শেষের পাতা
পাথর লুটে অঢেল সম্পদ
শ্রমিক হত্যায় গ্রেপ্তার আইয়ুব
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন
সিলেটের শারপিন টিলার আলোচিত পাথরখেকো আইয়ুব আলী। শারপিন টিলায় গত ৩ বছরে যে কয়েকজন পাথরখেকোর গর্তে মানুষ মৃত্যুর মিছিল হয়েছে তার মধ্যে আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন গর্ত অন্যতম। আরেক আলোচিত পাথরখেকো বশরের পর আইয়ুবের নাম সিলেটে বেশি পরিচিত। তার গর্তে শ্রমিক মরলেই লাশ গুমের ঘটনা ঘটতো। পুলিশ ও প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে আইয়ুব ও তার সিন্ডিকেট গোপনে লাশ সরিয়ে ফেলতো। তার কারণেই অস্থিরতা বিরাজ করে সিলেটের প্রশাসনে। বেপরোয়া পাথর উত্তোলনের ফলে শারপিন টিলা ধ্বংস করার অন্যতম হোতা সে। মলাই টিলা সহ শারপিনের একাংশের মালিকও সে। প্রশাসনের কড়া নজরদারির পরও সম্প্রতি সময়ে পাথর উত্তোলনে আইয়ুব ছিলো বেপরোয়া। গত সোমবার আইয়ুবের গর্তে পড়ে লিটন মিয়া নামের এক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। আর এ ঘটনায় টনক নড়ে প্রশাসনের। এ নিয়ে মামলায় আইয়ুবকে করা হয় আসামি। এরপর থেকে পলাতক ছিলো আইয়ুব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গোয়েন্দারা জানায়- গ্রেপ্তারের পর আইয়ুব আলী তার অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ জানায়, আইয়ূব আলীর বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরিফিনসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলনসহ বিপজ্জনক স্থানে শ্রমিকদের জোরপূর্বক পাথর উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে বাধ্য করে নিরীহ শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় সে জড়িত। এছাডা তার বিরুদ্ধে ৩টি খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৭ মামলা রয়েছে। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছেন- কোম্পানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ টাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযানের পরও একটি চক্র পরিবেশ ধ্বংস করে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনে অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করেছে। এতে বিভিন্ন সময় নিরীহ শ্রমিক মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের জন্য ডিবিসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে, আইয়ুব আলী গ্রেপ্তারের পর সিলেটের কোম্পানীঞ্জের পাথরখেকো সিন্ডিকেটের মধ্যে আতঙ্ক নেমে এসেছে। অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। আইয়ুব আলী। বয়স প্রায় ৫৫ বছর। পাথরখেকো হিসেবে কোম্পানীগঞ্জে নয়, সিলেটেও পরিচিত। কোটি কোটি টাকার মালিক সে। বাড়ি শারপিন টিলার পার্শ্ববর্তী চিকাঢর গ্রামে। পিতার নাম মৃত মনফর আলী। শারপিন টিলার অন্যান্য খাদকের সঙ্গে আইয়ুব আলীর সম্পৃক্তরা রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- পাথর লুটের শীর্ষ ধনী আইয়ূব আলী। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক সে। কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলার কাছে নারায়ণ, চিকাগড় ও মলাই টিলা এলাকায় তার তিনটি বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়ি কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে শহরের আঙ্গিকেই নির্মাণ করা হয়েছে। শারপিন টিলায় প্রায় ২০ কিয়ার জমির মালিক সে। প্রায় ১৪ কিয়ার জমিজুড়ে বিশাল গর্ত রয়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে কোম্পানীগঞ্জে ইউএনও সুমন আচার্য শারপিন টিলার তিনটি প্রবেশ পথ স্থায়ী বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে আইয়ুব আলী ও সিন্ডিকেটরা প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে নিজের বিশাল গর্তের প্রায় ৫০ ফুট নিচ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর তুলতো। তার মালিকানাধীন রয়েছে ৫০টির মতো ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর দিয়ে সে চোরাই পথে পাথর নিয়ে বের হতো। সর্বশেষ সোমবার গর্তে পড়ে মানুষ মৃত্যুর পর তার পাথর লুটের ঘটনায় প্রশাসন সক্রিয় হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়- আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে শহরতলীর সালুটিকর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে রাতে তাকে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সিলেট জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি (মিডিয়া) আমিনুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- গতকাল শুক্রবার আইয়ুব আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি জানান- পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। শারপিন টিলা ধ্বংসের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাথরখেকোদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিলো। সেই তালিকায় আইয়ুবের নাম ছিলো। এরপরও আইয়ূব ছিলো বেপরোয়া। তার গর্তে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় গত ৩ বছরে সে অন্তত ৩ বার কারাবরণ করেছে। কারাগারে থাকলেও সিন্ডিকেট গড়ে তোলার কারণে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়নি।