বিশ্বজমিন

আশ্রয় শিবিরে খ্রিস্টান-মুসলিম রোহিঙ্গা সংঘর্ষ

মানবজমিন ডেস্ক

২৮ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৪:১০ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে খ্রিস্টান রোহিঙ্গা ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবারের ওই সংঘর্ষের জন্য এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করছে। করা হচ্ছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। এ নিয়ে অনলাইন বেনার নিউজ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ১২ রোহিঙ্গা শরণার্থী খ্রিস্টান। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে দাবি করেছে ভারতের রোহিঙ্গা খ্রিশ্চিয়ান অ্যাসেম্বলি নামের একটি গ্রুপ। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে এই সহিংসতার কথা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে এতে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি’র (আরসা) জড়িত থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, সাধারণ আইন শৃংখলা বিষয়ক এক ঘটনায় চারজন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এবং একজন মুসলিম আহত হয়েছেন। কুতুপালংয়ে শরণার্থী শিবিরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, কুতুপালং শিবির থেকে বেনার নিউজকে সাইফুল নামের একজন খ্রিস্টান বলেছেন, সোমবার সকালে আমাদের ওপর, খ্রিস্টানদের ওপর ওপর হামলা চালায় আরসা। তারা আমাদের বাড়িঘর লুট করে। অনেক ক্রিস্টান সদস্যকে প্রহার করে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন কমপক্ষে ১২ জন খ্রিস্টান। সাইফুল আরো বলেছেন, তার সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই মিয়ামনারে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছেন। ২০০৭ সালে মিয়ানমারের মংডুর বউলিবাজার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রবেশ করেন বাংলাদেশে। সোমবার তিনি অভিযোগে বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। গত বছর ১০,১১ ও ১৩ ই মে সন্ত্রাসীদের একই গ্রুপ আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা চায় আমরা এই আশ্রয় শিবির ছেড়ে চলে যাই। তারা পর্যায়ক্রমিকভাবে আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

তার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে কক্সবাজারের উখিয়া পুলিশ। ওসি মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেছেন, আরসার হামলা চালানোর খবর সঠিক নয়। এটি একটি সাধারণ আইন শৃংখলা বিষয়ক ঘটনা। বাকবিতণ্ডার পর সাইফুল নামে একজন রোহিঙ্গা খ্রিস্টান রোববার শুক্কুর নামে আরেক রোহিঙ্গা মুসলিমের ওপর হামলা চালায়। এতে শুক্কুর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপরই শুক্কুরের আত্মীয়-স্বজনরা সাইফুলের পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালায়। এতে সাইফুলের চারজন আত্মীয় আহত হন। তবে কি নিয়ে বাকবিতণ্ডা সে বিষয়ে স্পষ্ট করেন নি আবুল মনসুর।
আমিন মাঝি নামে একজন বলেছেন, খ্রিস্টানদের আবাসনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন শুক্কুর নামের রোহিঙ্গা মুসলিম। এ সময় তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় খ্রিস্টান পরিবারগুলো। তারা তাকে প্রহার করে। এরপর মুসলিমরা সংঘবদ্ধ হয়ে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।

আরসা হলো রোহিঙ্গাদের একটি উগ্রপন্থি গ্রুপ। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন। এর ফলে বাধ্য হয়ে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তাদের আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের উপস্থিতির অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সরকার ও পুলিশ সূত্রগুলো বেসরকারিভাবে কিছু বিদ্রোহীকে গ্রেপ্তারের বিষয় স্বীকার করেছে।

ভারতের রোহিঙ্গা ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসেম্বলির মাধ্যমে সোমবারের সংঘর্ষের কথা জানতে পারে বেনার নিউজ। ওই গ্রুপটি তাদেরকে একটি ইমেইলে বলেছে, রোববার রাতে আরসা হামলা চালিয়েছে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। এতে প্রায় ২৫টি খ্রিস্টান পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন শীতকাল ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। হামলার শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে অনেক ছোট ছোট শিশু রয়েছে। এতে আরো বলা হয়, অনেক গ্রুপের কয়েক শত মানুষ খ্রিস্টানদের প্রতিটি বাড়িতে রাতের অন্ধকারে প্রবেশ করে এবং রামদা ব্যবহার করে বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়। এতে ১২ জন খ্রিস্টান রোহিঙ্গা মারাত্মক আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশের ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন বেনার নিউজকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এখন ও কোনো হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। দেখতে পাই খ্রিস্টানদের কিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সেখান থেকে পালিয়েছে।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status