প্রথম পাতা

ঢাকার সবুজ সংকেত

ভিসা পাচ্ছেন কাশ্মীরের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

মিজানুর রহমান

১৭ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

কাশ্মীরের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জরুরিভিত্তিতে ভিসা ইস্যুর নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে ‘কাশ্মীরিরা বাংলাদেশের ভিসা পাচ্ছে না’ মর্মে প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোতে জরুরি ওই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, ঢাকার গ্রীণ সিগন্যাল গেছে। শুক্রবার থেকে ভিসা ইস্যু শুরু হবে। তবে কর্মকর্তারা গতকালও বলেছেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ভিসা দিচ্ছে না মর্মে যে সংবাদ চাউর হয়েছে তা সর্বাংশে সত্য নয়। ১২ই জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ সংক্রান্ত রিপোর্ট মিথ্যা বলে প্রত্যাখান করেছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ভর্তি প্রক্রিয়ার কিছু কাজ বাকী থাকার কারণে ভিসা ইস্যুতে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। কারও ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়নি, বরং ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় আবেদনগুলো ঝুলে ছিল। সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে ‘ভর্তি কার্যক্রম অসম্পূর্ণ রেখেই’ ভিসা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। প্রশ্ন ওঠেছে, কী কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ভিসা প্রদানের নির্দেশনা দিলো ঢাকা। জবাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের জমাকৃত কাগজপত্র যাচাই এবং  তারা যে সিস্টেমে ‘হাইয়ার সেকেন্ডারি’ পড়েছেন বাংলাদেশের এইচএসসিতে পড়ানো বিষয়গুলোর সঙ্গে তার কোন ভিন্নতা আছে কি-না? সেটির মূল্যায়ন এবং সদন, মার্ক যথাযথ হওয়ার পরই ভিসা ইস্যু হয়। কিন্তু সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতের এবার আগে ভিসা, পরে সনদের যথার্থতা যাচাই’র সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি কেবল ভারত নয়, নেপাল, ভূটান, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, পাকিস্তানসহ বাংলাদেশে মেডিকেল পড়তে আসা বিদেশি সব শিক্ষার্থীদের বেলায় প্রযোজ্য হবে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, অন্যরাও ভিসা জটিলতায় ছিলেন, কিন্তু খবর হয়েছে স্পর্শকাতর কাশ্মীরী শিক্ষার্থীদের নিয়ে! সেখানে দিল্লিকেও টেনে আনা হয়েছে, যা অনাকাঙ্খিত। কর্মকর্তাদের দাবি বাংলাদেশে পড়ুয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।  এতেও কিছুটা সময়ক্ষেপন হয়। কর্মকর্তারা আশা করছেন নির্দেশনার ফলে এখন আর মেডিকেল পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসাপ্রাপ্তিতে কোন ঝামেলা হবে না।   

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট এবং ঢাকার ভাষ্য: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নর্থইস্টনাউ-এ নিয়ে সর্ব প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে। অনলাইনে ‘কাশ্মীরী মেডিকেল স্টুডেন্টস রাশিং অল অভার ফর বাংলাদেশ ভিসা’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টটির বরাতে  অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমেও খবরটি প্রচার হয়। সেই রিপোর্টে বলা হয়- বাংলাদেশে প্রবেশের ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ কাশ্মীরী মেডিক্যাল শিক্ষার্থী এক মাস ধরে দিল্লি, কলকাতা, গোয়াহাটি ও আগরতলায় আটকে আছেন। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যা ছাড়াই ভিসা পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন রিপোটটির লেখক কলকাতার সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক। বাংলাদেশের মেডিকেলে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠায় এমন প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যবস্থাপকের নাম প্রকাশ না করে উদ্বৃত করে রিপোর্টে বলা হয়- তাদের অভিযোগ ভিসা পেতে দীর্ঘ বিলম্বের কারণে তারাও সমস্যায় পড়েছেন। ওই কোর্সের জন্য অর্থ পরিশোধকারী অভিভাবকরা এখন পরিশোধিত অর্থ ফেরত চাইছেন। এক ব্যবস্থাপক বাংলাদেশের ভিসা প্রদান বিলম্বের পেছনে দিল্লির হাত থাকতে পারে এমন অভিযোগও করেন। বলেন, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের ছাত্রদের ভিসা দেয়া হলেও কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া হচ্ছে না। তবে ওই রিপোর্টেই আরেকটি এডুকেশনাল কনসালটেন্সির ব্যবস্থাপক বলেন- তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ জনের মতো কাশ্মীরি শিক্ষার্থীও ভিসা পেয়েছে। তারা বাংলাদেশে পৌঁছেও গেছেন।

সেই রিপোর্টে ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে সার্জারিতে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি নেয়ার উল্লেখ ছিল। এদিকে ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত তাৎক্ষণিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল- বাংলাদেশে আগমনেচ্ছু বিদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত যত্নবান। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়সমূহে অধ্যয়নের জন্য এসে থাকেন তাদের ভর্তি, ভিসা সহজিকরণ এবং নিরাপত্তায় সরকার সর্বোতভাবে সহযোগিতা প্রদান করে । ২০১৯-২০ সালের ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- আবেদনপত্র বর্তমানে যাচাই বাছাই ও মার্কস সমতাকরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠান মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রাপ্তি বিষয়ে সম্পূর্ণ বানোয়েট অবিবেচনাপ্রসূত এবং দূরভিসন্ধিমূলক প্রচারণা বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে প্রচার করছে। সেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন যাচাই বাছাই সাপেক্ষে ৩১ জানুয়ারি নাগাদ বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবার কথা জানানো হয়েছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status