শেষের পাতা
বিশ্বে গণতন্ত্রের পশ্চাৎযাত্রা
‘হাইব্রিড শাসনাধীন’ দেশ বাংলাদেশ
মানবজমিন ডেস্ক
২৩ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন
সামপ্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বজুড়ে অবনতি হচ্ছে গণতন্ত্রের। গত বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বজুড়ে অবনমন হয়েছে শাসনব্যবস্থার। লন্ডন-ভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গণতন্ত্র সূচক নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটা বলেছে। সূচকে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। গত বছর থেকে স্কোর হিসেবে অপেক্ষাকৃত উন্নতি করলেও অবস্থানগতভাবে কোনো উন্নতি হয়নি দেশটির। গতবারের মতো এবারো ‘হাইব্রিড শাসনাধীন’ দেশ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশকে।
বুধবার প্রকাশিত ‘ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতি হয়েছে। ১৬৭টি দেশের জরিপ চালিয়ে এ সূচক তৈরি করা হয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া, নানাত্ববাদ, সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ , রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক স্বাধীনতা বিচার করে দেশগুলোকে স্কোর দেয়া হয়েছে। সূচকে ৫.৮৮ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। আঞ্চলিক পর্যায়ে সে অবস্থান ১৭তম। ২০১৮ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে মোট ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ছিল ৫.৫৭। এ ছাড়া সূচকে একই রকম অগ্রগতি হয়েছে আর্মেনিয়া, এল সালভাদর, গিনি বিসাউ, মাদাগাস্কার, সুদান, টোগো, তিউনিশিয়া সহ মোট ১০টি দেশের। তবে ১০ পয়েন্ট পিছিয়েছে ভারত। ১০ এর মধ্যে ৯.৮৭ পয়েন্ট নিয়ে সূচকের শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এছাড়া শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্যান্য দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড। এদিকে, ১.০৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার একেবারে তলানিতে স্থান পেয়েছে উত্তর কোরিয়া।
সূচকে দেশগুলোকে স্কোর ভিত্তিতে ৪টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে- পূর্ণ গণতান্ত্রিক, ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক, হাইব্রিড শাসনাধীন ও কর্তৃত্ববাদী। এতে ৮.১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকা দেশগুলোকে পূর্ণ গণতান্ত্রিক, যেগুলোর ৬.১ থেকে ৮.০ এর মধ্যে সেগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক, যেগুলোর স্কোর ৪.১ থেকে ৬.০ প্রাপ্তগুলোকে হাইব্রিড শাসনাধীন ও ১ থেকে ৪.০ মধ্যে থাকা দেশগুলোকে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মোট ৫টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১. নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ। ২. সরকারের কার্যকারিতা। ৩. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। ৪. গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ৫. নাগরিক স্বাধীনতা। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদের পরিমাপকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৭.৮৩। সরকারের কার্যকারিতা পরিমাপকে বাংলাদেশ ১০ পয়েন্টে পেয়েছে ৬.০৭। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ পরিমাপকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬.১১। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪.৩৮ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় ১০ পয়েন্টের মধ্যে পেয়েছে ৫। বাংলাদেশের সবচেয়ে কম স্কোর হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। এরপরেই রয়েছে নাগরিক স্বাধীনতা।
এসব সূচকের ওপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে, গত বছর সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের অবনমন হয়েছে। ২০০৬ সালে এই সূচকের প্রচলন করা হয়। তারপর থেকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে গত বছর সর্বনিম্ন ছিল বৈশ্বিক স্কোর- ৫.৪৪। সূচক অনুসারে, ১৬৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ২২টি দেশে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ছিল। এসব দেশে বসবাস করেন ৪৩ কোটি মানুষ। অন্যদিকে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি এখনো বসবাস করেন কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে।
গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার দ্রুত অবনমন হয়েছে চীনে। সেখানকার পশ্চিমাঞ্চলীয় সিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ডিজিটাল নজরদারির মতো অন্যান্য নাগরিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ফলে চীনা স্কোর পতনে অবদান রেখেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের স্কোর ৩.৩২ থেকে কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২.২৬।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয় ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার। এ ছাড়া আসামে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে নাগরিকত্বের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এসব মানুষের বেশির ভাগই মুসলিম অধিবাসী। তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূচকের অবনমনে এটি ভূমিকা রেখেছে। ওই সূচকে ৫১তম অবস্থান নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় অবস্থান করছে ভারত। ডিসেম্বরে বৈষম্যমূলকভাবে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন। এই প্রক্রিয়া ২০২০ সালের সূচকে দেশটির অবনমন ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এবারকার সূচকে ভারতে অবনমন হয়েছে ১০ পয়েন্ট। ২০১৮ সালে ১০ পয়েন্টের মধ্যে তাদের অর্জন ছিল ৭.২৩। ২০১৯ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬.৯০। এর কারণ দেশের ভেতর নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষয়। দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি)-এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে প্রায় ১৯ লাখ মানুষকে রাখা হয় তালিকার বাইরে। এর বেশির ভাগই মুসলিম। বিজেপি বলেছে, এই তালিকায় যারা বাদ পড়েছেন তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি অভিবাসী। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করছে। সমালোচকরা বলছেন, মুসলিম জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করা এবং জনসংখ্যাতত্ত্ব পাল্টে দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। এখন প্রায় ২০ কোটি মুসলিম বসবাস করে ভারতে। ২০১৫ সালে তাদের সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার। পিউ রিচার্স সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব মুসলিম ভারতের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৪.৯ ভাগ। সারা বিশ্বে মোট মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা ১০.৫ ভাগ এই মুসলিমরা। যদি বর্তমান হারে সেখানে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে ২০৬০ সাল নাগাদ তারাই হবে বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ। তখন ভারতে মুসলিমের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৯.৪ ভাগে দাঁড়াতে পারে। নতুন করে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। বড় বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
মাল্টায় সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী ও সাংবাদিক ডাফনে কারুনা গালিজিয়ার খুনিদের সম্পর্কের বিষয় আবিষ্কার হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকাট পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ইকোনমিস্টের সূচক চালুর পর প্রথমবারের মতো, মাল্টা ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। এতে ভূমিকা রেখেছে সেখানকার রাজনৈতিক সংকট।
সাব সাহারান আফ্রিকার ৪৪টি দেশের অর্ধেকই এই সূচকে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসক শ্রেণিতে পড়েছে। ২৩টি দেশ দেখতে পেয়েছে তাদের গণতান্ত্রিক স্কোর কমে গেছে। উন্নতি হয়েছে মাত্র ১১টি দেশে। এসব অবনমনের জন্য দায়ী করা যেতে পারে ওই অঞ্চলে অগণতান্ত্রিক নির্বাচনকে। এমন নির্বাচন হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে সেনেগালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। সেখানে ম্যাকি সাল-এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়।
তবুও অন্ধকারের নিচে কিছু আলো দেখা যেতে পারে। ফ্রান্সে ইয়েলো জ্যাকেট বিক্ষোভের জবাবে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ধারাবাহিকভাবে টাউন হল মিটিং আহ্বান করেন। এর নাম দেয়া হয় ‘গ্রেট ন্যাশনাল ডিবেট’। এতে অনলাইনে যুক্ত হন প্রায় ২০ লাখ নাগরিক। ফলে ফ্রান্সকে ‘পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের’ মর্যাদা ধরে রাখতে এই প্রচেষ্টা সহায়ক হয়েছে। দেশে উচ্চ পর্যায়ের অসমতা ইস্যুতে চিলিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন সরকার সর্বনিম্ন বেতন বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্ষোভের জবাব দেয়। এতে সম্পদশালীদের কর বৃদ্ধি করা হয়। একই সঙ্গে সরকার এ বছরে সেখানে একটি নতুন সংবিধানের ওপর গণভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু যথেষ্ট মূল্যের বিনিময়ে এসেছে এই সংস্কার। ওই বিক্ষোভে মারা গেছেন কমপক্ষে ২০ জন। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এতে আরো বলা হয়েছে, সূচকের শীর্ষ স্থান ও একেবারে নিচের সারিতে অবস্থান করা দেশগুলোর মধ্যে বড় ধরনের কোনো নড়চড় হয়নি। তবে তিনটি দেশ চিলি, ফ্রান্স ও পর্তুগাল ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ ক্যাটাগরি থেকে ‘পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। ইরাক ও ফিলিস্তিন ‘হাইব্রিড শাসন’ থেকে অবনমনের ফলে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠীর তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত ‘ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতি হয়েছে। ১৬৭টি দেশের জরিপ চালিয়ে এ সূচক তৈরি করা হয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া, নানাত্ববাদ, সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ , রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক স্বাধীনতা বিচার করে দেশগুলোকে স্কোর দেয়া হয়েছে। সূচকে ৫.৮৮ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। আঞ্চলিক পর্যায়ে সে অবস্থান ১৭তম। ২০১৮ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে মোট ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ছিল ৫.৫৭। এ ছাড়া সূচকে একই রকম অগ্রগতি হয়েছে আর্মেনিয়া, এল সালভাদর, গিনি বিসাউ, মাদাগাস্কার, সুদান, টোগো, তিউনিশিয়া সহ মোট ১০টি দেশের। তবে ১০ পয়েন্ট পিছিয়েছে ভারত। ১০ এর মধ্যে ৯.৮৭ পয়েন্ট নিয়ে সূচকের শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এছাড়া শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্যান্য দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড। এদিকে, ১.০৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার একেবারে তলানিতে স্থান পেয়েছে উত্তর কোরিয়া।
সূচকে দেশগুলোকে স্কোর ভিত্তিতে ৪টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে- পূর্ণ গণতান্ত্রিক, ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক, হাইব্রিড শাসনাধীন ও কর্তৃত্ববাদী। এতে ৮.১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকা দেশগুলোকে পূর্ণ গণতান্ত্রিক, যেগুলোর ৬.১ থেকে ৮.০ এর মধ্যে সেগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক, যেগুলোর স্কোর ৪.১ থেকে ৬.০ প্রাপ্তগুলোকে হাইব্রিড শাসনাধীন ও ১ থেকে ৪.০ মধ্যে থাকা দেশগুলোকে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মোট ৫টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১. নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ। ২. সরকারের কার্যকারিতা। ৩. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। ৪. গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ৫. নাগরিক স্বাধীনতা। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদের পরিমাপকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৭.৮৩। সরকারের কার্যকারিতা পরিমাপকে বাংলাদেশ ১০ পয়েন্টে পেয়েছে ৬.০৭। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ পরিমাপকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬.১১। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪.৩৮ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় ১০ পয়েন্টের মধ্যে পেয়েছে ৫। বাংলাদেশের সবচেয়ে কম স্কোর হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। এরপরেই রয়েছে নাগরিক স্বাধীনতা।
এসব সূচকের ওপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে, গত বছর সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের অবনমন হয়েছে। ২০০৬ সালে এই সূচকের প্রচলন করা হয়। তারপর থেকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে গত বছর সর্বনিম্ন ছিল বৈশ্বিক স্কোর- ৫.৪৪। সূচক অনুসারে, ১৬৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ২২টি দেশে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ছিল। এসব দেশে বসবাস করেন ৪৩ কোটি মানুষ। অন্যদিকে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি এখনো বসবাস করেন কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে।
গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার দ্রুত অবনমন হয়েছে চীনে। সেখানকার পশ্চিমাঞ্চলীয় সিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ডিজিটাল নজরদারির মতো অন্যান্য নাগরিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ফলে চীনা স্কোর পতনে অবদান রেখেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের স্কোর ৩.৩২ থেকে কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২.২৬।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয় ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার। এ ছাড়া আসামে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে নাগরিকত্বের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এসব মানুষের বেশির ভাগই মুসলিম অধিবাসী। তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূচকের অবনমনে এটি ভূমিকা রেখেছে। ওই সূচকে ৫১তম অবস্থান নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় অবস্থান করছে ভারত। ডিসেম্বরে বৈষম্যমূলকভাবে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন। এই প্রক্রিয়া ২০২০ সালের সূচকে দেশটির অবনমন ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এবারকার সূচকে ভারতে অবনমন হয়েছে ১০ পয়েন্ট। ২০১৮ সালে ১০ পয়েন্টের মধ্যে তাদের অর্জন ছিল ৭.২৩। ২০১৯ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬.৯০। এর কারণ দেশের ভেতর নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষয়। দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি)-এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে প্রায় ১৯ লাখ মানুষকে রাখা হয় তালিকার বাইরে। এর বেশির ভাগই মুসলিম। বিজেপি বলেছে, এই তালিকায় যারা বাদ পড়েছেন তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি অভিবাসী। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করছে। সমালোচকরা বলছেন, মুসলিম জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করা এবং জনসংখ্যাতত্ত্ব পাল্টে দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। এখন প্রায় ২০ কোটি মুসলিম বসবাস করে ভারতে। ২০১৫ সালে তাদের সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার। পিউ রিচার্স সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব মুসলিম ভারতের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৪.৯ ভাগ। সারা বিশ্বে মোট মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা ১০.৫ ভাগ এই মুসলিমরা। যদি বর্তমান হারে সেখানে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে ২০৬০ সাল নাগাদ তারাই হবে বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ। তখন ভারতে মুসলিমের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৯.৪ ভাগে দাঁড়াতে পারে। নতুন করে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। বড় বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
মাল্টায় সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী ও সাংবাদিক ডাফনে কারুনা গালিজিয়ার খুনিদের সম্পর্কের বিষয় আবিষ্কার হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকাট পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ইকোনমিস্টের সূচক চালুর পর প্রথমবারের মতো, মাল্টা ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। এতে ভূমিকা রেখেছে সেখানকার রাজনৈতিক সংকট।
সাব সাহারান আফ্রিকার ৪৪টি দেশের অর্ধেকই এই সূচকে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসক শ্রেণিতে পড়েছে। ২৩টি দেশ দেখতে পেয়েছে তাদের গণতান্ত্রিক স্কোর কমে গেছে। উন্নতি হয়েছে মাত্র ১১টি দেশে। এসব অবনমনের জন্য দায়ী করা যেতে পারে ওই অঞ্চলে অগণতান্ত্রিক নির্বাচনকে। এমন নির্বাচন হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে সেনেগালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। সেখানে ম্যাকি সাল-এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়।
তবুও অন্ধকারের নিচে কিছু আলো দেখা যেতে পারে। ফ্রান্সে ইয়েলো জ্যাকেট বিক্ষোভের জবাবে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ধারাবাহিকভাবে টাউন হল মিটিং আহ্বান করেন। এর নাম দেয়া হয় ‘গ্রেট ন্যাশনাল ডিবেট’। এতে অনলাইনে যুক্ত হন প্রায় ২০ লাখ নাগরিক। ফলে ফ্রান্সকে ‘পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের’ মর্যাদা ধরে রাখতে এই প্রচেষ্টা সহায়ক হয়েছে। দেশে উচ্চ পর্যায়ের অসমতা ইস্যুতে চিলিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন সরকার সর্বনিম্ন বেতন বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্ষোভের জবাব দেয়। এতে সম্পদশালীদের কর বৃদ্ধি করা হয়। একই সঙ্গে সরকার এ বছরে সেখানে একটি নতুন সংবিধানের ওপর গণভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু যথেষ্ট মূল্যের বিনিময়ে এসেছে এই সংস্কার। ওই বিক্ষোভে মারা গেছেন কমপক্ষে ২০ জন। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এতে আরো বলা হয়েছে, সূচকের শীর্ষ স্থান ও একেবারে নিচের সারিতে অবস্থান করা দেশগুলোর মধ্যে বড় ধরনের কোনো নড়চড় হয়নি। তবে তিনটি দেশ চিলি, ফ্রান্স ও পর্তুগাল ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ ক্যাটাগরি থেকে ‘পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। ইরাক ও ফিলিস্তিন ‘হাইব্রিড শাসন’ থেকে অবনমনের ফলে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠীর তালিকায় স্থান পেয়েছে।