প্রথম পাতা

প্রশান্তের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে ১৬৩৫ কোটি টাকা জমা

অনুসন্ধানে দুদক ৩ জনকে তলব

স্টাফ রিপোর্টার

২২ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেশে থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি মাসে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্তের বিরুদ্ধে মামলাও করে সংস্থাটি। মামলার অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের তিন পরিচালককে তলব করেছে। অন্যদিকে গতকাল প্রশান্ত কুমারসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রশান্ত কুমার হালদার নিজ নামে ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা করেছেন। যার মধ্যে তার নিজ নামে পরিচালিত হিসাবগুলোতে ২৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, তার মা লীলাবতীর নামে পরিচালিত হিসাবে ১৬০ কোটি টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জমা করা হয়েছে- যা পরে বিভিন্ন সময়ে উত্তোলন করে অন্যত্র স্থানান্তর, রূপান্তর, হস্তান্তরপূর্বক তিনি এসব অর্থের অবস্থান গোপন করেন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তার নামে-বেনামে ঢাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি ও গাড়িসহ আরও সম্পদ রয়েছে বলে মনে করে দুদক। সূত্র জানায়, প্রথমে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করতে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে নিযুক্ত করে। অনুসন্ধান শুরুর পরই প্রশান্ত কুমার যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।  

সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানকালে প্রশান্ত কুমার হালদারের আয়কর নথি ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার নিজ নামে ৩২ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা অর্জনের সপক্ষে আয়ের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রশান্ত কুমার হালদার ৮টি কোম্পানিতে তার নিজ নামে, নিকটাত্মীয় ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে এবং বেনামে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার সপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে তিনি ৯৯ কোটি ৬১ লাখ ২ হাজার ৯২৫ টাকার সম্পদ অর্জনের আয়ের সপক্ষে বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি

এদিকে প্রশান্ত কুমারের দুর্নীতির অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের তিন পরিচালককে তলব করেছে দুদক। গতকাল সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের তলব করে চিঠি দেন।  তলবকৃতরা হলেন, পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান নিজামুল আহসান, দুই পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও ইউসুফ ইসমাইল।  তাদেরকে আগামী ২৭ ও ২৮শে জানুয়ারি দুদকের  প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যানন্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম.এ হাশেম, এমডি এম. নুরুল আলম, পরিচালক পি.কে হালদারসহ ২০ জনের সকল ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এই আদেশ দেন। এছাড়া ওই ২০ জনের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি  জব্দেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান ও স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জব্দকৃতদের সকল ধরনের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য তার কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে। যাতে তিনি আদালতকে এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।

ঋণ অনুমোদনে অনিয়মসহ নানা কারণে আর্থিক সংকটে পড়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা এতই খারাপ যে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছেন না তারা। আট কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের অর্থ ফেরত চেয়ে না পেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন এমএম স্ট্র্যাকচারাল লিমিটেডসহ সাতটি কোম্পানি। ওই আবেদনের উপর শুনানি নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে। ওই রুলের শুনানিকালে গতকাল হাইকোর্ট অন্তবর্তিকালীন আদেশ দেয়। আদেশে পাসপোর্ট ও ব্যাংক হিসাব জব্দকৃত ২০ জনের গত ৫ বছরের সকল ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে এই পর্যায়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না। যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পেতে বাধাগ্রস্থ হবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখা হয়েছে।

যাদের একাউন্ট জব্দের নির্দেশ: এমএ হাশেম, এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, আবুল হাসেম, মো. রাশেদুল হক, পিকে হালদার, পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুষ্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পিকে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status