প্রথম পাতা

পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি

নুরেআলম জিকু

১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

সকাল সাড়ে নয়টা। চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা এক-এক করে জড়ো হন উত্তর বাড্ডা ফুজি টাওয়ারের নিচে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’ স্লোগান দিয়ে উপস্থিত হন সেখানে। ততক্ষণে প্রগতি সরণির পূর্বপাশের সড়কে লেগে যায় যানজট। ঘড়ির কাঁটায় তখন দশটা। উপস্থিত হলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এজিএম শামসুল হক। এ সময় নেতাকর্মীরা অধীর অপেক্ষায়, অপেক্ষায় গণমাধ্যম কর্মীরাও। উত্তর বাড্ডার ফুজি টাওয়ার থেকে পূর্ব নিধারিত সকাল ১০টায় ৫ম দিনের মতো প্রচারণায় অংশ নেবেন তাবিথ আউয়াল। প্রার্থী আসার আগে মো. শাহজাহান ও জয়নাল আবেদিন ফারুক সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বক্তব্য রাখেন। ১০টা ৫০ মিনিট।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে পায়ে হেঁটে ফুজি টাওয়ারের নিচে এসে দাঁড়ান, মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ওই সময় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বক্তব্য রাখেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। আমাদের প্রচারে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। নানাভাবে বিএনপি মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীদের আতঙ্কের মধ্যে রাখা হচ্ছে। ইসি এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এসময় তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। শত বাধার পরও বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্ত আছে। দলীয় কর্মীদের বলেছি, আচরণবিধি মেনেই প্রচার চালাতে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে বলবো, তারাও যেন তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করেন। নগরীর ভোটাররা বেশ উৎসাহ উদ্দীপণার মধ্যে আছে। বিরোধী পক্ষ যতই উস্কানী দিক আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে আছি। থাকবো। ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ ভোট দিতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত। সকাল ১১টায় উত্তর বাড্ডা থেকে শুরু হয় প্রচারণার কাজ। সড়কের পাশের ছোট বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তিনি এবং তার সমর্থকরা ধানের শীষে ভোট চান। ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আহবান জানান তিনি।  ফুটপাতে দাঁড়ানো মানুষ ও বাস যাত্রীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। নিজ হাতে তার নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করেন। বয়স্ক ভোটাররা মেয়র প্রার্থীর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেন। তখন সেলফি তুলতে ব্যস্ত তরুণ ভোটারা। একদিকে চলে তাবিথের ভোট চাওয়া। অন্যদিকে  হাজার হাজার নেতা-কর্মী ‘ধানের শীষ’ স্লোগানে চারিদিক মাতিয়ে তোলেন। তারা মেয়রের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেন। বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে ধানের শীষে ভোট চাওয়া হয়।

তাবিথ আউয়াল ভোটাদের নানা সমস্যার কথা শুনেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করুন। কথা দিচ্ছি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেবো। ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করবো। মশা-মাছির বিস্তার ধ্বংস করে দেবো। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রাত্রিকালীন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করবো। যাতে বাসা বাড়ির মানুষ রাতে নিরাপদে থাকতে ও চলতে পারে। একটি আধুনিক সিটি করপোরেশন উপহার দেবো। পরে গণসংযোগটি মধ্য বাড্ডার হোসেন মার্কেট এসে মিছিল নিয়ে লিংক রোডের রাস্তা অতিক্রম করে ফের শুরু হয় প্রচারণার কাজ। এসময় প্রচারণায় অংশ নেন ছাত্রদলের কয়েক নেতাকর্মী। তাবিথ আউয়ালের প্রচারণার সামনে ও পিছন থেকে ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে তারা। বৈশাখী সরণী হয়ে জমিদার বাড়ী মোড়, মুক্তিযোদ্ধো চত্ত্বর, আলাতুন্নেছা স্কুল রোডের অলি-গলিতে চলে প্রচারণা। অনেকই ভবনের উপরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ইশারায় সমর্থন করেন প্রার্থীকে। নারী ভোটাররা এগিয়ে এসে মেয়র প্রার্থীর হাত থেকে লিফলেট গ্রহণ করেন। এরপর গণসংযোগটি দক্ষিণ বাড্ডা হয়ে মেরুল বাড্ডায় পৌঁছায়। ইউলুপের নিচে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাবিথ আউয়াল বলেন, রাজধানীর মানুষ আজ হাঁপিয়ে উঠছে। তারা পরিবর্তন চায়। নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, ভোটারা আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।

এসময় মেয়রের পাশাপাশি বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলরদেরকে ভোট দেয়ার আহবান জানান। সেখানে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মেয়র প্রার্থীকে স্বাগত জানান। দুপুর ২টায় পোস্ট অফিস রোড থেকে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রচারণা শুরু হয়ে পাঁচতলা, দক্ষিণ আনন্দনগর হয়ে আফতাব নগর মেইনরোডে এসে শেষ হয়। প্রতিটি জায়গায় দেখা গেছে, মানুষের বিপুল সমাগম।  মেরুল বাড্ডায় প্রচারের সময় ‘বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মিথ্যাচার করছে’, আওয়ামী লীগ মনোনীত উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের এমন বক্তব্যের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘তার বক্তব্যের জবাব দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, আমার ভাষাটাও জানা নেই। আমাদের সবারই অভিযোগ দেয়ার জায়গা নির্বাচন কমিশনে। আশা করি, অভিযোগগুলো নির্বাচন কমিশনই খতিয়ে দেখবেন কতটুকু সত্য, কতটা সত্যতা নেই। পাল্টাপাল্টি কথা না বলে আমাদের সবারই উচিৎ ভোটাদের সাথে কথা বলা, তাদের মাঝে যাওয়া। তারা যে রায় দেবে, সে রায়টা যেন আমরা সকলে মানি।’ ভোটাররা কী বলছেন জানতে চাইলে তাবিথ বলেন, ‘ভোটাদের প্রতিক্রিয়া অনেক। আমাদের সাথে ঐক্য ঘোষণা করেছে। প্রকাশ্যে আমাদের বলছে, এগিয়ে যেতে, তারা আমাদের সাথে থাকবেন এবং ভোট দিতে চান। ভোট দিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করবেন।’ মেরুল বাড্ডার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে। জলাবদ্ধতা, বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন সবচেয়ে বেশি সমস্যা এই এলাকার। রাতের বেলা লাইটিং ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, এলাকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভয়ভীতিতে বাস করে। দুর্নীতি দমনসহ ১২ সমস্যা দমনে প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ। তাবিথ আরো বলেন, দুর্নীতির বিস্তার এমন ঘটেছে যে, অর্থ ছাড়া মৃতের দাফনের জায়গাও মিলছে না।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি স্তর দুর্নীতিতে ভরে গেছে। মেয়র নির্বাচিত হলে সবার আগে সিটি করপোরেশনে দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ নেবো। এই দুর্নীতি বন্ধে যা যা প্রয়োজন তা করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। দুপুর ৩টার পরে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বারিধারা মা ও শিশু  হাসপাতাল, বারিধারা নতুন বাজার, ভাটারার মোড়, ছোলমাইদ, ছাপরা মসজিদ, কোকাকোলার মোড় ও বারিধারা জে-ব্লকে গণসংযোগ করেন তাবিথ। দোকানিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় তাদের সমস্যার কথা শুনেন তিনি। গণসংযোগে তার সঙ্গে ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সহ-সভাপতি জেবা খান, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সহসভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status