ঢাকা সিটি নির্বাচন- ২০২০

স র জ মি ন- ঢাকা দক্ষিণ ১৮ নং ওয়ার্ড

এখনো ভোটের আমেজ নেই, হুমকির অভিযোগ

আলতাফ হোসাইন

৭ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

বিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের একটি উল্লেখযোগ্য এলাকা ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। আগে এটি ৫২ নম্বর ওয়ার্ড নামে পরিচিত ছিল। ঢাকার নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশেপাশের এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ডটি গঠিত। নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন মার্কেটের কারণে রাজধানীবাসীর কাছে এই ওয়ার্ডটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। শিক্ষার দিক থেকেও এই ওয়ার্ডের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজসসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ওয়ার্ডে অবস্থিত। এই ওয়ার্ডের পূর্ব দিকে রয়েছে হাতিরপুল, পশ্চিমে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরে সেন্ট্রাল রোড এবং দক্ষিণে নীলক্ষেত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মত ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ. স. ম. ফেরদৌস আলম ও বিএনপি সমর্থিত হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী। সকলের পরিচিত জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আর ফেরদৌস আলম নিউমার্কেট থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনিও এলাকার জনপ্রিয় নেতা হিসেবেই জানেন এলাকাবাসী। রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এলাকায় দু’জনরেই বেশ সুনাম রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে ফেরদৌস আলমের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে জানা যায়। ফলে বিএনপির প্রার্থীর জন্য তিনি বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া দু’দলেরই একজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ছাত্র লীগ নেতা সাদ্দাম এবং বিএনপির বিদ্রোহী হলেন, বিএনপি নেতা এজাজ। তবে বিএনপি নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া এই ওয়ার্ডে অন্য কোন দলের প্রার্থী নেই। নির্বাচনী মাঠে এখন পর্যন্ত পুরো আমেজ না আসলেও ভেতরে ভেতরে প্রার্থীদের নিজ নিজ অবস্থান পাকাপোক্ত করছেন। প্রকাশ্যে প্রচার শুরুর আগে তারা নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই বিএনপি সমর্থকদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের লোকজনকে বলছে, খামাখা তোমরা কিসের নির্বাচন করো? মাঠে আসার দরকার নাই। বের হলে টেঙরি ভেঙ্গে দেয়া হবে। হুঁশ করে মাঠে নাইমো। এ কারণে আমিসহ আমাদের নেতাকর্মীরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছি। যে কোন সময় আমাদের নামে গায়েবি মামলা দেয়া হতে পারে। ইতিমধ্যেই আমাদের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেজন্য আমাদের নেতা কর্মীরাও এক ধরনের ভয়ে আছে। হঠাৎ করে দেখা গেলো, ধরে নিয়ে একটা মামলা দিয়ে দিলো। এমন হয়রানি তারা করতে পারে সে শঙ্কা আমাদের মধ্যে আছে। এখনতো এসবই চলছে। পূর্বের নির্বাচনগুলোতে আপনারা দেখেছেন, প্রার্র্থীদেরকে হঠাৎ গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফেরদৌস আলম তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা একটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। নির্বাচনের প্রচারণা শুরুই হইনি তারা এ অভিযোগ কিভাবে করেন? নির্দিষ্ট দিনের আগে প্রচারণায় নামলেতো বিধি ভঙ্গ করা হলো। মাঠে নামার আগেই তারা প্রপাগান্ডা ছড়ানো শুরু করেছে। আসলে এটাই তাদের চরিত্র। আমরা আপাতত ইন্ডোর মিটিং করছি ঘরের মধ্যে ৪-৫ জন 
মিলে। ১০ তারিখের পরে আমরা মাঠে নামবো তার আগে নয়, যাতে নির্বাচন কমিশন আমাদের কোন ভুল ধরতে না পারে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডটির মোট আয়তন ২.৫০ বর্গকিলোমিটার প্রায়। এর অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলো হলো- মিরপুর রোড (নীলক্ষেত থেকে সাইন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত), শহীদ জাহানারা ইমাম সরণী (এলিফ্যান্ট রোড), ডঃ কুদরত-ই-খুদা সড়ক (নিউ এলিফ্যান্ট রোড), শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী সড়ক (সেন্ট্রাল রোড), নীলক্ষেত বাবুপুরা, নায়েম রোড, কলেজ স্ট্রীট।
সরজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আমেজ মাঠে গড়ায়নি। তবে চা স্টলে, দোকান কিংবা মোড়ে মোড়ে এলাকার মানুষের মুখে নির্বাচনের আলাপ চলছে। এ আলোচনার মূল বিষয় হলো- ভেটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না। তারা বলছেন, আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতার জেরে এবারও তারা সেই শঙ্কাই করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু পূর্বে নির্বাচন কমিশন ও সরকার খুব সমালোচিত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই এবার ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ পাল্টাতে পারে। তবে এখনই পরিস্কার করে বলা যাচ্ছে না। আরও কিছুদিন গেলে বুঝা যাবে। প্রার্থীরা মাঠে নামলে বুঝা যাবে।
এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, আমরাতো বরাবরই চাই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিক। আমরা চাই ভালো যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে যদি যেতেই না পারি তবে কিভাবে যোগ্য কাউন্সিলর পাবো। একতরফা নির্বাচন হলে এটা এলাকার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এলাকার উন্নয়ন, শান্তি, শৃঙ্খলা ধরে রাখতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। আমরা চাই একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হোক। সরকার ও নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। এটা তাদের জন্যই ভালো। সুতরাং তাদের উচিত একটি পক্ষপাতহীন অবাধ নির্বাচন উপহার দেয়া।
নিউ মার্কেট এলাকার এক বাসিন্দা জানান, এখনই বলা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। আগের নির্বাচনেতো ভোট দিতেই যেতে পারি নাই। চারিদিকে থমথমে পরিবেশ ছিলো। একটা ভয় ভয় পরিস্থিতি দেখা গেছে। সেজন্য ঘর থেকেই বের হইনি। ভালো নির্বাচন হতে হলে ভালো পরিবশে তৈরি করতে হবে। মানুষ যেন নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী বলেন, আমাদেরকে এখন পর্যন্ত আকার ইঙ্গিতে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। বড় কোন সমস্যা হলে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবো। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর থেকে আমার জনপ্রিয়তা বেশি। এলাকার মানুষ তা জানে। তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আমাদের একজন বিদ্রোহী ছিলো সে আগামী তিনদিনের মধ্যে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেবে বলে আমাকে জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি যতটুকু জনগণের কাছে গিয়েছি, ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে প্রশ্ন করেন যে, আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবো কি না? ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবো কি না? এখন পর্যন্ত আমরাও শঙ্কায় আছি। তবে নির্বাচনের যেহেতু আরও বেশকিছুদিন সময় বাকি আছে, কিছুদিন গেলে আমরা বুঝতে পারবো যে মূলত নির্বাচন কমিশন এবং সরকার কি চাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ গ্রামের মতো ১০-১২ জন লোক নিয়ে উঠান বৈঠকের মতো কাজ করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজন সমস্যা করতে পারে সেই শঙ্কায় আমরা তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারছি না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি অবশ্যই বিপুল ভোটে জয়ী হবো বলে বিশ্বাস করি। কারণ ইতিপূর্বের জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনগণ দৃশ্যমান কোন কাজ দেখে নাই। তারা আসলে পরিবর্তন চায়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আমার পক্ষেই রায় দিবে। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার প্রিয় ১৮ নং ওয়ার্ডের জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে প্রথমে আমি এলাকার মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ নির্মূল করবো। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকটা গুরুত্ব দিবো। এছাড়া পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনার চেষ্টা করবো। আমার ওয়ার্ডে কোন কমিউনিটি সেন্টার নাই। তাই একটি কমিউনিটি সেন্টার করার জন্য চেষ্টার কোন ক্রুটি করবো না। আর বিশেষ করে ঢাকার শহরতো যানজটের শহর। আমার এলাকা বিশেষ করে নিউ মার্কেট এলাকায় প্রচন্ড যানজট পড়ে। আসপাশে প্রচুর দোকান পাট বসে সে কারণে যানজট টা বেশি লাগে। আমি নির্বাচিত হলে কিভাবে এটা কমানো যায় তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।
বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে ফেরদৌস আলম বলেন, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেউ দলীয় নির্দেশনা না মেনে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশান নেয়া হবে। এমন একজনের নাম শোনা যাচ্ছে যিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র লীগের নেতা হবেন হয়তো। তার ব্যাপারে আমি বিস্তারিত জানি না। তবে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সিনিয়র সিটিজেন সবাই আমাকে পছন্দ করেন। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম। অবিভক্ত ধানমন্ডি থানার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে আমি নিউ মার্কেট থানার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। সুতরাং এলাকায় আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।
নির্বাচিত হলে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ওয়ার্ডের উন্নয়নের কাজগুলো করতে চান ফৈরদৌস আলম। তিনি বলেন, বিশেষ করে বজ্র ব্যবস্থাপনা, ডেনেজ ব্যবস্থার বেশকিছু সমস্যা আমি চিহ্নত করেছি। সেই সঙ্গে গ্যাসের সমস্যাও আছে। চীন থেকে কিছু আইডিয়া এনেছি সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমি ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status