ভারত

কলকাতা ডায়েরি

হাওড়া সেতুতে চালু হল লাইট এন্ড সাউন্ড শো

পরিতোষ পাল

১১ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:১৬ পূর্বাহ্ন

কলকাতা ও হাওড়া যমজ শহর বলেই পরিচিত। আর এই যমজ শহরের মধ্যে যোগসুত্র তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪৩ সালে তৈরি হয়েছিল হাওড়া ব্রীজ। বর্তমানে এটি সরকারিভাবে রবীন্দ্র সেতু হিসেবে পরিচিত হলেও সকলের মুখে মুখে এটি হাওড়া ব্রীজ হিসেবেই বেশি পরিচিত। দেশ বিদেশের মানুষ কলকাতায় এসেই শহরের এই আইকনটিকে দেখতে ছুটে যান হুগলি নদীর ধারে। বিশ্বের ব্যস্ততম এই ক্যান্টিলিভার ব্রীজটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ গাড়ি চলাচল করে। এছাড়াও প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পায়ে হেটে এই ব্রীজের উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। ৭৬ বছরের পুরনো এই ব্রীজটি রক্ষণাবেক্ষনের ভার ন্যস্ত দেড়শতবর্ষী কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের উপর। ক্যান্টিলিভার এই ব্রীজটির বৈশিষ্ট্য হল , এটিতে কোনও নাট-বল্টু ব্যবহৃত হয়নি। আর এই ব্রীজটি তৈরি করতে প্রায় ২৬ হাজার ৫০০ টন স্টীল ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ হাজার টনই উন্নতমানের স্টীল। এবং এই স্টীলের মাত্র ৩ হাজার টন এসেছিল বিলেত থেকে। বাকী স্টীলের পুরোটাই সরবরাহ করেছিল টাটা স্টীল। গত ৭৬ বছর ব্রীজটির শরীওে কোনও মলিণতার আস্তরণ পড়তে দেওয়া হয়নি। প্রতিবছর নিয়ম কওে রঙের আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। এমনকি পথচারীদেও গুটকা ও পানের পিক থেকে পিলারগুলিকে রক্ষা করতে বিশেষ ঘেরাটোপ তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে আরৈা দিয়ে আরৈাকিত করা হয়েছে ব্রিজটিকে। তবে এবার থেকে চালু করা হল লাইট এন্ড শো। শনিবারই প্রধানমন্ত্রী এটির উদ্বোধন করেছেন্। এখন থেকে সন্ধ্যার পর আলোর ঝর্ণাধারায় ভাসবে এই ঐতিহাসিক ব্রীজটি। লাইট এন্ড সাউন্ড শোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এর গর্বিত ইতিহাস। কোনও ব্রীজে ভারতে এই প্রথম কোনও লাইট এন্ড সাউন্ড শো চালু হল বলে জানা গেছে।

ছাত্রদের প্রতিবাদের নতুন ভাষা
প্রতিবাদ আন্দোলনের নানা ধরণের ভাষার সঙ্গে আমরা পরিচিতি হয়েছি। তবে সম্প্রতি বাম-কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে অংশ নেওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদের এক নতুন ভাষার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন। ধর্মঘটে অংশ নেওয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা গত ৮ জানযারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের গড়িয়াহাটমুখী রাস্তা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। আর নিয়ন্ত্রিত সেই পথে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা গেছে ক্যারাম খেলছেন। কেউ বা খেলছেন ব্যাডমিন্টন। আবার কোথাও চলছে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলা। মনসংযোগে দাবা খেলাতেও অনেককে নিবিষ্ট দেখা গেছে। আবার অনেকেই রাস্তায় বসে ‘আজাদি’র স্লোাগান দিয়েছেন, গেয়েছেন আদিবাসীদের লড়াইয়ের গান। ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলায় অংশ নিয়ে কি ছুটির মেজাজে দিনটি কাটালেন ? সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন রাখা মাত্রই ছাত্রÑছাত্রীরা সোচ্চারে জানিয়েছেন, মোটেই তা নয়। বরং এটাই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। তাদের বক্তব্য, রাস্তায় খেলাধুলো করে বোঝাতে চেয়েছি, এমন খোলামেলা পরিবেশেই আমরা আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে চাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নাগরিকত্ব আইন-সহ বেশ কিছু ভ্রান্ত নীতি মানতে পারছি না। আর এক ধর্মঘট সমর্থক ছাত্র জানিয়েছেন, রাস্তায় বসে দাবা খেলে আমরা এটাই বোঝালাম যে, হিংসার পথে নয়, বুদ্ধির মাধ্যমেই আমরা যুদ্ধে জিততে চাই। নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা একটা কথা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আন্দোলনে প্রতিবাদের ভাষা অনেক রকম হতে পারে। আসলে প্রতিবাদটাই হল বড় কথা। প্রতিবাদ মানেই স্লোগান বা পতাকা হাতে মিছিলই শেষ কথা নয়। প্রবীণ এক ট্রেডইউনিয়ন নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলন একটি সুনির্দ্দিষ্ট পথ ধরেই চলবে সেটা এই সময়ে মোটেই তা হচ্ছে না। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সোস্যাল মিডিয়াও আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে। আর ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মত করেই প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এটাই বুঝিয়ে দিযেছে যে, সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে বুদ্ধিদীপ্তভাবেও প্রতিবাদ জানানো যায়।
অ্যাসিড হামলায় দেশের শীর্ষে
সুরক্ষার নিরিখে কলকাতার সাফল্য নিয়ে পুলিশ গর্ব অনুভব করলেও অ্যাসিড হামলায় এখনও পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে। ২০১৮ সালের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ (এনসিআরবি)-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, অ্যাসিড হামলায় ভারতে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ওই বছরে রাজ্যে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে ৫০টি। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ জন। শুধু তা-ই নয়, অ্যাসিড হামলার চেষ্টা হয়েছে আরও ১২টি ক্ষেত্রে। অর্থাৎ অ্যাসিড হামলার ঘটনা কমছে না কিছুতেই। অ্যাসিড হামলার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুুিল সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও এই হামলার শিকার হয়ে নারী মুখ লুকোতে বাধ্য হচ্ছেন। অবশ্য অনেকে আবার মাথা তুলে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠার লড়াই করে চলেছেন। তবে নারীদেও উপর অ্যাসিড হামলা বন্ধ করতে প্রকাশ্যে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে বিভিন্ন স্তর থেকে। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসিড বিক্রির উপর নজরদারির নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও যে মানা হচ্ছে না তা পুলিশের ।কোংশ স্বীকার করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবেই নির্দেশ দিয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনও দোকানে অ্যাসিড রাখা বা বিক্রি করা যাবে না। আর লাইসেন্স থাকলেও কোন দোকান অ্যাসিড বিক্রি করছে, কাকে করছে, সব তথ্য রাখতে হবে স্থানীয় থানাকে। কিন্তু কোনও থানার কাছেই এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য থাকে না। বরং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করেই দেদার বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। এমনকি, তা পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনেও। অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম কর্তা দিব্যালোক রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে যে ক’টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, সবগুলিই মিউরিয়টিক এবং নাইট্রিক অ্যাসিড-হামলার ঘটনা। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, হামলাকারীরা সোনার দোকান থেকে ওই অ্যাসিড সংগ্রহ করেছে। ফলে সোনার দোকানগুলির উপরে পুলিশের নিয়মিত নজরদারি দরকার। পাশাপাশি যে সব কারখানায় অ্যাসিড তৈরি হচ্ছে, সেগুলির উপরেও দরকার কড়া নজরদারি। তবে শুধু নজরদারি বা সচেতনতা প্রচারে অ্যাসিড হামলা বন্ধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন আক্রান্তেরা। তাঁদের বড় অংশের দাবি, শাস্তি না হওয়ায় হামলাকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। তা দেখে অন্যেরা মনে করছে, সহজেই হামলা চালিয়ে পার পাওয়া যায়। এক আক্রান্ত তরুণী বলেছেন, যে হারে অ্যাসিড হামলার ঘটনা বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে আমরা শুধু চিৎকারই করে যাচ্ছি। হামলাকারীদের আটকানো যাচ্ছে না, প্রশাসনেরও এ ব্যাপারে কোনও সদিচ্ছা নেই। অথচ প্রতিবেশি বাংলাদেশে অ্যাসিড হামলার ক্ষেত্রে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন একটি স্বেচ্চাসেবী প্রতিষ্ঠানের এক কর্ত্রী।
ব্যাক্টেরিয়া ও উদ্ভিদের প্রয়োগে নোংরা পাণি শোধন
গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে দুপারের নিকাশি নালা ও খালের মুখে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করেও পাণি পরিশোধনের কাজে বড় রকমের সাফল্য আসেনি। আবার অনেক জায়গাতেই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির জন্য জমির সমস্যা রয়েছে। বর্ষার সময় ট্রিটপ্ল্যান্টের জন্য পাণি আটকে রাখার সমস্যাও রয়েছে। এই অবস্থায় বিকল্প হিসেবে আধুনিক পদ্ধতিতে ব্যাক্টিরিয়া (বায়ো রেমেডিয়েশন) অথবা উদ্ভিদের (প্ল্যান্ট রেমেডিয়েশন) মাধ্যমে নিকাশির নোংরা পাণি পরিশোধন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) শহর এবং শহরতলির আটটি খালকে চিহ্নিত করে এই প্রক্রিয়া চালু করবে বলে ঠিক করেছে। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নাজির খাল, মোক্তারপুর খাল, বাগ খাল, বাগের খাল, খড়দহ খাল, চড়িয়াল খাল এবং বালি ও বৈদ্যবাটি খালের পাণি পরিশোধনের জন্য নতুন পরিশোধন ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো হবে। জলজ উদ্ভিদ এবং ব্যাক্টিরিয়া বিষয়ের গবেষক প্রসেনজিৎ দাঁ বলেছেন, বিশেষ কিছু ব্যাক্টিরিয়া পাণির দূষণ কমাতে সাহায্য করে। কিছু উদ্ভিদও পাণির দূষণ কমায়। ব্যাক্টিরিয়া মূলত পাণির দূষণের উপাদান ভেঙে দেয়। উদ্ভিদ নোংরা পাণি শুষে নেয়। এছাড়াও কচুরিপানা, উইলো, পপলার, সূর্যমুখী এবং এক ধরনের বিশেষ প্রজাতির ঘাসও দ্রবীভূত দূষণের অংশ শুষে নেয়। নতুন পরিশোধন পদ্ধতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী হলেও বাস্তবে তা কতটা কার্যকরী হবে তা সময়ই বলবে।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status