শেষের পাতা

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক

আইসিজে’র রায় মিয়ানমারের মিত্র দেশগুলোর অবস্থান পরিবর্তনে প্রভাব ফেলবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৬ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. শহিদুল হক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় পুঞ্জীভূত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের মিত্র দেশগুলোর অবস্থান পরিবর্তনে প্রভাব ফেলবে। রায়ের পর দেশগুলোর নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ চীন ও রাশিয়ার ভোটের কারণে কোনো স্টেটম্যান্ট বা বিবৃতি দিতে পারেনি। এ নিয়ে বৃটেনসহ পশ্চিমা দুনিয়ার সদস্যরা নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন গ্রহণের চেষ্টা করে। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার ভোটে তা আটকে যায়। প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা সংকটের দ্বিপক্ষীয় সমাধানে চীন মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। আর রাশিয়া ইস্যুটির আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধী।

এ অবস্থায় বিশ্ব আদালতের রায় দেশগুলোর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে? জানতে চাইলে প্রায় ৭ বছর পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বপালনকারী শহীদুল হক বলেন, তারা প্রতিক্রিয়া দিতে হয়ত একটু সময় নিচ্ছে। কিন্তু আমি বলবো এ রায়ে তাদের পজিশন রিভিজিট করতে হবে। আইসিজের রায় পর্যালোচনায় শনিবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে মিস্টার হক এ মন্তব্য করেন। ‘রোহিঙ্গা সংকট: জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার’ শীর্ষক ওই পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বিশ্ব বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ এর ফ্যাকাল্ডিম স্টুডেন্ট ছাড়াও কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতি-ডিকাব সদস্যরা অংশ নেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে সদ্য সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাখাইনে গণহত্যার আলামত নষ্ট না করা এবং নতুন করে কোন গণহত্যা সংঘঠিত না হয় সেজন্য বাধ্যতামূলক এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব আদালতের রায়ে স্পষ্ট নির্দেশরা রয়েছে।

মিয়ানমারকে আদালতের সর্বসম্মত ওই রায় মানতে হবে এবং ৪ মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। মিয়ানমারের আবেদনে কতটা সত্য বা মিথ্যা স্থান পেয়েছে সেটি পর্যালোচনা করে বাদি গাম্বিয়াকে আদালতে ছায়া প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সব মিলে আদালতের এমন পদক্ষেপে কড়া রায়ে মিয়ানমারের অবশিষ্ট থাকা প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা গণহত্যা থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করে মিস্টার হক। তিনি রুয়ান্ডার গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে বিশ্ব আদালতের রায়ের পর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সেখানে রায়ের ক’বছরের মধ্যে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতায় মিয়ানমারে বিশেষত রাখা্‌ইনে যেনো এমনটি না হয়, সে জন্য সুচি সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায় নিশ্চিতভাবে তদারকি করবে বলে মনে করেন তিনি।

সচিব বলেন, বাংলাদেশের ওপরও এ রায়ের প্রভাব রয়েছে। প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টিতে রায়টি সহায়ক হবে। রাখাইনে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত হলে বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় পাওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাও ফিরতে উৎসাহিত হবে। মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নিয়ে হয়ত আদালতকে অবহিত করে গণহত্যার বিচার হালকা করার চেষ্টা করবে। সচিব বলেন, সব নির্ভর করবে মিয়ানমারের সদিচ্ছার ওপরে। তবে এখন আর মিয়ানমার তার দায়িত্ব আগের মত এড়িয়ে যেতে পারবে না, কারণ বিষয়টি আদালতের মনিটরিংয়ে থাকবে। তবে প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসাবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ এবং প্রত্যাবাসনে চেষ্টায় বিদম্যান ম্যাকানিজমও বহাল থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

বলেন, আইসিজের রায়ের বড় অর্জন হচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে থাকা রোহিঙ্গারা জাতি হিসাবে এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনার বেনাওয়ে প্রিফন্টেইন বলেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ নাগরিকের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের মানুষ তাদের সীমান্ত এবং হৃদয় খুলে দিয়ে যে মহানুভবতা দেখিয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞতা। আইসিজে যে রায় দিয়েছে, তাতে কানাডা সন্তুষ্ট। তবে এটি শুধু শুরু, আমাদের লড়াই করতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের অধিকার এবং সুরক্ষায় কানাডা কখনও পিছপা হবে না বলেও জানান হাই কমিশনার। বলেন, মিয়ানমার কয়েক মাসে কী করে, তা দেখার বিষয়, তবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আমরা জানি, আইসিজের সিদ্ধান্ত একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়সহ নিরাপত্তা কাউন্সিলকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে কানাডা, যোগ করেন কানাডার হাইকমিশনার বেনাওয়ে প্রিফন্টেইন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status