এক্সক্লুসিভ

সরাইলে ভিটেছাড়া এক পরিবার কবরও দখলে রেখেছেন সুরুজ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া/সরাইল প্রতিনিধি

১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন

মাত্র আধা শতক পরিমাণ একটি জায়গাতে মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল জাফর আলীর। তাও দখল করে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভিটে ছাড়া করার পর মারধর করে হাসপাতালে পাঠানো হয় পরিবারের সবাইকে। একের পর এক মামলা মোকদ্দমা দিয়ে  হয়রানি করা হচ্ছে তাদের। এ ঘটনায় গ্রামের ভুলনের পাড়ার মো. জাফর আলীর পরিবার গত প্রায় একমাস ধরে গ্রামছাড়া। বাড়ি ফিরলে প্রাণে মারা হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে ফোনে। পৈতৃক সম্পত্তি জবর দখলে নিজের ছেলেপেলেদের নিয়ে এই ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ জাফর আলীর আপন ভাই সুরুজ আলী আর আরেক ভাই প্রবাসী হামিদ মিয়ার স্ত্রী মিলি আক্তারের বিরুদ্ধে। পারিবারিক কবরস্থানে ভাইয়ের স্ত্রীকে কবর দিতে না দেয়ার অভিযোগও রয়েছে সুরুজ আলীর বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরা  জানান, ৪০ বছর ধরে আধা শতক পরিমাণ পৈতৃক জায়গায় ঘর করে বসবাস করে আসছিলেন তারা। বসবাসের ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে গত বছরের জুন মাসে সেটি মেরামতের কাজে হাত দেন। মেরামত কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে বাধা দেন মিলি আক্তার। এরপর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাদের পরিবারের লোকজন ঢাকায় গেলে গত ২১শে ডিসেম্বর ভাসুর সুরুজ আলী ও তার ছেলেদের সহায়তায় মিলি আক্তার তাদের নির্মিত ঘরটি ভেঙে ফেলেন। এরপর ওই জায়গা দখলে নিয়ে নিজে পাকা ঘর বানাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে বাড়িতে এলে মিলি ও সুরুজ আলীর ছেলেরা এক হয়ে হামলা চালায় বৃদ্ধ জাফর আলীসহ তার পরিবারের সদস্যদের ওপর। এতে আহত হন জাফর আলী, তার ছেলে মনির মিয়া, মোশাররফ হোসেন, মনিরের স্ত্রী সীমা আক্তার, হেলেনা আক্তার ও ফারুক মিয়া। আহতরা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। অভিযোগ হামলার পর থানায় গিয়ে উল্টো মামলাও দেয়া হয় তাদের বিরুদ্ধে। মিলি আক্তার বাদী হয়ে আহতদের আসামি করে সরাইল থানায় ২২শে ডিসেম্বর মামলা করেন। পরে ২৪শে ডিসেম্বর মো. সুরুজ আলীকে প্রধান আসামি করে জাফর আলীর ছেলে মোবারক হোসেন সরাইল থানায় তাদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা দেন। মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়। মোবারক হোসেন জানান, এর আগে তাদের বিরুদ্ধে একটি নারী নির্যাতনের মামলাসহ আরো ৪টি মামলা দেয় মিলি ও তার ছেলে। নারী নির্যাতন মামলার অভিযোগের তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কোনো সত্যতা পায়নি বলে প্রতিবেদন দেয়। আরেক ছেলে মনির হোসেন জানান, তাদের পুরো বাড়ি ৫৪ শতক। তার বাপ-চাচা ৮ জনের মালিকানা রয়েছে এই বাড়িতে। বাড়ি ভাগ-বণ্টন না হলেও তার চাচা সুরুজ আলী আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন বাড়িতে। এজন্যে তারা বণ্টননামা মামলাও করেছেন। ২০১৮ সালের ৮ই জুলাই মারা যান মনিরের মা আছিয়া খাতুন।

সুরুজ আলীর বাধার কারণে মাকে পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করতে পারেননি বলে জানান মনির। তখন সুরুজ আলী হুমকি দেন এখানে কবর দিলে আরো লাশ পড়বে বলে। সুরুজ আলীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন আরেক ভাই সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান। সুরুজ আলী ও তার ছেলেদের অত্যাচারে ১৯৯৫ সাল থেকে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন বলে জানান তিনি । পৈতৃক জমি বিক্রি করে তিনি হজে যেতে চাইলে সুরুজ আলী জমি বিক্রিতে বাধার সৃষ্টি করে। বলে তাকে ২০ হাজার টাকা না দিলে জমি বিক্রি করতে দেবে না। পরে আর জমি বিক্রি করতে পারেননি। এ ছাড়া তাদের ৭ ভাইয়ের মালিকানাধীন ৪৯ শতক জায়গাও সুরুজ আলী দখল করে রেখেছে বলে জানান তিনি । পৈতৃক ২৩ শতক আয়তনের আরেকটি জমিও তার দখলে। কবরস্থান, বাড়ির জায়গা, ডোবা সবই তার দখলে। ২০ বছর ধরে তাদের ওপর এই অত্যাচার চলছে বলে জানান মজিবুর। স্থানীয় ইউপি সদস্য মেহের আলী জায়গা দখলে মিলি আক্তারকে মদত দিয়েছেন  বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মেহের আলী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই জায়গায় আমি একদিনই গিয়েছিলাম। এরপর কি হয়েছে, দেয়াল দিছে কি দিছে না, ঘর ভেঙে কি করছে না করছে কোনো কিছুই জানি না। তাদের ওপর হামলার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম। ইউপি সদস্য আরো বলেন ঘর ভেঙে ও দেয়াল দিয়ে মিলি অন্যায় করেছে এটা ঠিক। জায়গা যদি তার হয় সমাজের লোক ছাড়া তার এই কাজ করা ঠিক হয়নি। তবে মিলি আক্তার দাবি করেন জায়গাটির মালিকানার দলিল রয়েছে তার কাছে। আর সুরুজ আলীকে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। এদিকে হামলার শিকার পরিবার মামলা দিলেও পুলিশ এই মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন টিটু বলেন, ঘটনা তদন্তকারী অফিসার তদন্ত করছেন। তাদের কোনো সমস্যা থাকলে তো তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status