এক্সক্লুসিভ

স র জ মি ন ঢাকা উত্তর ৩ নং ওয়ার্ড

ভোটারদের মধ্যে নানা শঙ্কা ও কৌতূহল

রুদ্র মিজান

২২ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

মিরপুর ১০ ও ১১ নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের তিন নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের ৬৫ হাজার ৩শ’৪৬ ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করেন ক্যাম্প ও বস্তিতে। তারা দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ। সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে তাদের ব্যাপক আগ্রহ। সেইসঙ্গে আছে শঙ্কাও। আছে ইভিএম নিয়ে কৌতূহল। এটি এক ‘আজব যন্ত্র’ তাদের কাছে। কিভাবে ভোট দিতে হবে এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। তাছাড়াও কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি-না, ভোট দিতে পারবেন কি-না এরকম নানা প্রশ্ন। মিরপুর-১১ এর সি ব্লকের ১০ নম্বর রোডের সংলগ্ন শাহ আলী টি স্টল।

বিপুর মানুষের ভিড়। নানা কথার ভিড়ে আলোচনায় স্থান পাচ্ছিলো নির্বাচন। দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের চেয়ে আলোচনায় গুরুত্ব কেমন নির্বাচন হবে? ভোট দিতে যাবেন কি-না সংশয় প্রকাশ করে পাশের অটোমোবাইল মেকানিক ইমরান আহমেদ জানান, এই পর্যন্ত গত দুটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। এবারও সেরকম হয় কি-না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে তার। তবে ভোট দেয়ার ইচ্ছে আছে বলে জানান এই ভোটার। গত সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন ভোটারদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সাহস করে কেন্দ্রে গিয়ে শুনেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। একইভাবে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হামলা চালিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল নিয়েছিলো এক কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন। সরকারি দল সমর্থিত ওই প্রার্থী বিজয়ীও হন। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী জিন্নাত আলী মাদবর। তিনি আওয়ামী লীগের পল্লবী থানার সহ-সভাপতি। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকও। তিনি যুবলীগের উত্তরের সহ-সভাপতি। একইভাবে বিএনপি’র কাউন্সির প্রার্থীও দু’জন। বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী আবু তৈয়ব। বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জামাল হোসেন বাপ্পি। তিনি সাবেক কাউন্সিলর কাজী আলী ইমাম আসাদের মেয়ের জামাই। জামাল বাপ্পি মনে করেন, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোটেও জনবান্ধব না। বরং নিজের জনসম্পৃক্ততা বেশি। দল থেকে তিনি মনোনয়ন পেলে ভালো হতো। এই ওয়ার্ডে জনপ্রিয়তার কারণেই পাস করবেন বলে মনে করেন জামাল হোসেন। অন্যদিকে, ভোট কেন্দ্র জবর দখলসহ নানা অভিযোগ থাকলে নিজেকে জনপ্রিয় মনে করেন কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক। তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়ন ও জনিপ্রয়তার কারণেই জয়ী হবেন তিনি। তবে ভোটারদের কাছে হিসেব ভিন্ন। এই ওয়ার্ডের ভোটার ইকবাল হোসেন বলেন, সরকার দলীয় দুই প্রার্থীই প্রভাবশালী। তাদের নিয়েই ভয়।

তারা চাইলে নির্বাচনে জবর-দখল, বিশৃঙ্খলা হবে না। বিএনপি’র দুই প্রার্থীর বিশৃঙ্খলা করার মতো প্রভাব নেই বলে মনে করেন তিনি। এই ওয়ার্ডে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্ট হচ্ছে বিহারী ভোটার। ওয়ার্ডের ৬৫ হাজার ৩শ’৪৬ ভোটারের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার ভোটার বিহারী। এরমধ্যে ক্যাম্পে বসবাস করেন প্রায় ২০ হাজার। নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন সাত জন। এরমধ্যে কাঁটা চামচ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বিহারী নেতা সাদাকাত খান ফাক্কু। বিহারী ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে তার। ২০০৮ সালে তার দায়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সারাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষীদের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করেন। এছাড়াও বারবার উচ্ছেদ অভিযান থেকে ক্যাম্পবাসীকে রক্ষা করতে আইনি লড়াইয়ে তার সুনাম রয়েছে। এসব কারণেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ঘরানার প্রার্থীদের মাথা ব্যথার কারণ সাদাকাত খাঁন ফাক্কু। তার সমর্থকরা মনে করেন অর্থ ও সন্ত্রাস ছাড়া ফাক্কুকে ঠেকানোর দুষ্কর। মানুষ ভোট দিতে পারলে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে চমক আসবে। তবে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হিসেব বলছে ভিন্ন কথা। তখন ফাক্কু চার হাজারের বেশি ভোট পাননি। এজন্য অবশ্য সন্ত্রাসী কায়দায় কেন্দ্র দখলকে দায়ী করছেন ফাক্কু। কেন্দ্র দখল করার কারণে ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি বলে জানান তিনি।

বেনারশি পল্লী এলাকায় কথা হয় বেচু ও শাহানা নামের দুই ভোটারের সঙ্গে। তারা জানতে চান, মেশিনে (ইভিএম) কিভাবে ভোট দিতে হবে? ক্যামনে কি করবেন বুঝতে পারছেন না তারা। শুনেছেন আঙুলের চাপ দিতে হবে। ক’বার কোথায় চাপ দিতে হবে, তাদের ভোট অন্য কেউ দিয়েছে কি-না, বুঝবেন কিভাবে এরকম নানা প্রশ্ন তাদের। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আরও রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থী মো. ফিরোজ মিয়া, জাতীয় পার্টির সিরাজুল ইসলাম। শঙ্কা ও কৌতূহলের মধ্যে তিন নম্বর ওয়ার্ডে পুরোদমে বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। পথে পথে দড়িতে ঝুলছে পোস্টার। একটু পর পর প্রার্থীদের গণসংযোগ, মিছিলের দৃশ্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে আড্ডা, উড়ছে গরম চায়ের ধোঁয়া। কাপে চুমুক দিতে দিতে সরগম নির্বাচনী আলোচনা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status