দেশ বিদেশ

পলাশকে দায়ী করে বিমান ছিনতাই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৫ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আলোচিত বিমান ছিনতাই মামলার ঘটনায় প্যারা কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদকে দায়ী করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় বৃহসপতিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয় বলে জানান  মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। তিনি বলেন, গত বছর ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং-৭৩৭ ময়ূরপঙ্খী বিমানটি মাঝআকাশে ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা টানটান উত্তেজনার পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করে। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পিস্তলধারী যুবক পলাশ আহমেদ। তিনি চিত্রনায়িকা শিমলার সাবেক স্বামী।  তদন্তে দেখা যায়, নিহত পলাশ আহমেদ একাই একটি খেলনা পিস্তল ও বোমা সদৃশ বস্তু নিয়ে আকাশে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় আর কারও সমপৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। রাজেশ বড়ুয়া জানান, মামলার তদন্তে শিমলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু, বিমানযাত্রী, আসামি পলাশের স্বজন, বন্ধু, অভিযান পরিচালনাকারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ মোট ৭৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালতে ৩০৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা করা হয়। প্রতিবেদনের সঙ্গে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশসহ পলাশের গতিবিধির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের অডিও এবং ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা বুলেটের খোসাও জমা দেওয়া হয়েছে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার দিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম বিমানের অভ্যন্তরে অভিযান শুরুর আগে মাইকে আসামিকে আত্মসমর্পণ করার অনুরোধ জানান। তাতেও সাড়া না দেয়ায় সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে বিমানের ভেতরে অভিযান শুরু করে ৭টা ২৫ মিনিটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আসামিকে বিমানের বাইরে নামিয়ে আনেন। এরপর সে মারা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পলাশ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা বারুদ বিস্ফোরণের ভয় দেখিয়ে বিমানের অভ্যন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করে যাত্রী, পাইলট, কেবিন ক্রুদের আতঙ্কিত করে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬ এবং ১৯৯৭ সালের বিমান-নিরাপত্তাবিরোধী অপরাধ দমন আইনের ১১ (২) ও ১৩ (২) ধারায় অপরাধের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া যায়।

সিআইডির ফরেনসিক প্রতিবেদন মতে, পলাশের সঙ্গে থাকা পিস্তলটি ছিল প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা অস্ত্র। তবে এই খেলনা পিস্তলে রবারের গোলাকার বল নিক্ষেপ করা যায় এবং মৃদু শব্দ হয়। এ পিস্তলে কোনো কার্তুজ স্থাপন করে গুলি করা সম্ভব নয়। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা স্কচটেপ মোড়ানো সাতটি প্লাস্টিকের পাইপ, ২৪টি এলইডি বাল্ব, সার্কিট, ব্যাটারি একত্র করে বোমা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেখানেও কোনো বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ ছিল না। বিমানে পলাশ পটকা ফুটিয়েছিল বলে উদ্ধার করা আলামত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি থেকে উল্লেখ করা হয়। ওই ঘটনায় পলাশসহ কয়েকজনকে আসামি করে পতেঙ্গা থানায় ২৫শে ফেব্রুয়ারি মামলা করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

পলাশের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরে চুড়ান্ত প্রতিবেদনে। বিমানে অভিযানের পরে আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে জানা যায় নিহত যুবক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের দুধঘাটা এলাকার পিয়ার জাহান সরদারের ছেলে পলাশ আহমেদ। পলাশ ২০১২ সালে তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। পরবর্তীতে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে সোনারগাঁ সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। শিক্ষা সনদে পলাশের নাম মো. সাকিব হোসাইন উল্লেখ ছিল। পলাশের মা-বাবার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ২০১৪ সালে পলাশ বাবা-মার অমতে এক নারীকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন। স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে তিনি কয়েকবার নেপাল ও ভুটানে যান। তার একটি সন্তানও রয়েছে। নির্যাতনের কারণে ওই স্ত্রী পলাশকে তালাক দিয়ে চলে যান। ২০১৬ সালে পলাশকে তার পরিবার চাকরির জন্য মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিলেও এক মাসের মধ্যে তিনি ফিরে আসেন এবং ঢাকায় অবস্থান করলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। চিত্রনায়িকা শিমলার প্রসঙ্গে বলা হয়, বিয়ের পর ২০১৮ সালের ৫ই নভেম্বর চিত্রনায়িকা সিমলা পলাশকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে মুম্বাই চলে যান। শিমলার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে না পেরে ২৬শে নভেম্বর পলাশ ভারতে যান। কিন্তু যোগাযোগ করতে না পেরে দুদিন পর পলাশ দেশে ফিরে এলেও পাওনাদারদের ভয়ে আত্নগোপন করেন। দুই মাস পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পলাশ গ্রামের বাড়ি যান।  ২২শে ফেব্রুয়ারি পলাশ দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামের বিমান টিকিট কাটেন। ২৪শে ফেব্রুয়ারি সাড়ে ৪টায় বিমানটি ঢাকা থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরের কারণে ৫টা ১৩মিনিটে ৫৮ জন চট্টগ্রামের যাত্রী (ডমেস্টিক) ও ৮৫ জন দুবাইগামী যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status