক এ আর এম মুস্তাফিজার রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে প্রফেসর মোঃ ইমদাদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্তদের নামে পূর্বেও এ ধরনের অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন কিছু সংখ্যক শিক্ষক।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন, আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মোঃ শরিফ হাসান লিমনের সঙ্গেও কথা বলে জানা যায় ইতোপূর্বে তারা মাদক সেবনের দায়ে দুইবার অভিযুক্ত ও একবার মুচলেকা দিয়েছেন।