প্রথম পাতা

এবার শেয়ারবাজারে উত্থানের রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই বদলে গেছে পুঁজিবাজারের চিত্র। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনে ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এটি সূচক চালু হওয়ার ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সূচক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। ডিএসইতে লেনদেনও বেড়েছে বড় ব্যবধানে। একদিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপর বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে। এদিকে দাম বাড়লেও অনেক বিনিয়োগকারীই শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি। ডিএসই ও সিএই সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ডিএসইএক্স সূচক ২০১৩ সালের ২৭শে জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে। তখন সূচকটির ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৬ পয়েন্ট। এরপরে গত ৭ বছরের মধ্যে গতকাল সূচকটির সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ১০ই মে সূচকটি ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। এর আগে ডিএসইর পুরনো সূচক ডিজিইন থাকার সময় ২০১২ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৯.১০ শতাংশ; সেদিন ৩২৯ পয়েন্ট বেড়ে ডিজিইএন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪৫।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত এক বছরে পুঁজিবাজারে বড় ধস ঠেকানোর জন্য নীতি-নির্ধারক মহল, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজার চাঙ্গা হয়নি। তবে গত ১৬ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসইসির বৈঠকে পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বেশকিছু ইতিবাচক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। আর দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বৈঠকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, সরকার শেয়ারবাজার ভালো করতে আন্তরিক। এছাড়া বাজারে তারল্য সংকট কাটাতে সরকারি ৪ ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারই প্রতিফল দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে। তবে এখন যেহেতু শেয়ারবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

এদিকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হয়েছেন ইয়াসির আজমান। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব থেকে বড় মূলধনের কোম্পানিটিতে বাংলাদেশি সিইও আসায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। এতে রোববার দাম বাড়ার শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছালেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি কোনো বিনিয়োগকারী।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরি সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯৯৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮৭ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে ৪১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৪৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি। বৃহস্পতিবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ডিএসইতে ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪৬টির, কমেছে ৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির।

এদিকে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা রোববারের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।

দর বাড়ার শীর্ষে বেক্সিমকো ফার্মা: গতকাল ডিএসইর দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৬ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ৬৬ টাকা দরে লেনদেন হয়। এদিন কোম্পানিটি ৩৪৫ বারে ৩ লাখ ৪০ হাজার ২২৪টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গেইনারের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইসিবি)। শেয়ারটির দর বেড়েছে ৬ টাকা ৪০ পয়সা বা ১০ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ৭০ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্ট্যাইল ক্রাফট লিমিটেড। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১৮ টাকা ২০ পয়সা বা ৯.৯৮ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০০ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, দেশ গার্মেন্টস, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, আজিজ পাইপস, বিডি ল্যাম্পস, জেমিনি সি ও বঙ্গজ লিমিটেড।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ৬৭৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩১টি শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫টির, ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আশা করা যায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ছাড়াও অন্য ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়। সরকার চায় শেয়ারবাজার ভালো হোক, এমন ধারণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফিরে আসবে।
বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছিলাম। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি এখন বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।

এদিকে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা এবং তারল্য সংকট কাটাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা চলতি সপ্তাহেই বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। গতকাল বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে এ আশ্বাস দেন গভর্নর ফজলে কবির। বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় তারল্য সংকট নিরসন ও প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যা নির্দেশনা আকারে জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাতে করে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় কাজ করে।

বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে এখন তারল্য সংকট চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষযে আশ্বস্ত করেছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তহবিল সহযোগিতা দেয়ার বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। এর আগে পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল চেয়ে প্রস্তাব দেয় বিএমবিএ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status