প্রথম পাতা

প্রার্থীর সঙ্গে একদিন

প্রচারণায় নানা চমক

মারুফ কিবরিয়া

১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

সকাল ১০টা। উত্তরার ৪ নং সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে অপেক্ষা। বাসা থেকে বের হবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। প্রচারণায় নামবেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানা গেল আতিকুল আগেই বের হয়েছেন। চোখে খানিকটা সমস্যা অনুভব করায় সকালেই চলে গেছেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। সেখান থেকে বনানীর কার্যালয়ে ব্যক্তিগত কাজ শেষ করেই যাওয়ার কথা আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে। নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১১টায় আতিকুলের আগারগাঁওয়ে উপস্থিত থাকার কথা। অবশ্য সেখানে আগে থেকেই ঢাকা উত্তরের ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ফোরকানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। একই সঙ্গে অপেক্ষা করছেন আতিকুলের। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ হলো দুপুরে। আগারগাঁও তালতলার শতদল কমপ্লেক্সের ফটকের বাইরে নৌকা নৌকা স্লোগান।

তাতেই বোঝা গেছে, মেয়রপ্রার্থী আতিকুল গণসংযোগস্থলে পৌঁছেছেন। তার পেছনে কর্মী সমর্থকের ভিড়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, আতিক ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কা ভোট দিন..এসব স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শতদল কমপ্লেক্সের মাঠ। মঞ্চ থেকেও আতিকুলের আগমনে স্বাগত জানানো হচ্ছে। ডিএনসিসির এই মেয়রপ্রার্থী যখন আসেন তার সঙ্গে দেখা যায় চারটি গাড়ি। এসব গাড়িতে চড়েই আতিকুল গত কয়েকদিন তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল আগারগাঁওয়ে একই চিত্র দেখা গেলো।

শতদল কমপ্লেক্সের মাঠে প্রায় দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। আতিকুলও মঞ্চে বসেন। এসময় তিনি ২৮নং ওয়ার্ডবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, দীর্ঘ নয় মাস আমি কঠিন অনুশীলন করেছি। শহরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। এর মাঝে বেশকিছু উন্নয়নও হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, আগারগাঁওয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চেয়েও বড় সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। ১০ কিলোমিটার সড়ক সাইকেল চলার উপযোগী করা হয়েছে। এই সড়কে সবাই বিনোদনের জন্য আসতে পারবেন। বসার ব্যবস্থা থাকবে, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। মোহাম্মদপুরে ৭টি পার্ককে আধুনিকায়ন করেছি। কিছু খালি জায়গা তবে ছোট। সেগুলো বড় মাঠ বা পার্ক করা যাবে না। তাই সেগুলোকে শুধু শিশুপার্ক করার জন্য কাজ শুরু করেছি। আমাদের সব উন্নয়ন ঠিকমতো হবে যদি যুব সমাজ মাদকমুক্ত থাকে। এজন্য তাদেরকে বিনোদন এবং খেলার মধ্যে রাখতে হবে।

আতিকুল আরো বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক। কিন্তু আমরা মনে করি, অসম্ভব বলে দুনিয়াতে কিছু নেই। সবাই যদি একসঙ্গে কাজ করতে পারি ইনশাল্লাহ আমরা পসিবল হবোই হবো, ইনশাল্লাহ। আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আগামী ৩০শে জানুয়ারির নির্বাচন। এজন্য আমি নেতাকর্মীদের সবাইকে অনুরোধ করবো, আপনারা প্রত্যেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে যান, সেখানে গিয়ে উন্নয়নের কথা বলুন। মেয়র নির্বাচিত হলে নিজের ছাড়াও কাউন্সিলরদের সম্পদের হিসাবের বিবরণ জনগণের সামনে প্রকাশ করার অঙ্গীকার করেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আতিক। এছাড়া প্রতি মাসে একটি করে ‘সিটি হল মিটিং’ করার কথাও বলেন নৌকার প্রার্থী। আতিক বলেন, আমরা যেন জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই এজন্য প্রতি মাসে চেষ্টা করবো একটা সিটি হল মিটিং করার জন্য। সেই মিটিং হবে জবাবদিহির মিটিং। এতে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো প্রতিফলিত হবে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবো।

আমরা চাই, ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা সমাধান করতে। বিএনপির প্রার্থীকে প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল বলেন, আমরা যেমন সকালে নাস্তা করি ব্যায়াম করি তেমনি তাদের এসব কথা বলতে হয়। তাদের অভিযোগ- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হচ্ছে না। আতিক বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মিথ্যা অভিযোগ করে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদের অনুরোধ জানাই।  তিনি আরো বলেন, গতকাল (সোমবার) খিলগাঁওয়ে তারা প্রচারণা করেছে। আমি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত তালি দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে বাধা দেয়া হচ্ছে না। এমনকি গতকাল ফার্মগেট এলাকায়ও প্রচারণা চালিয়েছে।  

আগারগাঁওয়ের শতদল কমপ্লেক্সে বক্তব্য রাখার পরপর আতিকুল বেরিয়ে পড়েন প্রচারণায়। পশ্চিম আগারগাঁও পুরো সড়কে যেতে যেতে কুশল বিনিময় করেন তিনি। দুপুর দেড়টার দিকে ২৮ নং ওয়ার্ডস্থ সবকটি অলিগলিতে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে যান আতিকুল। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ফোরকান হোসেন। আতিকের সঙ্গে থেকে তিনি নিজের ভোটের পাশাপাশি মেয়র পদে নৌকায় ভোট চান । আতিকের বিশাল কর্মী বাহিনী ও গাড়িবহর এগিয়ে যায় শ্যামলী দুই নম্বর সড়কের দিকে। ওই সড়কের কাজী অফিস বাজার এলাকা হয়ে শ্যামলী প্রধান সড়কে আসে ডিএনসিসির মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার মিছিল। প্রধান সড়কে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা যানজট সৃষ্টি হয়। তবে আতিকুলের নির্বাচন পরিচালনার কর্মীরা সবাইকে এক পাশে নিয়ে এসে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। প্রধান সড়কে বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি এই মেয়র প্রার্থী। বেলা সোয়া দুইটার দিকে আতিকুলের গাড়িবহর সড়কের পশ্চিম পাশে চলে যায়।

এ সময় তিনি গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। শ্যামলী ফুটওভার ব্রিজের নিচে এলে বেশ কয়েকজন সাধারণ ভোটারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বেলা আড়াইটার দিকে শ্যামলী কমপ্লেক্সের সামনে ক্ষণিক সময়ের জন্য অবস্থান নেন তিনি। সেখানে পাঁচ মিনিট পথসভার পর আবার গাড়িতে ওঠেন আতিকুল। তার গাড়ি বহরটি যেতে থাকে মোহাম্মদপুরের দিকে। এসময় বাবর রোডে নৌকায় ভোট চেয়ে  প্রচারণা চালান তিনি। বেলা ২টা ৫০ মিনিটে জেনেভা ক্যাম্পের দিকে (হুমায়ূন রোড) এগিয়ে যায় আতিকুলের মিছিল। এসময় তার সঙ্গে যোগ দেন ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ নুর ইসলামের (রাস্টন) প্রচারণা। ওই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা আটটি পিক-আপ নিয়ে হুমায়ূন রোড, ইকবাল রোডের একাধিক ব্লকে মিছিল করে। রাস্টনের পক্ষেও ভোট চান আতিকুল। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আতিকুল মোহাম্মদুর থেকে বেরিয়ে চলে যান লালমাটিয়ার দিকে। বিকাল চারটার দিকে সেখানে প্রচারণার শেষ করার আগে রাস্তায় শিশুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় অংশ নেন এই মেয়র প্রার্থী। ব্যাট হাতে কয়েকটি বল মোকাবিলাও করেন। তারপর দিনের প্রচারণার সমাপ্তি টানেন আতিকুল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status