বাংলারজমিন
আমতলীতে গ্রাহকের ৪ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া কোম্পানি
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
পণ্য বিক্রি ও টাকা জামানত রাখার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে মোনাভী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া বে-সরকারি কোম্পানি। এতে দুইশ’ পাঁচজন কর্মী ও প্রায় একহাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানা গেছে, মোনাভী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া কোম্পানি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমতলীতে পণ্য বিক্রি ও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে। প্রথমে আমতলী পৌর শহরের সাকিব প্লাজার তিনতলায় অফিস নেয়। সেখানে গত একবছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। গ্রাহক সংগ্রহের জন্য আমতলী উপজেলায় দুইশ’ পাঁচজন প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুল। প্রত্যেক প্রতিনিধির কাছ থেকে জামানত বাবদ ৭০ হাজার টাকা নেয়। বিনিময় প্রতিনিধিদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রত্যেক প্রতিনিধি বিশ হাজার টাকা দামের একটি এলইডি টিভি বিক্রি করতে পারলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এক হাজার পাঁচশ’ একচল্লিশ টাকা ফেরত দেয়। টিভি না নিয়ে টাকা জমা দিলেও তাকে ওই পরিমাণ টাকা ফেরত দেয়া হয়। এভাবে যে যতগুলো টিভি বিক্রির নামে টাকা জমা দিতে পারবে তাকে প্রতি টিভি বাবদ এক হাজার পাঁচশ’ এক চল্লিশ টাকা দেয়া হবে বলে শর্তজুড়ে দেয় কোম্পানিটি। অধিক মুনাফার আশায় আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক হাজার গ্রাহক এভাবে টাকা জমা দিয়েছেন। পণ্য বিক্রি ছাড়াও অনেক গ্রাহক অধিক মুনাফার আশায় টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়াও একলাখ টাকায় মাসে সাত হাজার সাতশ’ আট টাকা লাভ দিবে বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। এভাবে প্রায় এক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে প্রতারক চক্রটি। গত তিনমাস আগে সাকিব প্লাজার অফিস ছেড়ে আমতলী হাসপাতাল এলাকায় অফিস ভাড়া নেয়। গত সোমবার দুইশ’ পাঁচজন প্রতিনিধির বেতন দেয়ার কথা ছিল। ওইদিন সকালে ওই প্রতিনিধিরা অফিসে বেতন নিতে আসেন। এ সময় অফিসের মার্কেটিং অফিসার আনিস মিয়া, হিসাব রক্ষক আল-আমিন, স্টোর ইনচার্জ জামাল মিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র শীল উপস্থিত ছিলেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলের দেখা মিলেনি। তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যানের ফোন বন্ধ পেয়ে অফিসের কর্মকর্তারা কৌশলে সটকে পড়েন। এতে প্রতিনিধিদের সন্দেহ হয়। পরে উপস্থিত গ্রাহক ও প্রতিনিধিরা অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে কোম্পানি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে কয়েক শ’ গ্রাহক অফিসের সামনে জড়ো হন। অনেক গ্রাহক টাকা হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর কোম্পানির চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলসহ অফিসের সকল কর্মকর্তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। মোনাভী অল বাংলাদেশ আমতলী শাখার স্টোর ইনচার্জ জামাল মিয়া বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান প্রতারক জামাল হোসেন মুকুল আমতলীর বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মোনাভী অল বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মো. জামাল হোসেন মুকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।